(কীভাবে ইলম অনুসন্ধান করতে হবে?) আর ইলম অর্জিত হবে,

১. ইলম অনুসন্ধানের বৈঠক উপস্থিত হয়ে।

২. উপকারী বইসমূহ পাঠ করে যদি সে তা বুঝে।

৩. জুমু‘আর খুৎবা ও অন্যান্য বক্তব্য শ্রবণের মাধ্যমে।

৪. জ্ঞানীদেরকে প্রশ্ন করার মাধ্যমে। এ সবই হচ্ছে ইলম অনুসন্ধানের উপকারী পন্থাসমূহ।

৫. কুরআন কারীম হিফয করার মাধ্যমে। আর ইলম অর্জনের ব্যাপারে কুরআনই হলো আসল বা মূল। অতএব, কুরআনই সকল ইলমের প্রধান। আর এটি হলো মহাভিত্তি। আর এটি আল্লাহর মজবুত রশি এবং এটি মহাগ্রন্থ, এটি মর্যাদাবান কিতাব, এটি কল্যাণের দিকে পথপ্রদর্শনকারী, অকল্যাণের পথের বড় প্রতিবন্ধক।

তাই আমি প্রত্যেক মুমিন নর ও নারীকে গভীরভাবে চিন্তার ও বুঝের সাথে কুরআনের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া, তা বেশি বেশি তেলাওয়াত করা, তা সম্পূর্ণ বা যা সম্ভব হিফয করার প্রতি অসিয়ত করছি। কারণ, এতে হিদায়াত ও নূর আছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿ إِنَّ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانَ يَهۡدِي لِلَّتِي هِيَ أَقۡوَمُ ﴾ [الاسراء: ٩]

“নিশ্চয় এ কুরআন দিক-নির্দেশনা দেয় এমন পথের যা সর্বাধিক সরল।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৯]

মহান আল্লাহ আরো বলেছেন,

﴿ وَهَٰذَا كِتَٰبٌ أَنزَلۡنَٰهُ مُبَارَكٞ فَٱتَّبِعُوهُ وَٱتَّقُواْ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ١٥٥ ﴾ [الانعام: ١٥٥]

“আর এটি বরকতময় কিতাব, এটি আমরা অবতীর্ণ করেছি। অতএব তোমরা এর অনুসরণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৫৫]

বরকতময় আল্লাহ আরো বলেছেন:

﴿ أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ ٱلۡقُرۡءَانَ أَمۡ عَلَىٰ قُلُوبٍ أَقۡفَالُهَآ ٢٤ ﴾ [محمد: ٢٤]

“তারা কি কুরআনের ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা করে না? নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ।” [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ২৪]

তাই আমাদের ওপর কুরআন তিলাওয়াত, হিফয, গভীরভাবে চিন্তা, বুঝা, আমল করা ও কুরআনের যা বুঝে আসবে না তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার দিক থেকে গুরুত্ব দেওয়া অপরিহার্য।

অনুরূপ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের গুরুত্ব দেওয়া। কারণ, এটি দ্বিতীয় অহী (কুরআন প্রথম অহী), (বিধান গ্রহণের) দ্বিতীয় উৎস এবং আল্লাহর কিতাবের (কুরআনের) ব্যাখ্যা ও তার প্রতি দিক নির্দেশনকারী।

তাই প্রত্যেক ছাত্র এবং প্রত্যেক মুসলিমের ওপর নিজেদের সামর্থ্য অনুপাতে এবং জ্ঞান অনুযায়ী হিফয ও বারবার পাঠ করা দ্বারা এর প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা অপরিহার্য। যেমন,

  • ইমাম নাওয়াওয়ীর চল্লিশ হাদীস এবং এর সাথে ইবন রজবের যোগ করা আরো দশ হাদীসসহ মোট পঞ্চাশ হাদীস মুখস্থ করা। এ হাদীসগুলো খুব ব্যাপক ও অধিক উপকারী এবং এ হাদীসগুলো জাওয়ামি‘উল কালিম (অল্প শব্দ কিন্তু বেশি অর্থ প্রকাশকারী) এর অন্তর্ভুক্ত। তাই পুরুষ ও মহিলাদের জন্যে এ হাদীসগুলো হিফয করা একান্ত দরকার।
  • অনুরূপ হাফেয আব্দুল গনী আল মাক্বদেসীর ‘উমদাতুল হাদীস (‘উমদাতুল আহকাম)। এটি একটি মূল্যবান বই। জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার বর্ণিত চারশোর কিছু বেশি বিশুদ্ধ হাদীস এর মাঝে একত্রিত আছে। আর যদি সম্ভব হয় তবে এটাকে হিফয ও মুখস্থ করবে। আর এটা মুখস্থ করা আল্লাহর বড় একটি নি‘আমত।
  • অনুরূপ হাফিয ইবন হাজার-এর বুলুগুল মারাম। এটি একটি সংক্ষিপ্ত উপকারী ও মূল্যবান লিখিত বই। ছাত্রদের জন্যে সম্ভব হলে এটাকে তারা মুখস্থ করবে। আর এটাকে মুখস্থ করা ছাত্রদের জন্যে বড় কল্যাণকর।
  • আর যে কিতাবগুলো ‘আকীদার সাথে সম্পর্কে রাখে তার মধ্যে শাইখ ইমাম মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহ্হাব রহ.-এর গুরুত্বপূর্ণ দু’টি গ্রন্থ:

