দশম: আল্লাহর দীন থেকে বিমুখ হয়ে থাকা। দীন সম্পর্কে জানতেও চেষ্টা না করা এবং তদনুযায়ী আমল না করা। এর প্রমাণ আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী:

﴿وَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّن ذُكِّرَ بِ‍َٔايَٰتِ رَبِّهِۦ ثُمَّ أَعۡرَضَ عَنۡهَآۚ إِنَّا مِنَ ٱلۡمُجۡرِمِينَ مُنتَقِمُونَ ٢٢﴾ [السجدة: ٢٢]

“ঐ ব্যক্তির চেয়ে আর বড় যালিম কে হতে পারে, যাকে তার রবের আয়াতসমূহ দিয়ে উপদেশ প্রদান করা হয় অথচ সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়? অবশ্যই আমরা অপরাধীদের নিকট থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী’’। [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ২২]

ইসলাম বিনষ্টকারী এসব কাজ ঠাট্রা-বিদ্রূপের সাথে করা হোক অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে করা হোক কিংবা ভয় করে করা হোক (ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবার ব্যাপারে) এর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তবে জোর করে কাউকে যদি এমনটি করতে বাধ্য করা হয় এবং নিরুপায় হয়ে সে যদি এমন ধরনের কিছু করে তা হলে সে কাফির বলে বিবেচিত হবে না। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿مَن كَفَرَ بِٱللَّهِ مِنۢ بَعۡدِ إِيمَٰنِهِۦٓ إِلَّا مَنۡ أُكۡرِهَ وَقَلۡبُهُۥ مُطۡمَئِنُّۢ بِٱلۡإِيمَٰنِ﴾ [النحل: ١٠٦]

“যারা আল্লাহর সাথে কুফুরী করে ঈমান আনার পর অতঃপর কুফুরীর জন্য তাদের মন উন্মুক্ত করে দেয় তাদের ওপর আপতিত হবে আল্লাহর ক্রোধ এবং তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি। তবে যার ওপর জবরদস্তি করা হয় এবং তার অন্তর বিশ্বাসে অটল থাকে সে ব্যতীত’’। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ১০৬]

ইসলাম বিনষ্টকারী এসব কাজ অত্যন্ত ভয়াবহ এবং সচরাচর এসমস্ত কাজ ঘটেও থাকে। সকল মুসলিমের উচিৎ এসমস্ত কাজ থেকে বিরত থাকা এবং কোনো ব্যক্তির নিজের পক্ষ থেকে এধরনের কাজ হয়ে যায় কিনা তা থেকে ও সতর্ক থাকা উচিৎ।

যে সব কাজ আল্লাহর ক্রোধ এবং তার যন্ত্রণাদায়ক শাস্তিকে অপরিহার্য করে দেয় সেগুলো থেকে আমরা তাঁর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।

আর আল্লাহ তা‘আলা সালাত ও সালাম পেশ করুন সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার পরিজন ও তাঁর সাহাবীগণের ওপর।

এ বিষয়ে শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহহাব রহ.-এর আলোচনা এখানেই শেষ হলো।

(শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায এর কিছু অংশের ব্যাখ্যা করে বলেন:)

নিম্নোক্ত বিষয়গুলোও উল্লিখিত ইসলাম বিনষ্টকারী বিষয়সমূহের মধ্যে চতুর্থ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত:

কোনো ব্যক্তি যদি বিশ্বাস করে যে, মানব রচিত আইন-কানুন ইসলামী বিধানের চেয়ে উত্তম অথবা তা ইসলামী শরী‘আতের সমপর্যায়ের, এমনকি ইসলামী বিধান উত্তম এ বিশ্বাস পোষণ করা সত্বেও যদি ঐ ব্যক্তি মনে করে যে, ইসলাম পরিপন্থি বিধানের নিকট বিচার-ফয়সালার জন্য যাওয়াও বৈধ অথবা কেউ যদি মনে করে যে, বিংশ শতাব্দীর এ যুগে ইসলামী বিধান বাস্তবায়ন করা অসঙ্গত, ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করলে মুসলিমরা এ কারণে পিছিয়ে পড়বে কিংবা এ কারণে ব্যক্তির সম্পর্ক তখন শুধুমাত্র আল্লাহর সাথে সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে, জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে তার সম্পর্ক থাকবে না। (এ ধরনের আকীদা পোষণ করার কারণে ঐ ব্যক্তি ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাবে।)

অনুরূপ কোনো ব্যক্তি যদি মনে করে যে, চোরের হাত কাটা এবং বিবাহিত জেনাকারীকে পাথর মেরে হত্যা করার বিষয়ে আল্লাহর যে হুকুম রয়েছে তা বর্তমান যুগের জন্য প্রযোজ্য নয় অথবা কেউ যদি মনে করে যে, আল্লাহর আইনের চেয়ে অন্যান্য আইন উত্তম না হলেও লেন-দেন ও অপরাধের শাস্তি এ ধরনের বিষয়ে আল্লাহর বিধান ব্যতীত মানব রচিত বিধান দিয়ে ফয়সালা করাও বৈধ। এ ধরনের আকীদা পোষণ করার কারণেও ঐ ব্যক্তি ইসলামের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে যাবে। কারণ, সর্বসম্মতিক্রমে এর অর্থ হবে, আল্লাহ যা হারাম বা অবৈধ করেছেন তা বৈধ করা হলো।

অপরিহার্যভাবেই দীনের দৃষ্টিকোন থেকে যে সমস্ত বস্তু হারাম যেমন, যিনা-ব্যভিচার, মদপান, সুদ, আল্লাহর বিধান ব্যতীত অন্যের বিধান দিয়ে ফয়সালা করা ইত্যদি যা আল্লাহ হারাম করেছেন তা যদি কোনো ব্যক্তি মুবাহ বা বৈধ মনে করে তা হলে এ কারণে ঐ ব্যক্তি মুসলিমগণের সর্বসম্মতিক্রমে কাফির বলে বিবেচিত হবে।

পরিশেষে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি তিনি আমাদের সকলকে ঐ সমস্ত কাজ করার যোগ্যতা দান করুন যে সমস্ত কাজে তাঁর সন্তুষ্টি রয়েছে। আর তিনি আমাদেরকে ও সকল মুসলিমকে সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করুন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও নিকটবর্তী।

আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাত ও সালাম আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার পরিজন ও তাঁর সাহাবীগণের ওপর।


শাইখ আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায রহ.