৪৫৬২

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৪৫৬২-[৪৯] সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ)-এর পুত্র আবূ উমামাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন ’আমির ইবনু রবী’আহ্ (রাঃ) সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ)-কে গোসল করতে দেখলেন এবং (তার মসৃণ দেহ দেখে) বলে উঠলেন : আল্লাহর কসম! আজকের মতো আমি কোনদিন দেখিনি এবং পর্দার আড়ালে রক্ষেত (কুমারী মেয়ের) কোন চামড়াও (সাহল-এর চামড়ার মতো) এরূপ দেখিনি। বর্ণনাকারী বলেনঃ অতঃপর (তার মুখ হতে এ শব্দগুলো বের হওয়ায়) সাহল সংজ্ঞাহীন অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন এবং (এ অবস্থায়) তাঁকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আনা হলো। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি সাহল ইবনু হুনায়ফ-এর জন্য কোন ব্যবস্থা করতে পারেন? আল্লাহর কসম! সে তো তার মাথা উঠাতে পারছে না। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন : তোমরা কি কাউকেও তার সম্পর্কে অভিযুক্ত করো? লোকেরা বলল : আমরা ’আমির ইবনু রবী’আহ্-এর ওপর সন্দেহ করি।

বর্ণনাকারী বলেনঃ অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আমিরকে ডেকে পাঠালেন এবং কঠোর ভাষায় তার নিন্দা করে বললেনঃ তোমাদের কেউ তার আরেক ভাইকে কেন হত্যা করে? তুমি তার জন্য কল্যাণের দু’আ করলে না কেন? তুমি (তোমার শরীরের কিছু অঙ্গ) সাহল-এর জন্য ধুয়ে দাও। তখন ’আমির নিজের মুখমণ্ডলে, উভয় হাত কনুই পর্যন্ত, উভয় পা হাঁটু হতে অঙ্গুলির পার্শ্ব এবং ইযারের ভিতরের অঙ্গ ধুয়ে পানিগুলো একটি পাত্রে নিলেন, অতঃপর সে পানি সাহল-এর উপর ঢেলে দেয়া হলো। তাতে সাহল সুস্থ হয়ে লোকজনের সাথে হেঁটে আসলেন, যেন তাঁর শরীরে কোন কষ্ট ছিল না। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]

আর ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ)-এর এক রিওয়ায়াত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আমিরকে বললেনঃ বদনযর একটি সত্য ব্যাপার। সুতরাং তুমি সাহল-এর জন্য উযূ করো। ’আমির তার জন্য উযূ করলেন।

الْفَصْلُ الثَّانِي

وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ بْنِ سَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ قَالَ: رَأَى عَامِرُ بْنُ رَبِيعَةَ سَهْلَ بْنَ حُنَيْفٍ يَغْتَسِلُ فَقَالَ: وَاللَّهِ مَا رَأَيْتُ كَالْيَوْمِ وَلَا جِلْدَ مُخَبَّأَةٍ قَالَ: فَلُبِطَ سَهْلٌ فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقِيلَ لَهُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ لَكَ فِي سَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ؟ وَاللَّهِ مَا يَرْفَعُ رَأْسَهُ فَقَالَ: «هَلْ تَتَّهِمُونَ لَهُ أَحَدًا؟» فَقَالُوا: نَتَّهِمُ عَامِرَ بْنَ رَبِيعَةَ قَالَ: فَدَعَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامِرًا فَتُغُلِّظَ عَلَيْهِ وَقَالَ: «عَلَامَ يَقْتُلُ أَحَدُكُمْ أَخَاهُ؟ أَلَا بَرَّكْتَ؟ اغْتَسِلْ لَهُ» . فَغَسَلَ لَهُ عَامِرٌ وَجْهَهُ وَيَدَيْهِ وَمِرْفَقَيْهِ وَرُكْبَتَيْهِ وَأَطْرَافَ رِجْلَيْهِ وَدَاخِلَةَ إِزَارِهِ فِي قَدَحٍ ثُمَّ صُبَّ عَلَيْهِ فَرَاحَ مَعَ النَّاسِ لَيْسَ لَهُ بَأْس. رَوَاهُ فِي شَرْحِ السُّنَّةِ وَرَوَاهُ مَالِكٌ وَفِي رِوَايَتِهِ: قَالَ: «إِن الْعين حق تَوَضَّأ لَهُ»

وعن ابي امامة بن سهل بن حنيف قال راى عامر بن ربيعة سهل بن حنيف يغتسل فقال والله ما رايت كاليوم ولا جلد مخباة قال فلبط سهل فاتى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقيل له يا رسول الله هل لك في سهل بن حنيف والله ما يرفع راسه فقال هل تتهمون له احدا فقالوا نتهم عامر بن ربيعة قال فدعا رسول الله صلى الله عليه وسلم عامرا فتغلظ عليه وقال علام يقتل احدكم اخاه الا بركت اغتسل له فغسل له عامر وجهه ويديه ومرفقيه وركبتيه واطراف رجليه وداخلة ازاره في قدح ثم صب عليه فراح مع الناس ليس له باس رواه في شرح السنة ورواه مالك وفي روايته قال ان العين حق توضا له