১. কিতাবুত তাওহীদ।

২. কাশফুশ শুবুহাত।

  • শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ-এর লিখিত আল-আকীদাতুল ওয়াসিতিয়াহ ‘আকীদার কিতাবের অন্যতম। এটি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ-এর সংক্ষিপ্ত ‘আকীদার ওপর লিখিত মূল্যবান ও বড় উপকারী সংক্ষিপ্ত কিতাব।
  • শাইখ ইমাম মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহ্হাব রহ. লিখিত কিতাবুল ঈমান ‘আকীদার কিতাবের অন্তর্ভুক্ত। এটি একটি মূল্যবান কিতাব। ঈমান সম্পর্কিত অনেক হাদীস তিনি এর মাঝে একত্রিত করেছেন।

তাই ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্যে এ উপকারী কিতাবসমূহ ও এ কিতাবের মতো উপকারী কিতাবসমূহের মধ্যে যা সম্ভব তা হিফয করা উচিত, পূর্বের বর্ণনা অনুপাতে কুরআন কারীম বেশি বেশি তিলাওয়াত, তা বা তার যা সম্ভব তা হিফয করার মাধ্যমে তার প্রতি গুরুত্ব প্রদানসহ। আর সহপাঠিদের সাথে আলাপ-আলোচনা করাসহ এবং যে সকল শিক্ষক ও আলেমগণের মাঝে কল্যাণ ও ইলম রয়েছে বলে বিশ্বাস আছে তাদেরকে জটিল বিষয়সমূহ জিজ্ঞাসা করাসহ। আর ছাত্রের উচিত সে তার প্রভূর কাছে তাওফীক ও সাহায্য প্রার্থনা করবে, দুর্বলতা ও অলসতা প্রকাশ করবে না, নিজের সময় সংরক্ষণ করবে এবং সময়কে ভাগ ভাগ করে নিবে। তার দিন ও রাতের এক অংশ কুরআন কারীম তিলাওয়াত ও তাতে গভীরভাবে চিন্তা করার জন্যে বরাদ্দ করবে। আর এক অংশ দীনের জ্ঞান, বুঝ, কিতাবের মতন বা মূলভাষ্য হিফয, মুখস্থ এবং পুনরাবৃত্তি করার জন্যে বরাদ্দ করবে। আর এক অংশ নিজের পরিবারের প্রয়োজন মিটানোর জন্যে বরাদ্দ করবে। আর এক অংশ নিজের সালাত, ইবাদত এবং বিভিন্ন যিকর ও দো‘আর জন্যে বরাদ্দ করবে। ‘‘নূরুন ‘আলাদ দারব” প্রোগ্রামটি শ্রবণ করা ছাত্র ও ছাত্রীদেরকে আরো অনেক বড় উপকার দিবে। এ প্রোগ্রামটি ছাত্র, সাধারণ লোক ও অন্যান্যদের জন্যে খুব বেশী উপকারী প্রোগ্রাম। কারণ এতে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর প্রদান করেন, ইলম, আমল ও কল্যাণে প্রসিদ্ধ সাউদী শাইখগণ। তাই এ প্রোগ্রামটির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া ও এর মাঝে নিহিত উপকার শ্রবণ করা (সকলের জন্যে) একান্ত প্রয়োজন। আর এটি প্রতি রাতে (নিদাউল ইসলাম) শিরোনামে মাগরিব ও এশার মাঝে সাউদী আরবের রাত ৯.৩০ (নয়টা ত্রিশ মিনিটে) কুরআন কারীম চ্যানেলে প্রচার করা হয়।

আমি আল্লাহর কাছে তাঁর সুন্দর নাম ও উচ্চ গুণাবলীর দ্বারা প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদেরকে ও সকল মুসলিমদেরকে উপকারী জ্ঞান অর্জন ও সৎ কর্ম সম্পাদন করার, আমাদেরকে তাঁর দীনের বুঝ ও তার ওপর ছাবিত রাখেন আর আমাদের সকলকেই এ সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করার ওয়াজিব কাজটি শক্তি ও সামর্থ্য অনুপাতে প্রতিষ্ঠা করার, মুসলিমদের কর্মের ধারক বাহকদেরকে (প্রশাসকদেরকে) এ ওয়াজিবটি প্রতিষ্ঠা ও তার প্রতি ধৈর্য ধারণ করার এবং যাদেরকে এ কাজটি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদেরকে যেন এটিকে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন সে তাওফীক দান করেন। আর তিনি তাঁর হক আদায়ের ওপর এবং তাঁর ও তাঁর বান্দাদের জন্যে নসিহত করার ওপর সাহায্য করেন। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা মহাদানশীল।

আল্লাহ তাঁর বান্দা আমাদের নবী মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবার, সাথীদের এবং ইহসানের সাথে যারা তাদের অনুসরণ করবে তাদের সকলের ওপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন।