প্রিয় পাঠক! উল্লিখিত প্রমাণ-পঞ্জি সালাতের গুরুত্ব, ফযীলত এবং ইহকাল ও পরকালে তার উপকারিতা ও ফলাফলের স্পষ্ট দলীল।

এই ফলাফল ও ফযীলত সালাতের পুরোপুরি সংরক্ষণকারী এবং গুরুত্বদানকারীর জন্যই অর্জন হতে পারে, কেননা সালাতের স্থান অতি উচ্চে। ইমাম আহমদ রহ. তার “কিতাবুস সালাতে” বলেন, “তুমি জেনে রাখ! ইসলামে তোমার অংশ আর তোমার নিকট ইসলামের গুরুত্ব ততটুকু যতটুকু সালাতে তোমার অংশ এবং তোমার নিকট সালাতের গুরুত্ব এবং তুমি এমন অবস্থা থেকে বাঁচ যে, তুমি আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করছ, আর তোমার নিকট ইসলামের কোনো গুরুত্ব নেই, কেননা তোমার অন্তরে ইসলামের ততটুকুই গুরুত্ব হবে যতটুকু তোমার অন্তরে সালাতের গুরুত্ব থাকবে।”

অতএব, প্রিয় দীনি ভাই! যদি আপনি সালাতের ব্যাপারে অথবা সালাত জামা‘আতের সাথে আদায়ে বা ফজরের সালাতে অলসতা করে থাকেন তবে হঠাৎ চলে আসা সমস্ত স্বাদ সাঙ্গকারী সকল জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্নকারী মৃত্যু গ্রাস করার পূর্বেই আপনি একান্ত তাওবা করার জন্য দ্রুত অগ্রসর হোন। নতুবা আপনার জন্য অবশিষ্ট থাকবে শুধু আফসোস আর লজ্জা। নিম্নোক্ত আয়াতসমূহের প্রতি লক্ষ্য করুন:

﴿قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٥٣ وَأَنِيبُوٓاْ إِلَىٰ رَبِّكُمۡ وَأَسۡلِمُواْ لَهُۥ مِن قَبۡلِ أَن يَأۡتِيَكُمُ ٱلۡعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ ٥٤ وَٱتَّبِعُوٓاْ أَحۡسَنَ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكُم مِّن رَّبِّكُم مِّن قَبۡلِ أَن يَأۡتِيَكُمُ ٱلۡعَذَابُ بَغۡتَةٗ وَأَنتُمۡ لَا تَشۡعُرُونَ ٥٥ أَن تَقُولَ نَفۡسٞ يَٰحَسۡرَتَىٰ عَلَىٰ مَا فَرَّطتُ فِي جَنۢبِ ٱللَّهِ وَإِن كُنتُ لَمِنَ ٱلسَّٰخِرِينَ ٥٦ أَوۡ تَقُولَ لَوۡ أَنَّ ٱللَّهَ هَدَىٰنِي لَكُنتُ مِنَ ٱلۡمُتَّقِينَ ٥٧ أَوۡ تَقُولَ حِينَ تَرَى ٱلۡعَذَابَ لَوۡ أَنَّ لِي كَرَّةٗ فَأَكُونَ مِنَ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٥٨ ﴾ [الزمر: ٥٣، ٥٨]

“বল, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ- আল্লাহর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দিবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তোমরা তোমাদের রবের অভিমুখী হও এবং তাঁর নিকট আত্মসমর্পন কর তোমাদের নিকট শাস্তি আসবার পূর্বে; অতঃপর তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না। অনুসরণ কর তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের নিকট থেকে উত্তম যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার, তোমাদের ওপর অতর্কিতভাবে তোমাদের অজ্ঞাতসারে শাস্তি আসার পূর্বে। যাতে কাউকে বলতে না হয়, হায়! আল্লাহর প্রতি আমার কর্তব্যে আমি যে শৈথিল্য করেছি তার জন্য আফসোস! আমি তো ঠাট্টাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। অথবা কেউ যেন না বলে, আল্লাহ আমাকে পথ প্রদর্শন করলে আমি তো অবশ্যই মুত্তাকীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম অথবা শাস্তি প্রত্যক্ষ করলে যেন কাউকে বলতে না হয়, আহা, যদি একবার পৃথিবীতে আমার প্রত্যাবর্তন ঘটত তবে আমি সৎকর্মপরায়ণ হতাম। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫৩-৫৮]

উল্লিখিত আয়াতসমূহে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সমস্ত গুনাহ-খাতা থেকে তাওবা করার নির্দেশ দিচ্ছেন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করার ওয়াদা করছেন। কিন্তু তাওবা করার পরে কি করা উচিৎ? আমাদের একান্ত কর্তব্য হলো, আমরা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করব, তাঁর বিধি-বিধিানের প্রতি আত্মসমর্পণ করব এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুসরণের মাধ্যমে আনুগত্য প্রকাশ করব। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তাওবার ক্ষেত্রে গড়িমসি করা থেকে সাবধান করেন। কেননা মৃত্যু এমন সময় এসে পড়বে যে মানুষ তা বুঝতেও পারবে না, পরে তার জন্য আফসোস ও লজ্জা ব্যতীত আর কিছু থাকবে না।

﴿أَن تَقُولَ نَفۡسٞ يَٰحَسۡرَتَىٰ عَلَىٰ مَا فَرَّطتُ فِي جَنۢبِ ٱللَّهِ﴾ [الزمر: ٥٦]

“যাতে কাউকে বলতে না হয়, হায়! আল্লাহর প্রতি আমার কর্তব্যে আমি যে শৈথিল্য করেছি তার জন্য আফসোস!” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫৬]

সালাতে শিথিলতাকারী বলবে: হায় আফসোস! আমি সালাতে বা সালাতের জামা‘আতে, ফজরের সালাতে বা তা ব্যতীত আল্লাহ এবং রাসূলের অনুসরণে শৈথিল্য করেছি। আর ঐ ব্যক্তি স্বীয় গুনাহ-খাতার জন্য আফসোস করবে।

অতএব, আমাদের সবার কর্তব্য, আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাওবা করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ﴾ [النور: ٣١]

“হে মুমিনগণ তোমরা সকলে আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]

وصلى الله على نبينا محمد وعلى آله وصحبه وسلم