بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ৫৩/ আন-নাজম | An-Najm | سورة النجم আয়াতঃ ৬২ মাক্কী
৫৩:১১ مَا کَذَبَ الۡفُؤَادُ مَا رَاٰی ﴿۱۱﴾
ما کذب الفواد ما رای ۱۱

সে যা দেখেছে, অন্তকরণ সে সম্পর্কে মিথ্যা বলেনি। আল-বায়ান

(নবীর) অন্তঃকরণ মিথ্যে মনে করেনি যা সে দেখে ছিল। তাইসিরুল

যা সে দেখেছে তার অন্তকরণ তা অস্বীকার করেনি। মুজিবুর রহমান

The heart did not lie [about] what it saw. Sahih International

১১. যা তিনি দেখেছেন, তার অন্তঃকরণ তা মিথ্যা বলেনি(১);

(১) فؤاد শব্দের অর্থ অন্তঃকরণ। উদ্দেশ্য এই যে, চক্ষু যা কিছু দেখেছে, অন্তঃকরণও তা যথাযথ উপলব্ধি করতে কোন ভুল করেনি। (مَا رَأَىٰ) শব্দের অর্থ যা কিছু দেখেছে। এখানে উদ্দেশ্য তিনি জিবরীল আলাইহিস সালাম-কে আসল আকৃতিতে দেখেছেন। [মুয়াস্‌সার, কুরতুবী]

এ আয়াতে فؤاد বা অন্তঃকরণকে উপলব্ধি করার কর্তা করা হয়েছে। অথচ অনেকের মতে উপলব্ধি করা বোধশক্তি বা عقل এর কাজ। [আততাহরীর ওয়াত তানওয়ীর] এই প্রশ্নের জওয়াব এই যে, পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াত দ্বারা জানা যায় যে, উপলব্ধির আসল কেন্দ্ৰ অন্তঃকরণ। তাই কখনও বোধশক্তিকেও ‘কলব’ (অন্তঃকরণ) শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করে দেয়া হয়; যেমন (لِمَن كَانَ لَهُ قَلْبٌ) আয়াতে কলব বলে عقل বা বিবেক ও বোধশক্তি বোঝানো হয়েছে। পবিত্র কুরআনের (لَهُمْ قُلُوبٌ لَّا يَفْقَهُونَ بِهَا) ইত্যাদি আয়াত এর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১) যা সে দেখেছে তার হৃদয় তা অস্বীকার করেনি। [1]

[1] অর্থাৎ, নবী করীম (সাঃ) জিবরীল (আঃ)-কে তাঁর আসল আকৃতিতে দেখেন যে, তাঁর ছয়শত ডানা রয়েছে। তাঁর প্রসারিত ডানা পূর্ব ও পশ্চিমের (আকাশ ও পৃথিবীর) মধ্যবর্তী স্থানকে ঘিরে রেখেছিল। এ দর্শনকে নবী করীম (সাঃ)-এর অন্তর মিথ্যা মনে করেনি। বরং আল্লাহর এই বিশাল ক্ষমতাকে স্বীকার করে নিয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৩:১২ اَفَتُمٰرُوۡنَهٗ عَلٰی مَا یَرٰی ﴿۱۲﴾
افتمرونهٗ علی ما یری ۱۲

সে যা দেখেছে, সে সম্পর্কে তোমরা কি তার সাথে বিতর্ক করবে? আল-বায়ান

সে যা দেখেছে সে বিষয়ে তোমরা কি তার সঙ্গে বিতর্ক করবে? তাইসিরুল

সে যা দেখেছে তোমরা কি সে বিষয়ে তার সংগে বিতর্ক করবে? মুজিবুর রহমান

So will you dispute with him over what he saw? Sahih International

১২. তিনি যা দেখেছেন তোমরা কি সে বিষয়ে তার সঙ্গে বিতর্ক করবে?

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১২) সে যা দেখেছে তোমরা কি সে বিষয়ে তার সঙ্গে বিতর্ক করবে?

