রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত দীন একটি পূর্ণাঙ্গ দীন:

 সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর। আমরা তাঁরই প্রশংসা করি, তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি, তাঁরই নিকট ক্ষমা চাই। আর আমরা আমাদের আত্মার অনিষ্টতা এবং আমাদের আমলসমূহের মন্দ পরিণতি থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে হিদায়াত দেন, তাকে গোমরাহ করার কেউ নেই এবং যাকে গোমরাহ করেন তাকে হিদায়াত দেওয়ারও কেউ নেই। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনো ইলাহ নেই, তার কোন শরীক নেই। আর আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল, যাকে আল্লাহ তা‘আলা হিদায়াত ও সত্য দীন দিয়ে প্রেরণ করেন। ফলে তিনি রিসালাতের দায়িত্ব যথাযথ পালন করেন এবং আমানতকে পৌঁছে দেন। উম্মতের কল্যাণ সাধন করেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আল্লাহর পথে যথাযথ জিহাদ করেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত দীন একটি পূর্ণাঙ্গ দীন:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতকে দীনের বিষয়ে দিনের আলোর মত সু-স্পষ্ট দলীলের ওপর রেখে যান। একমাত্র হতভাগা ছাড়া কেউ তা থেকে বিচ্যুত বা পথভ্রষ্ট হতে পারে না। উম্মতের প্রয়োজনীয় সবকিছুই তিনি স্পষ্ট করেন। এমনকি আবু যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,

«ما ترك النبي صلى الله عليه وسلّم طائراً يقلب جناحيه في السماء إلا ذكر لنا منه علماً».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাতাসে দুই ডানা মেলে উড়ন্ত পাখীর বিষয়েও আমাদের শিক্ষা দিতে ছাড়েন নি”।[1]

একজন মুশরিক সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেন,

«علمكم نبيكم حتى الخراة ـ آداب قضاء الحاجة ـ قال: «نعم، لقد نهانا أن نستقبل القبلة بغائط أو بول أو أن نستنجي بأقل من ثلاثة أحجار، أو أن نستنجي باليمين أو أن نستنجي برجيع أو عظم».

“তোমাদের নবী তোমাদেরকে সবকিছু শিখিয়েছেন, এমনকি পায়খানা পেশাবের নিয়ম-পদ্ধতি। তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের পায়খানা ও পেসাবের সময় কিবলামূখ হওয়া, তিনটির কম পাথর দ্বারা পবিত্রতা হাসিল করা, ডান হাত দ্বারা পবিত্রতা হাসিল করা অথবা গোবর ও হাড় দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করতে নিষেধ করেছেন”।[2]

আর তুমি কুরআন অধ্যয়ন করলে দেখতে পাবে, আল্লাহ তা‘আলা তাতে দীনের মৌলিক বিষয়সমূহ এবং শাখা-প্রশাখা সবই বর্ণনা করেছেন। তাওহীদের প্রকারসমূহ স্ব-বিস্তারে কুরআনে বর্ণনা করেছেন। এমনকি কারো ঘরে প্রবেশ করতে হলে কীভাবে অনুমতি গ্রহণ করতে হবে এবং একটি মজলিশে বসলে কি কি শিষ্টাচার অবলম্বন করতে হবে, তাও কুরআনে বর্ণনা করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا قِيلَ لَكُمۡ تَفَسَّحُواْ فِي ٱلۡمَجَٰلِسِ فَٱفۡسَحُواْ يَفۡسَحِ ٱللَّهُ لَكُمۡۖ وَإِذَا قِيلَ ٱنشُزُواْ فَٱنشُزُواْ يَرۡفَعِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وَٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ دَرَجَٰتٖۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ١١﴾ [المجادلة: ١١]

“হে মুমিনগণ, তোমাদেরকে যখন বলা হয়, ‘মজলিসে স্থান করে দাও’, তখন তোমরা স্থান করে দেবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য স্থান করে দেবেন। আর যখন তোমাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা উঠে যাও’, তখন তোমরা উঠে যাবে। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় সমুন্নত করবেন। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত”। [সূরা আল-মুজাদালাহ, আয়াত: ১১]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَدۡخُلُواْ بُيُوتًا غَيۡرَ بُيُوتِكُمۡ حَتَّىٰ تَسۡتَأۡنِسُواْ وَتُسَلِّمُواْ عَلَىٰٓ أَهۡلِهَاۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَذَكَّرُونَ ٢٧ فَإِن لَّمۡ تَجِدُواْ فِيهَآ أَحَدٗا فَلَا تَدۡخُلُوهَا حَتَّىٰ يُؤۡذَنَ لَكُمۡۖ وَإِن قِيلَ لَكُمُ ٱرۡجِعُواْ فَٱرۡجِعُواْۖ هُوَ أَزۡكَىٰ لَكُمۡۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ عَلِيمٞ ٢٨﴾ [النور : ٢٧، ٢٨]

