কুরআন ও হাদীছের মানদন্ডে সুফীবাদ সূফীবাদ আব্দুল্লাহ্ শাহেদ আল-মাদানী ১ টি
ফেরাউন ও ইবলীসের ক্ষেত্রে সুফীদের বিশ্বাসঃ

সুফীদের কতিপয় লোক ইবলীস ও ফেরাউনকে পরিপূর্ণ ঈমানদার ও আল্লাহর শ্রেষ্ট বান্দা মনে করে। সুফী দর্শনের মতে ইবলীস সর্বোত্তম সৃষ্টির অন্তর্ভূক্ত এবং সে পরিপূর্ণ ঈমানদার।

আর মিশরের ফেরাউন সম্পর্কে সুফীদের কতিপয়ের কথা হচ্ছে, ঈমানের পরিপূর্ণ হাকীকত অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিল বলেই সে একজন সৎ লোক ছিল। ফিরআউনের কথাঃ أنا ربكم الأعلى আমি তোমাদের মহান প্রভু’’ এর তাৎপর্য বর্ণনা করতে গিয়ে সুফীরা বলেঃ ফিরআউন নিজের ভিতরে উলুহীয়াতের অস্থিত্ব খুঁজে পেয়েছিল বলেই এ রকম কথা বলেছে। কেননা তাদের মতে পৃথিবীর প্রতিটি বস্ত্তই আল্লাহ। সুতরাং প্রতিটি সৃষ্টিই এবাদত পাওয়ার অধিকার রাখে। সুতরাং যে ব্যক্তি ইবলীসের এবাদত করল, সে আল্লাহরই এবাদত করল এবং যে ফিরআউনের এবাদত করল সে আল্লাহরই এবাদত করল। (নাউযুবিল্লাহ)

মানসুর হাল্লাজ এবং ইবনে আরাবী মনে করে, শয়তানকে আল্লাহর রহমত থেকে বিতারিত করা হয় নি এবং সে জাহান্নামীও নয়। সে তাওবা করে পরিশুদ্ধ হয়ে জান্নাতী হয়ে গেছে। হাল্লাজ সুস্পষ্টভাবেই উল্লেখ করেছে যে, শয়তান ও ফিরআউন হচ্ছে তার আদর্শ ও ইমাম। এই জাতীয় কথা যে, বাতিল ও মিথ্যা তা ইসলাম সম্পর্কে সামান্য ধারণার অধিকারীও অতি সহজেই বুঝতে পারেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

النَّارُ يُعْرَضُونَ عَلَيْهَا غُدُوّاً وَعَشِيّاً وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ أَدْخِلُوا آلَ فِرْعَوْنَ أَشَدَّ الْعَذَابِ

সকালে ও সন্ধ্যায় তাদেরকে আগুনের সামনে পেশ করা হয় এবং যেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন আদেশ করা হবে, ফেরাঊন গোত্রকে কঠিনতর আযাবে দাখিল কর। (সূরা মুমিনঃ ৪৬)

ইবলীস আল্লাহর আদেশ অমান্য করে তাঁর রহমত থেকে বিতারিত হয়ে কাফেরে পরিণত হয়েছে। কিয়ামতের দিন সে তার অনুসারীসহ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। এটি কুরআন ও সহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآَدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ أَبَى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ

এবং যখন আমি আদমকে সেজদাহ করার জন্য ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইবলিস ব্যতীত সবাই সিজদাহ করলো। সে (নির্দেশ) পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করলো। ফলে সে কাফিরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল। (সূরা বাকারাঃ ৩৪) আল্লাহ্ তাআলা ইবলীসের জাহান্নামী হওয়া সম্পর্কে বলেনঃ

قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِنْهُ خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِينٍ (12) قَالَ فَاهْبِطْ مِنْهَا فَمَا يَكُونُ لَكَ أَنْ تَتَكَبَّرَ فِيهَا فَاخْرُجْ إِنَّكَ مِنَ الصَّاغِرِينَ (13) قَالَ أَنْظِرْنِي إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ (14) قَالَ إِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِينَ (15) قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيمَ (16) ثُمَّ لَآَتِيَنَّهُمْ مِنْ بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَنْ شَمَائِلِهِمْ وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِينَ (17) قَالَ اخْرُجْ مِنْهَا مَذْءُومًا مَدْحُورًا لَمَنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنْكُمْ أَجْمَعِينَ

‘‘আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সেজদাহ করতে বারণ করল ? সে বললঃ আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা। বললেন তুই এখান থেকে যা। এখানে অহংকার করার কোন অধিকার তোর নাই। অতএব, তুই বের হয়ে যা। তুই হীনতমদের অন্তর্ভূক্ত। সে বললঃ আমাকে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন। আল্লাহ্ বললেনঃ তোকে সময় দেয়া হল। সে বললঃ আপনি আমাকে যেমন উদ্ভ্রান্ত করেছেন, আমিও অবশ্য তাদের জন্যে আপনার সরল পথে বসে থাকবো। এরপর তাদের কাছে আসব তাদের সামনের দিক থেকে, পেছন দিক থেকে, ডান দিক থেকে এবং বামদিক থেকে। আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না। আল্লাহ্ বললেনঃ বের হয়ে যা এখান থেকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়ে।

তাদের যে কেউ তোর পথে চলবে, নিশ্চয় আমি তোদের সবার দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করে দিব। (সূরা আরাফঃ ১২-১৮)