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৩:১৩ وَ لَقَدۡ رَاٰهُ نَزۡلَۃً اُخۡرٰی ﴿ۙ۱۳﴾
و لقد راه نزلۃ اخری ۙ۱۳

আর সে তো তাকে* আরেকবার দেখেছিল। আল-বায়ান

অবশ্যই সে [অর্থাৎ নবী (সা.)] তাকে [অর্থাৎ জিবরাঈল (আঃ)-কে] আরেকবার দেখেছিল তাইসিরুল

নিশ্চয়ই সে তাকে আরেকবার দেখেছিল। মুজিবুর রহমান

And he certainly saw him in another descent Sahih International

* জিবরীলকে।

১৩. আর অবশ্যই তিনি তাকে আরেকবার দেখেছিলেন।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৩) নিশ্চয়ই সে তাকে আরেকবার দেখেছিল।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৩:১৪ عِنۡدَ سِدۡرَۃِ الۡمُنۡتَهٰی ﴿۱۴﴾
عند سدرۃ المنتهی ۱۴

সিদরাতুল মুনতাহার* নিকট। আল-বায়ান

শেষসীমার বরই গাছের কাছে, তাইসিরুল

সিদরাতুল মুনতাহার নিকট, মুজিবুর রহমান

At the Lote Tree of the Utmost Boundary - Sahih International

* সিদরাতুল মুনতাহা হল সপ্তম আকাশে আরশের ডান দিকে একটি কুল জাতীয় বৃক্ষ, সকল সৃষ্টির জ্ঞানের সীমার শেষ প্রান্ত। তারপর কি আছে, একমাত্র আল্লাহই জানেন।

১৪. সিদরাতুল মুন্তাহা তথা প্রান্তবর্তী কুল গাছ এর কাছে(১),

(১) এর অর্থ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক জিবরীলকে দ্বিতীয়বারের মত তার আসল আকৃতিতে দেখা। [বুখারী: ৩২৩৪, মুসলিম: ১৭৪] দ্বিতীয়বারের এই দেখার স্থান সপ্তম আকাশের ‘সিদরাতুল-মুন্তাহা’ বলা হয়েছে। বলাবাহুল্য, মে'রাজের রাত্রিতেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সপ্তম আকাশে গমন করেছিলেন। এতে করে দ্বিতীয়বার দেখার সময়ও মোটামুটিভাবে নির্দিষ্ট হয়ে যায়। অভিধানে ‘সিদরাহ' শব্দের অর্থ বদরিকা বৃক্ষ। মুন্তাহা শব্দের অর্থ শেষপ্রান্ত। সপ্তম আকাশে আরশের নিচে এই বদরিকা বৃক্ষ অবস্থিত। মুসলিমের বর্ণনায় একে যষ্ঠ আকাশে বলা হয়েছে। উভয় বর্ণনার সমন্বয় এভাবে হতে পারে যে, এই বৃক্ষের মূল শিকড় ষষ্ঠ আকাশে এবং শাখা প্রশাখা সপ্তম আকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। সাধারণ ফেরেশতাগণের গমনাগমনের এটাই শেষ সীমা। তাই একে মুন্তাহা বলা হয়। [ইবন কাসীর; কুরতুবী; আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর; ফাতহুল কাদীর]

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আল্লাহ তা'আলার বিধানাবলি প্রথমে ‘সিদরাতুলমুন্তাহায়’ নাযিল হয় এবং এখান থেকে সংশ্লিষ্ট ফেরেশতাগণের কাছে সোপর্দ করা হয়। যমীন থেকে আসমানগামী আমলনামা ইত্যাদিও ফেরেশতাগণ এখানে পৌছায় এবং এখান থেকে অন্য কোন পন্থায় আল্লাহ তা'আলার দরবারে পেশ করা হয়। [মুসলিম: ১৭৩, মুসনাদে আহমাদ: ১/৩৮৭, ৪২২]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৪) সিদরাতুল মুনতাহার নিকট।[1]

[1] এটা হল মি’রাজের রাতে যে জিবরীল (আঃ)-কে তাঁর আসল আকৃতিতে দেখেছিলেন, তারই বর্ণনা। এই ‘সিদরাতুল মুন্তাহা’ হল ষষ্ঠ বা সপ্তম আসমানে অবস্থিত একটি কুল (বরই) গাছ। আর এটাই শেষ সীমা। এর উপরে কোন ফিরিশতা যেতে পারেন না। ফিরিশতাকুল আল্লাহর বিধানাদিও এখান থেকেই গ্রহণ করেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৩:১৫ عِنۡدَهَا جَنَّۃُ الۡمَاۡوٰی ﴿ؕ۱۵﴾
عندها جنۃ الماوی ۱۵

