দ্বিতীয় মূলনীতি: কুরআন-সুন্নাহর শব্দসমূহকে বিকৃত না করে তার প্রকাশ্য অর্থে ব্যবহার করা ওয়াজিব, বিশেষ করে আল্লাহ তা‘আলার সিফাত কেন্দ্রিক শব্দমালা; কেননা এ ক্ষেত্রে মানববুদ্ধির কোনো স্থান নেই।

এর দলিল ওহী ও যুক্তি।

ওহী থেকে দলিল:

আল্লাহ তা‘আলার নিম্নোক্ত বাণীসমূহ ওহী-কেন্দ্রিক দলিল:

﴿ نَزَلَ بِهِ ٱلرُّوحُ ٱلۡأَمِينُ ١٩٣ عَلَىٰ قَلۡبِكَ لِتَكُونَ مِنَ ٱلۡمُنذِرِينَ ١٩٤ بِلِسَانٍ عَرَبِيّٖ مُّبِينٖ ١٩٥ ﴾ [الشعراء: ١٩٣، ١٩٥]

বিশ্বস্ত আত্মা[1] এটা নিয়ে অবতরণ করেছে। তোমার হৃদয়ে, যাতে তুমি সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত হও। (সূরা আশশু‘আরা: ২৬: ১৯৩-১৯৪)

অন্য আয়াতে আছে:

﴿ إِنَّآ أَنزَلۡنَٰهُ قُرۡءَٰنًا عَرَبِيّٗا لَّعَلَّكُمۡ تَعۡقِلُونَ ٢ ﴾ [يوسف: ٢]

নিশ্চয় আমি একে আরবী কুরআনরূপে নাযিল করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পার। (সূরা ইউসূফ: ১২: ২)

আর একটি আয়াতে আল্লাহ বলেন:

﴿ إِنَّا جَعَلۡنَٰهُ قُرۡءَٰنًا عَرَبِيّٗا لَّعَلَّكُمۡ تَعۡقِلُونَ ٣ ﴾ [الزخرف: ٣]

নিশ্চয় আমি তো একে আরবী কুরআন বানিয়েছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার। (সূরা আয্যুখরুফ: ৪৩: ৩)

এ আয়াতগুলোর বক্তব্য অনুযায়ী আরবী ভাষার শব্দমালা যে প্রকাশ্য অর্থসমূহ দাবি করে সে অনুযায়ী আল কুরআনকে বুঝতে হবে। যদি না কোনো শরঈ দলিল ভিন্ন অর্থ নেওয়াকে নির্দেশ করে।

ইহুদী সম্প্রদায় বিকৃতি সাধনের আশ্রয় নিয়েছিল, যে কারণে তারা আল্লাহ তা‘আলার ভৎর্সনার পাত্র হয়েছিল এবং তারা যে এ বিকৃতিকরণের দ্বারা ঈমান থেকে বহু দূরে চলে গিয়েছিল তাও আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্টভাবে বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে:

﴿ ۞أَفَتَطۡمَعُونَ أَن يُؤۡمِنُواْ لَكُمۡ وَقَدۡ كَانَ فَرِيقٞ مِّنۡهُمۡ يَسۡمَعُونَ كَلَٰمَ ٱللَّهِ ثُمَّ يُحَرِّفُونَهُۥ مِنۢ بَعۡدِ مَا عَقَلُوهُ وَهُمۡ يَعۡلَمُونَ ٧٥ ﴾ [البقرة: ٧٥]

তোমরা যারা বিশ্বাসী কি এই আশা করছ যে, তারা তোমাদের প্রতি ঈমান আনবে? অথচ তাদের একটি দল ছিল যারা আল্লাহর বাণী শুনত অতঃপর তা বুঝে নেয়ার পর তা তারা বিকৃত করত জেনে বুঝে। (সূরা আল বাকারা: ২: ৭৫)

অন্য এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে:

﴿ مِّنَ ٱلَّذِينَ هَادُواْ يُحَرِّفُونَ ٱلۡكَلِمَ عَن مَّوَاضِعِهِۦ وَيَقُولُونَ سَمِعۡنَا وَعَصَيۡنَا﴾ [النساء: ٤٦]

ইয়াহূদীদের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা কালামসমূহকে তার স্থান থেকে পরিবর্তন করে ফেলে এবং বলে, ‘আমরা শুনলাম ও অমান্য করলাম’। (সূরা আন-নিসা: ৪: ৪৬)যুক্তি: আল কুরআনের বাণীসমূহ যার পক্ষ থেকে এসেছে, অন্যদের তুলনায় তিনিই এর অর্থ অধিক বোঝেন। আর তিনি স্পষ্ট আরবী ভাষায় এ বাণীগুলো পাঠিয়েছেন। অতএব তা প্রকাশ্য অর্থে গ্রহণ করা ওয়াজিব বলে বিবেচিত হবে। অন্যথায় ভিন্ন ভিন্ন অভিমতের অনুপ্রবেশ ঘটবে, ফলে উম্মত বিভক্ত হয়ে পড়বে।

>
[1] এখানে ‘বিশ্বস্ত আত্মা’ দ্বারা জিবরীল (আঃ) কে বুঝানো হয়েছে।