যাকাতের তৃতীয় হকদার:

যাকাতের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ: যাকাতের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ দ্বারা উদ্দেশ্য যাকাত উসুলকারীগণ। অর্থাৎ বিত্তশালীদের নিকট থেকে যাকাত উসুল করার জন্য খলিফা বা তার প্রতিনিধি যাদেরকে নিয়োগ দেন তারাই যাকাত উসুলকারী। অনুরূপ যাকাত সংরক্ষণকারী, অর্থাৎ যারা গুদামে সংরক্ষিত যাকাত রক্ষণা-বেক্ষণ করেন। অনুরূপ যারা গরীবদের মাঝে যাকাত বণ্টন করার দায়িত্বে নিয়োজিত তাদেরকে যাকাত থেকে দেওয়া বৈধ, যদিও তারা ধনী হয়। এটি তাদের বৈধ হক, যা শরী‘আত তাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছে, তারা যদি এই হক ত্যাগ করে সমস্যা নেই।

কয়েকটি জ্ঞাতব্য:

১. যাকাত উসুল করার কাজে যারা নিয়োগ পাবে, তারা মানুষের নিকট থেকে যাই গ্রহণ করবে বায়তুলমাল এনে জমা দিবে, যাকাত দাতাদের পক্ষ থেকে তাদের নিজের জন্য হাদিয়া বা উপহার গ্রহণ করা বৈধ নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আযদ’ গোত্রের সদকা উসুল করার জন্য জনৈক ব্যক্তিকে পাঠিয়ে ছিলেন, সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে কতক মাল নিজের কাছে রেখে দিল এবং বলল: এগুলো আপনাদের জন্য আর এগুলো আমার জন্য হাদিয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রেগে গিয়ে বললেন:

«ألاَ جلستَ في بيتِ أبيكَ وبيتِ أمك حتى تأتيك هديتك إن كنتَ صادقا؟». ثم قال: «ما لي أستعملُ الرجلَ منكم فيقول: هذا لكم، وهذا لي هدية؟ ألاَ جلسَ في بيت أمه ليُهدَى له، والذي نفسي بيده، لا يأخذ أحدٌ منكم شيئاً بغير حق إلا أتى اللهَ يَحْمِلُه» -(يعني أنه سيَلقى اللهَ تعالى يوم القيامة وهو يحمل هذا الشيء الذي أخذه).

“তোমার বাবা-মায়ের ঘরে কেন তুমি বসে থাকনি, তোমার হাদিয়া তোমার নিকট চলে আসত, যদি তুমি সত্যবাদী হও? অতঃপর তিনি বললেন: এমন কেন হয়, আমি তোমাদের কাউকে কোনও কাজে পাঠাই আর সে এসে বলে: এগুলো আপনাদের জন্য আর এগুলো আমার জন্য হাদিয়া? কেন সে তার মায়ের ঘরে বসে থাকে নি, যেন তার হাদিয়া তার কাছেই চলে আসে! সে সত্ত্বার কসম, যার হাতে আমার নফস, তোমাদের যে কেউ অবৈধভাবে যাই গ্রহণ করবে, আল্লাহর সমীপে তা নিয়ে উপস্থিত হবে”।[1] অর্থাৎ কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে অবৈধভাবে গ্রহণ করা সম্পদ নিয়ে হাজির হবে। অপর হাদীসে তিনি বলেন:

«مَن استعملناه على عملٍ، فرزقناه رزقا - يعني مَنحناهُ راتباً - فما أخَذَهُ بعد ذلك فهو غُلول».

“আমরা যাকে কোন কাজের দায়িত্ব দেই এবং তার প্রাপ্যও তাকে প্রদান করি, (অর্থাৎ তাকে তার বেতন দেই), তারপর সে যা গ্রহণ করবে তাই খিয়ানত”।[2] অর্থাৎ সেটি হারাম সম্পদ।

আমাদের বর্তমান যুগে ক্রেতার পক্ষ থেকে স্বেচ্ছায় দোকানের লেবারকে যে বখশিশ দেওয়া হয়, এই বকশিশের কারণে যদি বিক্রেতা তথা দোকান মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা তার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় তবে সেটি গ্রহণ করা বৈধ নয়, অন্যথায় লেবারের জন্য সেটা গ্রহণ করা বৈধ।

২. যাকাত উসুলকারীদের গুণাবলি:

ক. বিশুদ্ধ মত মোতাবেক যাকাত উসুলকারীর মুসলিম হওয়া জরুরি, কারণ মুসলিমদের থেকে যাকাত উসুল করার অর্থ তাদের ওপর একপ্রকার কর্তৃত্ব করা, যেমন এতে প্রভাব খাটানো, কর্তৃত্ব করা ও বল প্রয়োগ করার ইখতিয়ার থাকে। অতএব, কোনও অমুসলিমকে তাদের ওপর কর্তৃত্ব করার সুযোগ দেওয়া যায় না।

খ. সাবালক ও বিবেকী হওয়া।

গ. আমানতদার হওয়া।

ঘ. যাকাত উসুল করার যোগ্যতা সম্পন্ন হওয়া। যেমন, সত্যবাদী ও নেককার।
ঙ. যাকাতের বিধান সম্পর্কে ইলম থাকা।

>
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭১৯৭।

[2] সহিহুল জামে‘ হাদীস নং ৬০২৩।