যার কাছে জান্নাতুল মা’ওয়া* অবস্থিত। আল-বায়ান

যার কাছে অবস্থিত বসবাসের জান্নাত। তাইসিরুল

যার নিকট অবস্থিত বাসোদ্যান। মুজিবুর রহমান

Near it is the Garden of Refuge - Sahih International

* ফেরেশতা, শহীদদের রূহ ও মুত্তাকীদের অবস্থানস্থল।

১৫. যার কাছে জান্নাতুল মা’ওয়া(১) অবস্থিত।

(১) الْمَأْوَىٰ শব্দের অর্থ ঠিকানা, বিশ্রামস্থল। জান্নাতকে مَأْوَىٰ বলার কারণ এই যে, এটাই মুমিনদের আসল ঠিকানা। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৫) যার নিকট অবস্থিত (জান্নাতুল মা’ওয়া) বাসোদ্যান। [1]

[1] এটাকে ‘জান্নাতুল মা’ওয়া’ এই কারণে বলা হয় যে, এটাই ছিল আদম (আঃ)-এর আশ্রয়স্থল ও বাসস্থান। আবার কেউ কেউ বলেছেন, আত্মাসমূহ এখানে এসে জমায়েত হয়। (ফাতহুল কাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৩:১৬ اِذۡ یَغۡشَی السِّدۡرَۃَ مَا یَغۡشٰی ﴿ۙ۱۶﴾
اذ یغشی السدرۃ ما یغشی ۙ۱۶

যখন কুল গাছটিকে যা আচ্ছাদিত করার তা আচ্ছাদিত করেছিল। আল-বায়ান

যখন গাছটি যা দিয়ে ঢেকে থাকার তা দিয়ে ঢাকা ছিল, (যার বর্ণনা মানুষের বোধগম্য নয়) তাইসিরুল

যখন বৃক্ষটি, যদ্বারা আচ্ছাদিত হবার তদ্বারা ছিল আচ্ছাদিত, মুজিবুর রহমান

When there covered the Lote Tree that which covered [it]. Sahih International

১৬. যখন কুল গাছটিকে যা আচ্ছাদিত করার তা আচ্ছাদিত করেছিল(১),

(১) অর্থাৎ যখন বদরিকা বৃক্ষকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল আচ্ছন্নকারী বস্তু। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তখন বদরিকা বৃক্ষের উপর স্বর্ণ নির্মিত প্রজাপতি চতুর্দিক থেকে এসে পতিত হচ্ছিল। [মুসলিম: ১৭৩, মুসনাদে আহমাদ: ১/৩৮৭, ৪২২] মনে হয়, আগন্তুক মেহমান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে সেদিন বদরিকা বৃক্ষকে বিশেষভাবে সজ্জিত করা হয়েছিল। [কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৬) যখন (বদরী) বৃক্ষটিকে, যা আচ্ছাদিত করার ছিল তা আচ্ছাদিত করল, [1]

[1] এখানে ‘সিদরাতুল মুন্তাহা’র সেই দৃশ্য ও অবস্থার বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে, যা নবী করীম (সাঃ) মি’রাজের রাতে দর্শন করেছিলেন। সোনার প্রজাপতি তার চতুস্পার্শেব উড়ে বেড়াচ্ছিল। ফিরিশতামন্ডলীও সে বৃক্ষকে ঘিরে রেখেছিলেন এবং মহান প্রভুর জ্যোতির দৃশ্যও ছিল সেখানে। (ইবনে কাসীর প্রভৃতি) এই স্থানেই নবী করীম (সাঃ)-কে তিনটি জিনিস প্রদান করা হয়। আর তা হল, পাঁচ ওয়াক্ত নামায, সূরা বাক্বারার শেষের আয়াতগুলো এবং সেই মুসলিমের ক্ষমার প্রতিশ্রুতি, যে শিরকের মলিনতা থেকে পবিত্র থাকবে। (মুসলিমঃ কিতাবুল ঈমান, সিদরাতুল মুন্তাহা পরিচ্ছেদ)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৩:১৭ مَا زَاغَ الۡبَصَرُ وَ مَا طَغٰی ﴿۱۷﴾
ما زاغ البصر و ما طغی ۱۷

তার দৃষ্টি এদিক-সেদিক যায়নি এবং সীমাও অতিক্রম করেনি। আল-বায়ান

(নবীর) দৃষ্টি ভ্রমও ঘটেনি, সীমা ছাড়িয়েও যায়নি। তাইসিরুল

তার দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি, দৃষ্টি লক্ষ্যচ্যূতও হয়নি। মুজিবুর রহমান