ব্যাখ্যাঃ (بَرَّكْتَ) অর্থাৎ যদি তুমি বলতে بارك الله عليك আল্লাহ তোমাকে বারাকাত দান করুন। তবে বদনযর তাকে প্রভাব ফেলতে পারত না। এটা মহান আল্লাহর ঐ বাণীর মতো- وَلَوْلَا إِذْ دَخَلْتَ جَنَّتَكَ قُلْتَ مَا شَاءَ اللهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ ‘‘যখন তুমি বাগানে প্রবেশ করলে তখন যদি তুমি বলতে মা-শা-আল্লাহ (আল্লাহ যা চান) আল্লাহর শক্তি ছাড়া আর কারও শক্তি নেই...’’- (সূরাহ্ আল কাহফ ১৮ : ৩৯)।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ أَلَا بَرَّكْتَ হলো নির্দিষ্ট তার জন্য অর্থাৎ তুমি যদি তার জন্য বারাকাতের দু‘আ করতে।

(وَدَاخِلَةَ إِزَارِه) (তার লুঙ্গির ভিতরাংশ) শারহুস্ সুন্নাহ্র মধ্যে এসেছে, লুঙ্গির ভিতর ধোয়া নিয়ে তাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ গিয়েছেন লজ্জাস্থান ধোয়ার দিকে। আবার কেউ কেউ গিয়েছেন রান ও নিতম্বের দিকে। আবূ ‘উবায়দ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তার লুঙ্গির ভিতরাংশ দ্বারা বুঝানো হয়েছে তার লুঙ্গির পাশে শরীরের ডান দিকের অংশকে, যা তিনি ধৌত করেছিলেন। এ রকম ব্যাখ্যা করা হয়েছে কতিপয় হাদীসের ব্যাখ্যা করতে যেয়ে।

(فتَوَضَّأ لَهٗ) ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ‘উলামার নিকট বদনযরকারীর উযূর বর্ণনা এরূপ- তার নিকট এক পেয়ালা পানি নিয়ে আসা হবে, তবে পাত্রটি মাটিতে রাখা হবে না। পাত্র থেকে সে এক চুল্লি পানি নিয়ে কুলি করবে, তারপর সেই পানি ঐ পাত্রে ফেলবে। আবার পানি নিয়ে মুখমণ্ডলে ধৌত করবে। অতঃপর বাম হাতে পানি নিয়ে ডান হাত কব্জিসহ ধৌত করবে। অতঃপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাত কব্জিসহ ধৌত করবে। অতঃপর বাম হাতে নিয়ে ডান কনুই ধৌত করবে, অতঃপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাম কনুই ধৌত করবে আর কনুই ও কব্জির মাঝের জায়গা ধৌত করবে না। তারপর তার ডান পা ধৌত করবে। অতঃপর বাম পা ধৌত করবে। তারপর তার ডান হাঁটু ধৌত করবে, অতঃপর বাম হাঁটু ধৌত করবে পূর্বে বর্ণিত পদ্ধতি অনুযায়ী। আর এ সকল কাজ করবে পাত্রের মধ্যে। অতঃপর লুঙ্গির ভিতরে ধৌত করবে। যখন এভাবে পরিপূর্ণভাবে কাজ শেষ হবে তখন তার পিছন দিক দিয়ে গিয়ে মাথার উপর ঢেলে দিতে হবে।

মাযূরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ উযূ করার এ আদেশটি ওয়াজিব। তাই বদনযরকারীকে সঠিক পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট এ উযূ করতে বাধ্য করা হবে। কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কেউ কেউ বলেন, যখন জানা যায় অমুকের বদনযর লাগে তখন তার থেকে দূরে থাকবে। ইমামের উচিত জনতার সমাবেশে যেতে তাকে বাধা দিবে। বাড়ীতে থাকার জন্য তাকে নির্দেশ দিবে। যদি সে লোক দরিদ্র হয় তবে তার জন্য যে পরিমাণ রিজিক প্রয়োজন তা তাকে দিবে। আর মানুষের থেকে তার কষ্টকে বন্ধ করে দিবে। তার ক্ষতি পিঁয়াজ রসুন ভক্ষণকারীর চেয়ে বেশি ক্ষতিকর, যা খেয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন, যেন তাতে মুসলিমদের কষ্ট না হয়। আল্লাহই ভালো জানেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৩: চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক (كتاب الطب والرقى)