জানাযার কিছু বিধান দাফন ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা শায়খ আব্দুল আযীয ইব্‌ন আব্দুল্লাহ ইব্‌ন বায রাহিমাহুল্লাহ (ইসলামহাউজ) ২৬ টি
প্রশ্ন ১- কবরের উপর পাথরকুচি রাখা ও পানি দেয়ার বিধান কি?

উত্তর - যদি সম্ভব হয় কবরের উপর পাথরকুচি রাখা মুস্তাহাব, কেননা এর ফলে কবরের মাটি জমে থাকে। বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের উপর কাঁচ ভাঙ্গা রাখা হয়েছিল। কবরের উপর পানি ঢালা মুস্তাহাব, যেন মাটিগুলো জমে যায় ও সহজে মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়, ফলে মানুষ তার অবমাননা থেকে মুক্ত থাকবে।

প্রশ্ন ২- লাশ কবরে রেখে মুখ খুলে দেবে কি?

উত্তর - মুখ খুলবে না বরং ঢেকে রাখবে। হ্যাঁ, এহরামাস্থায় যার মৃত্যু হয় তার মুখ খুলে দেবে। আরাফাতের ময়দানে এহরাম অবস্থায় জনৈক ব্যক্তির মৃত্যু হলে লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার দাফন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

«إغسلوه بماء وسدر وكفنوه في ثوبيه ولا تخمروا رأسه ولا وجهه فإنه يبعث يوم القيامة ملبيا»

“তাকে কুলপাতা মিশ্রিত পানি দ্বারা গোসল দাও এবং এহরামের দু’কাপড়ে কাফন দাও, তার মাথা ও মুখ ঢেকো না, কারণ কিয়ামতের দিন সে তালবিয়া পড়তে পড়তে উঠবে”। (বুখারি ও মুসলিম)

প্রশ্ন ৩- অনেকেই মুখ খোলা রাখা ও পাথর রাখার বিষয়টি খুব গুরুত্ব দেয়, মূলত এর কোন ভিত্তি আছে কি?

উত্তর – এ ধরণের কথার কোন ভিত্তি নেই, এটা মুর্খতা ও অজ্ঞতার আলামত।

প্রশ্ন ৪- মৃত ব্যক্তি যদি তার লাশ অন্য কোন শহরে দাফন করার জন্য অসিয়ত করে, তাহলে তার এ অসিয়ত পুরো করা কি ওয়াজিব?

উত্তর – না, তার এ অসিয়ত পুরো করা ওয়াজিব নয়, সে যদি কোন মুসলিম শহরে মারা যায়, তাহলে তাকে ঐ শহরেই দাফন করা বাঞ্চনীয়।

প্রশ্ন ৫- দাফন করার সময় মহিলাদের কবর ঢেকে রাখার বিধান কি?

উত্তর - এটা উত্তম।

প্রশ্ন ৬- মৃত ব্যক্তি যদি জীবিতদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়, তাহলে সে তালকিন অবশ্যই শুনতে পাবে, এ ধরণের মন্তব্য কতটুকু সঠিক?

উত্তর – শরিয়ত অনুমোদিত সকল ইবাদত নির্ধারিত ও সীমাবদ্ধ, এতে অনুমান বা ধারণার কোন অবকাশ নেই। মৃত ব্যক্তি জীবিতদের পায়ের ধ্বনি শোনে ঠিক, কিন্তু এর ফলে তার কোন ফায়দা হয় না।

মৃত্যুর ফলে মানুষ দুনিয়া হতে আখেরাতে ফিরে যায়, কর্মস্থল ত্যাগ করে ভোগের জায়গায় প্রত্যাবর্তন করে।

প্রশ্ন ৭- কবর খননের লাহাদ ও শেক তথা সিন্দুক ও বগলি এ দু’প্রকারের মধ্যে কোনটি উত্তম এবং দাফন শেষে কবর কতটুকু উঁচু করবে?