The sight [of the Prophet] did not swerve, nor did it transgress [its limit]. Sahih International

১৭. তার দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি, দৃষ্টি লক্ষ্যচ্যুতও হয়নি।(১)

(১) زاغ শব্দটি زيغ থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ বক্র হওয়া, বিপথগামী হওয়া। আর طغى শব্দটি طغيان থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ সীমালঙ্ঘন করা। উদ্দেশ্য এই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা কিছু দেখেছেন, তাতে দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি।

তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেদিন শুধু যে জিবরীলকে দেখেছেন তাও নয়। জিবরীল ছাড়াও তিনি জান্নাত দেখেছেন, সিদরাতুল মুন্তাহা দেখেছেন, সেখানে যা পতিত হচ্ছিল তাও দেখেছেন, আল্লাহর অন্যান্য নিদর্শনাবলী দেখেছেন। মোটকথা: আল্লাহ তাকে যা দেখাতে চেয়েছেন তিনি তা স্পষ্টভাবে দেখেছেন। এর বাইরে দেখতে চাননি। এটা মূলত: আল্লাহর রাসূলের একটি গুণ যে, তিনি আল্লাহর নির্দেশিত পথের বাইরে একটুও যাননি। [দেখুন: কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৭) তার দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি, দৃষ্টি লক্ষ্যচ্যুতও হয়নি। [1]

[1] অর্থাৎ, নবী করীম (সাঃ)-এর দৃষ্টি ডানে-বামে হয়নি এবং সেই সীমা অতিক্রমও করেনি, যা তাঁর জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। (আইসারুত তাফাসীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৩:১৮ لَقَدۡ رَاٰی مِنۡ اٰیٰتِ رَبِّهِ الۡکُبۡرٰی ﴿۱۸﴾
لقد رای من ایت ربه الکبری ۱۸

নিশ্চয় সে তার রবের বড় বড় নিদর্শনসমূহ থেকে দেখেছে। আল-বায়ান

সে তার প্রতিপালকের বড় বড় নিদর্শন দেখেছিল। তাইসিরুল

সেতো তার প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলী দেখেছিল। মুজিবুর রহমান

He certainly saw of the greatest signs of his Lord. Sahih International

১৮. অবশ্যই তিনি তার রবের মহান নিদর্শনাবলীর কিছু দেখেছিলেন;

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৮) নিঃসন্দেহে সে তার প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলী দেখেছিল। [1]

[1] যেগুলোর মধ্যে জিবরীল (আঃ)-এর আসল আকৃতি, ‘সিদরাতুল মুন্তাহা’ ও প্রতিপালকের অন্যান্য মহাশক্তির কিছু নিদর্শন। যার বিস্তারিত আলোচনা মি’রাজ সংক্রান্ত হাদীসমূহে করা হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৩:১৯ اَفَرَءَیۡتُمُ اللّٰتَ وَ الۡعُزّٰی ﴿ۙ۱۹﴾
افرءیتم اللت و العزی ۙ۱۹

তোমরা লাত ও ‘উযযা সম্পর্কে আমাকে বল’? আল-বায়ান

তোমরা কি লাত ও উযযা সম্পর্কে ভেবে দেখেছ? তাইসিরুল

তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও উযযা সম্বন্ধে? মুজিবুর রহমান

So have you considered al-Lat and al-'Uzza? Sahih International

১৯. অতএব, তোমরা আমাকে জানাও ‘লাত’ ও ‘উযযা’ সম্পর্কে

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৯) তোমরা কি ভেবে দেখেছ ‘লাত’ ও ‘উয্যা’ সম্বন্ধে

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৩:২০ وَ مَنٰوۃَ الثَّالِثَۃَ الۡاُخۡرٰی ﴿۲۰﴾
و منوۃ الثالثۃ الاخری ۲۰

আর মানাত সম্পর্কে, যা তৃতীয় আরেকটি? আল-বায়ান

আর তৃতীয় আরেকটি মানাৎ সম্পর্কে? (এ সব অক্ষম, বাকশক্তিহীন, নড়া-চড়ার শক্তিহীন মূর্তিগুলোর পূজা করা কতটা যুক্তিযুক্ত) তাইসিরুল

এবং তৃতীয় আরেকটি ‘মানাত’ সম্বন্ধে? মুজিবুর রহমান

And Manat, the third - the other one? Sahih International

২০. এবং তৃতীয় আরেকটি ‘মানাত’ সম্পর্কে?(১)

