দ্বীনী প্রশ্নোত্তর বিদআত আবদুল হামীদ ফাইযী ১ টি
‘বিদআতে হাসনাহ’ নামক কোন বিদআত আছে কি, যা করলে সওয়াব হয়? যেহেতু হাদিসে আছে, “যে ব্যক্তি ইসলামে ভাল রীতি চালু করবে, সে তাঁর নিজের এবং সমস্ত লোকের সওয়াব পাবে, যারা তাঁর (মৃত্যুর) পর তাঁর উপর আমল করবে। তাঁদের সওয়াবের কিছু পরিমাণও কম করা হবে না। ৮৪ (মুসলিম)

‘বিদআতে হাসানাহ’ (ভাল বিদআত) বলে কোন বিদআত নেই। বরং প্রত্যেক বিদআতই ‘সাইয়্যিআহ’ (মন্দ)। মহানবী (সঃ) বলেছেন, “প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা।” ৮৫ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী)

আর হাদীসে যে ভাল রীতি চালু করার কথা বলা হয়েছে, তা নতুন কোন রীতি নয়। বরং যে রীতি শরীয়ত সম্মত কিন্তু কোন জায়গায় তা চালু ছিল না। কোন ব্যক্তি তা চালু করলে তাঁর ঐ সওয়াব হয়। পূর্ণ হাদিসটি পড়লে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন, কোন শ্রেণীর রীতির কথা বলা হয়েছে।

জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রঃ) বলেন, “একদা আমরা দিনের প্রথম ভাগে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর নিকটে ছিলাম। অতঃপর তাঁর নিকট কিছু লোক এল, যাঁদের দেহ বিবস্ত্র ছিল, পশমের ডোরা কাটা চাদর (মাথা প্রবেশের মত জায়গা মাঝে কেটে) পরে ছিল অথবা ‘আবা’ (আংরাখা) পরে ছিল, তরবারি তাঁরা নিজেদের গর্দানে ঝুলিয়ে রেখেছিল। তাঁদের অধিকাংশ মুযার গোত্রের (লোক) ছিল; বরং তাঁরা সকলেই মুযার গোত্রের ছিল। তাঁদের দারিদ্রতা দেখে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল। সুতরাং তিনি (বাড়ীর ভেতরে) প্রবেশ করলেন এবং পুনরায় বের হলেন। তারপর তিনি বেলালকে (আযান দেওয়ার) আদেশ করলেন। ফলে তিনি আযান দিলেন এবং ইকামত দিলেন। অতঃপর তিনি নামায পরে লোকেদেরকে (সম্বোধন করে) ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, “হে মানব সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন ও তা হতে তাঁর সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যিনি তাঁদের দুজন থেকে বহু নরনারী (পৃথিবীতে) বিস্তার করেছেন। সেই আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচঞা কর এবং জ্ঞাতি-বন্ধন ছিন্ন করারকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন।” (সূরা নিসা ১ আয়াত) অতঃপর দ্বিতীয় আয়াত যেটি সূরা হাশর এর শেষে আছে সেটি পাঠ করলেন, “যে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহ্‌কে ভয় কর, আর প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক যে, আগামিকালের (কিয়ামতের) জন্য সে অগ্রিম কি পাঠিয়েছে। তোমরা আল্লাহ্‌কে ভয় কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত।” (সূরা হাশর ১৮ নং আয়াত)

“সুতরাং প্রত্যেক ব্যক্তি যেন নিজ দ্বীনার (স্বর্ণমুদ্রা), দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা), কাপড়, এক সা’ গম ও এক সা’ খেজুর থেকে সাদকাহ করে।” এমনকি তিনি বললেন, “খেজুরের আধা টুকরা হলেও (তা যেন দান করে।)” সুতরাং আনসারদের একটি লোক (চাঁদির) একটি থলে নিয়ে এল, লোকটির করতল যেন তা ধারণ করতে পারছিল না; বরং তা ধারণ করতে অক্ষমই ছিল। অতঃপর (তা দেখে) লোকেরা পরস্পর দান আনতে আরম্ভ করল। এমনকি খাদ্য সামগ্রী ও কাপড়ের দুটি স্তূপ দেখলাম। পরিশেষে আমি দেখলাম যে, রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর চেহারা যেন সোনার মতো ঝলমল করছে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সঃ) বললেন, “যে ব্যক্তি ইসলামে ভাল রীতি চালু করবে, সে তাঁর নিজের এবং ঐ সমস্ত লোকের সওয়াব পাবে, যারা তাঁর (মৃত্যুর) পর তাঁর উপর আমল করবে। তাঁদের সওয়াব কিছু পরিমাণও কম করা হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন মন্দ রীতির প্রচলন করবে, তাঁর উপর তাঁর নিজের এবং ঐ লোকেদের গোনাহ বর্তাবে, যারা তাঁর (মৃত্যুর) পর তাঁর উপর আমল করবে। তাঁদের গোনাহর কিছু পরিমাণও কম করা হবে না।”৮৬ (মুসলিম)

লক্ষণীয় যে, দান করা একটি ভাল রীতি। কিন্তু অনেকের মধ্যে যে প্রথম শুরু করবে, তাঁর হবে উক্ত সওয়াব। কোন নতুন রীতি আবিষ্কার করা উদ্দেশ্য নয়। হাদীসের শব্দে ঐ রীতিকে ‘সুন্নাহ’ বলা হয়েছে, যা বিদআতের বিপরীত। সুতরাং ‘বিদআতে হাসনার’ দলীল তাতে নেই।
বলা বাহুল্য, উক্ত হাদীসে নতুন রীতি চালু করার পর্যায়ভুক্ত তিন প্রকার কাজঃ-

(ক) শরিয়তসম্মত ভাল কাজ। কিন্তু অনেকের মধ্যে সর্বপ্রথম করা।
(খ) কোন সুন্নত কাজ, যা উঠে গিয়েছিল বা লোকমাঝে প্রচলিত করা অথবা জানিয়ে তাঁর প্রচলন করা।
(গ) কোন এমন কাজ করা, যা কোন শরীয়তসম্মত ভাল কাজের মাধ্যম। যেমন দ্বীনী মাদ্রাসা নির্মাণ করা, দ্বীনী বই-পত্র ছাপা ইত্যাদি।৮৭ (ইবনে উষাইমীন)