উত্তর - মদীনাবাসী লাহাদ খননেই অভ্যস্ত ছিল, তবে কখনো কখনো শেকও খনন করত, যেহেতু আল্লাহ তাআলা তার হাবীব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্যে লাহাদ পছন্দ করেছেন, তাই লাহাদই উত্তম, তবে শেকও জায়েয, বিশেষ করে যখন কোন প্রয়োজন দেখা দেয়। সাহাবি ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,

اللحد لنا والشق لغيرنا

“লাহাদ আমাদের জন্যে আর শেক অন্যদের জন্যে”। এ হাদিসটি খুবই দুর্বল। কারণ এ হাদিসের সনদে বিদ্যমান আব্দুল-আ’লা আছ্ছালাবী নামক জনৈক বর্ণনাকারী হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য নয়। আর কবর উঁচু করা হবে এক বিঘত বা তার কাছাকাছি পরিমাণ।

প্রশ্ন ৮- অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, মৃতের ওলী ওয়ারিসগণ উপস্থিত লোকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সম্মানিত উপস্থিতি আপনারা আপনাদের দাবি-দাওয়া মাফ করে দিন, তাকে ক্ষমা করে দিন, তার জন্যে সবাই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন। এ জাতীয় প্রথা কি শরিয়ত সম্মত?

উত্তর – এ জাতীয় প্রথার কোন ভিত্তি আছে আমার জানা নেই। হ্যাঁ, যদি জানা থাকে যে, মৃত্যুবরণকারী লোকটি মানুষের উপর জুলুম করেছে তাহলে বলা যেতে পারে যে, আপনারা আপনাদের দাবী মাফ করে দিন। অন্যথায় শুধু এ কথা বলাই যথেষ্ট যে, আপনারা তার জন্যে আল্লাহর নিকট দু’আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করুন।

প্রশ্ন ৯- কবর বা কবরস্থানের রাস্তা আলোকিত করার বিধান কি?

উত্তর - যদি তা মানুষের উপকার্থে বা লাশ দাফনের সুবিদার্থে করা হয় তাহলে জায়েয, যেমন প্রাচীর ঘেরা গোরস্থান যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো নেই, লাশ দাফনের সুবিধার্থে সেখানে আলোর ব্যবস্থা করা বৈধ। অন্যথায় কবরের উপর বাতি জালানো বা কবরকে আলোকসজ্জা করা নাজায়েয। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم زائرات القبور والمتخذين عليها المساجد والسرج» (رواه الترمذي)

“কবর যিয়ারতকারী নারী, কবরের উপর মসজিদ নির্মাণকারী ও তাতে আলোকসজ্জাকারীদের উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন”। (তিরমিজি)

অনুরূপ যদি মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে রাস্তায় বাতি দেয়া হয় আর তাতে কবর কিছুটা আলোকিত হয় তবুও দোষের কিছু নেই। অনুরূপ লাশ দাফনের জন্যে বাতি জ্বালানোতে কোন সমস্যা নেই।

প্রশ্ন ১০- মাইয়্যেতের সাথে চলার সুন্নত তরিকা কি?

উত্তর – মাইয়্যেতের সাথে জানাযার স্থানে যাবে, অতঃপর গোরস্থানে দাফন শেষ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

 «من تبع جنازة مسلم إيمانا واحتسابا وكان معها حتى يصلى عليها ويفرغ من دفنها فإنه يرجع بقيراطين كل قيراط مثل جبل أحد» (رواه البخاري)

“যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত ও সাওয়াবের আশায় কোন মুসলিমের জানাযায় অংশগ্রহন করল এবং দাফন পর্যন্ত তার সাথে থাকল ও তার দাফন কর্ম শেষ করল, সে দু’কিরাত নেকি নিয়ে ফিরবে, প্রত্যেক কিরাত ওহুদ পাহাড় পরিমাণ”। (বুখারি)

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 পরের পাতা »