(১) অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের যে শিক্ষা দিচ্ছেন তোমরা তো তাকে গোমরাহী ও কুপথগামিতা বলে আখ্যায়িত করছে। অথচ এ জ্ঞান তাকে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে। আর আল্লাহ তা’আলা তাকে চাক্ষষভাবে এমন সব সত্য ও বাস্তবতা দেখিয়েছেন যার সাক্ষ্য তিনি তোমাদের সামনে পেশ করছেন। এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে মুশরিক আরবদের তিনজন দেবীর কথা উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে যাদেরকে মক্কা, তায়েফ, মদীনা এবং হিজাজের আশে পাশের লোক জন বেশী বেশী পূজা করত। এ তিনজন দেবীর মধ্যে (লাত) এর আস্তানা ছিল তায়েফে। বনী সাকীফ গোত্র তার পুজারী ছিল। লাত শব্দের অর্থ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতানৈক্য আছে।

ইবনে জারীর তাবারীর জ্ঞানগর্ভ বিশ্লেষণ হচ্ছে। এ শব্দটি আল্লাহ শব্দের স্ত্রীলিংগ। এর অর্থ ঘুরা বা কারো প্রতি বুকে পড়া। মুশরিকরা যেহেতু ইবাদাতের জন্য তার প্রতি মনযোগী হতো, তার সামনে ঝুঁকতো এবং তার তাওয়াফ করতো তাই তাকে ‘লাত’ আখ্যা দেয়া শুরু হলো। এর আরেক অর্থ মন্থন করা বা লেপন করা। ইবনে আব্বাস বলেন যে, “মুলত সে ছিল একজন মানুষ, যে তায়েফের সন্নিকটে এক কঙ্করময় ভূমিতে বাস করতো এবং হজের উদ্দেশ্যে গমনকারীদের ছাতু ও অন্যান্য খাদ্য খাওয়াতো।” [বুখারী: ৪৮৫৯]

সে মারা গেলে লোকেরা ঐ কঙ্করময় ভূমিতে তার নামে একটা আস্তানা গড়ে তোলে এবং তার উপাসনা করতে শুরু করে। (উযযা) শব্দটির উৎপত্তি ‘আযীয’ শব্দ থেকে। এর অর্থ সম্মানিতা। এটা ছিল কুরাইশদের বিশেষ দেবী। এর আস্তানা ছিল মক্কা ও তায়েফের মধ্যবর্তী “নাখলা” উপত্যকায়। বনী হাশেমের মিত্র বনী শায়বান গোত্রের লোক এর প্রতিবেশী ছিল। কুরাইশ এবং অন্যান্য গোত্রের লোকজন এর যিয়ারতের জন্য আসতো, এর উদ্দেশ্যে মানত করতো এবং বলি দান করতো। কা'বার মত এ স্থানটিতেও কুরবানী বা বলির জন্তু নিয়ে যাওয়া হতো এবং এটিকে সমস্ত মূর্তির চেয়ে অধিক সম্মান দেয়া হতো।

(মানাত) এর আস্তানা ছিল মক্কা ও মদীনার মাঝে লোহিত সাগরের তীরবর্তী কুদাইদের মুশাল্লাল নামক স্থানে। বিশেষ করে খুযাআ, আওস এবং খাযরাজ গোত্রের লোকেরা এর খুব ভক্ত ছিল। তার হাজ ও তাওয়াফ করা হতো এবং তার উদ্দেশ্যে মানতের বলি দেয়া হতো। হজের মওসুমে হাজীরা বায়তুল্লাহর তাওয়াফ এবং আরাফাতে ও মিনায় অবস্থানের পর সেখান থেকে মানাতের যিয়ারত তথা দর্শনলাভের জন্য লাব্ববায়কা লাব্বায়কা ধ্বনি দিতে শুরু করতো। যারা এ দ্বিতীয় হজ্জের নিয়ত করতো তারা সাফা এবং মারওয়ার মাঝে সাঈ করতো না। [দেখুন: বুখারী: ৪৮৬১] [ফাতহুল কাদীর; তাবারী; কুরতুবী; ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২০) এবং তৃতীয় আরেকটি ‘মানাত’ সম্বন্ধে? [1]