“হে মুমিনগণ, তোমরা নিজদের গৃহ ছাড়া অন্য কারও গৃহে প্রশে করো না, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নেবে এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম দেবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। অতঃপর যদি তোমরা সেখানে কাউকে না পাও তাহলে তোমাদেরকে অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত তোমরা সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ‘ফিরে যাও’ তাহলে ফিরে যাবে। এটাই তোমাদের জন্য অধিক পবিত্র। তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবগত”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ২৭,২৮] লিবাস-পোশাকের শিষ্টাচার বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

﴿وَٱلۡقَوَٰعِدُ مِنَ ٱلنِّسَآءِ ٱلَّٰتِي لَا يَرۡجُونَ نِكَاحٗا فَلَيۡسَ عَلَيۡهِنَّ جُنَاحٌ أَن يَضَعۡنَ ثِيَابَهُنَّ غَيۡرَ مُتَبَرِّجَٰتِۢ بِزِينَةٖۖ وَأَن يَسۡتَعۡفِفۡنَ خَيۡرٞ لَّهُنَّۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٞ ٦٠﴾ [النور : ٦٠]

“আর বৃদ্ধা নারীরা, যারা বিয়ের প্রত্যাশা করে না, তাদের জন্য কোন দোষ নেই, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তাদের কিছু পোশাক খুলে রাখে এবং এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬০]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّۚ ذَٰلِكَ أَدۡنَىٰٓ أَن يُعۡرَفۡنَ فَلَا يُؤۡذَيۡنَۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٥٩﴾ [الاحزاب : ٥٩]

“হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের জিলবাবে[3]র কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেওয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৯]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿وَلَا يَضۡرِبۡنَ بِأَرۡجُلِهِنَّ لِيُعۡلَمَ مَا يُخۡفِينَ مِن زِينَتِهِنَّۚ ٣١﴾ [النور : ٣١]

“আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَلَيۡسَ ٱلۡبِرُّ بِأَن تَأۡتُواْ ٱلۡبُيُوتَ مِن ظُهُورِهَا وَلَٰكِنَّ ٱلۡبِرَّ مَنِ ٱتَّقَىٰۗ وَأۡتُواْ ٱلۡبُيُوتَ مِنۡ أَبۡوَٰبِهَاۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ١٨٩﴾ [البقرة: ١٨٩]

“আর ভালো কাজ এটা নয় যে, তোমরা পেছন দিক দিয়ে গৃহে প্রবেশ করবে। কিন্তু ভালো কাজ হলো, যে তাকওয়া অবলম্বন করে। আর তোমরা গৃহসমূহে তার দরজা দিয়ে প্রবেশ কর এবং আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফল হও”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৯]

এ ছাড়াও অসংখ্য আয়াত রয়েছে, যদ্বারা এ কথা স্পষ্ট হয় যে, এ দীন পরিপূর্ণ, নিখুঁত ও পূর্ণাঙ্গ। এ দীনে কোনো কিছু বাড়ানো বা কমানোর কোনো প্রয়োজন নেই। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,

﴿وَنَزَّلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ تِبۡيَٰنٗا لِّكُلِّ شَيۡءٖ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٗ وَبُشۡرَىٰ لِلۡمُسۡلِمِينَ ٨٩﴾ [النحل: ٨٩]

“আর আমি তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছি প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনা, হিদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ”। [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ৮৯]

[1] আহমদ, হাদীস নং ২১৬৮৯, ২১৭৭০, ২১৭৭১

[2] সহীহ মুসলিম, তাহারাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ- আল-ইস্তিতাবাহ, হাদীস নং ২৬৯

[3] জিলবাব হচ্ছে এমন পোশাক যা পুরো শরীরকে আচ্ছাদিত করে।