[1] এ কথা মুশরিকদেরকে তিরস্কার করে বলা হচ্ছে যে, এই হল আল্লাহর মাহাত্ম্য, যা উল্লেখ হয়েছে। তিনি হলেন জিবরীল (আঃ)-এর মত মহান ফিরিশতার স্রষ্টা। মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর মত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষটি হল তাঁর রসূল। তাঁকে তিনি আসমানে ডেকে নিয়ে স্বীয় বড় বড় নিদর্শনসমূহ প্রদর্শন করেন। তাঁর উপর অহীও অবতীর্ণ করেন। বল তো, তোমরা যেসব উপাস্যের উপাসনা কর, তাদের মধ্যেও কি এই বা এই ধরনের গুণাবলী আছে? এই কথার ভিত্তিতে আরবের প্রসিদ্ধ তিনটি প্রতিমার নাম উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করেছেন। لاَتٌ (লাত) কারো কারো নিকট এটা الله থেকে উদ্ভূত। আবার কারো নিকট এটা لاَتَ يَلِيْتُ থেকে উদ্ভূত। যার অর্থ ফিরানো। পূজারীরা তাদের গর্দান তার দিকে ফিরাতো এবং তার তাওয়াফ করত তাই তার এই নাম হয়ে যায়। কেউ বলেন যে, لات এর تا অক্ষরটি তাশদীদ (ّ ) যুক্ত। لَتَّ يَلُتُّ থেকে ‘ইস্ম ফায়েল’ বা কর্তৃকারকপদ (যে ছাতু ঘুলে)। সে একজন নেক মানুষ ছিল। হাজীদেরকে ছাতু ঘুলে ঘুলে খাওয়াতো। যখন সে মারা গেল, তখন লোকেরা তার কবরকে ইবাদতগাহ বানিয়ে নিল।

তারপর তার মূর্তি তৈরী করা হল। এটা ত্বায়েফের বানূ সাক্বীফ গোত্রের সব চাইতে বড় প্রতিমা ছিল। عُزَّى সম্পর্কে বলা হয় যে, এটা আল্লাহর গুণবাচক নাম عَزِيْزٌ থেকে উদ্ভূত। আর এটা أَعَزَّ এর স্ত্রীলিঙ্গ। যার অর্থ, عَزِيْزَةٌ (প্রিয়তমা)। কেউ কেউ বলেছেন, এটা গাত্বফানে একটি গাছ ছিল, যার পূজা করা হত। কেউ বলেছেন, এটি শয়তান জিন্নী (পেতনী) ছিল, যা কোন কোন গাছে দেখা দিত। আবার কারো মতে এটি একটি সাদা পাথর ছিল, লোকেরা যার পূজা করত। এটি কুরাইশ ও বনী কিনানাহ গোত্রের লোকদের নিজসব উপাস্য ছিল। مَنَاةٌ হল, مَنَى يَمْنِى ধাতু থেকে গঠিত। যার অর্থ হল, صَبَّ (বহানো)। এর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্য লোকেরা তার নিকট প্রচুর পরিমাণে পশু জবাই করত এবং তাদের রক্ত বহাতো। এটা ছিল মক্কা ও মদীনার মাঝে অবস্থিত একটি মূর্তি। (ফাতহুল ক্বাদীর) এই মূর্তিটি ‘কুদাইদ’এর সামনে ‘মুশাল্লাল’ নামক স্থানে স্থাপিত ছিল। বনী খুযাআহ গোত্রের লোকেদের এটি নিজস্ব মূর্তি ছিল। জাহেলিয়্যাতের যুগে ‘আউস ও খাযরাজ’ গোত্রের লোকেরা এখান থেকেই ইহরাম বাঁধত এবং ঐ মূর্তির তাওয়াফও করত। (আয়সারুত তাফাসীর ও ইবনে কাসীর) এগুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন স্থানে বহু প্রতিমা ও প্রতিমালয় স্থাপিত ছিল।

মক্কা বিজয়ের পর এবং আরো অন্যান্য সময়-সুযোগে নবী করীম (সাঃ) ঐ সমস্ত মূর্তিসহ আরো অন্যান্য সকল মূর্তির মূলোৎপাটন করেন। ঐগুলোর উপর নির্মিত গম্বুজ ও গৃহাদি ভেঙ্গে ফেলান। যে গাছগুলোর তা’যীম (সম্মান প্রদর্শন) করা হত, সেগুলো সব কেটে ফেলান এবং মূর্তিপূজার সমস্ত স্মৃতিচিহ্ন মিটিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়। আর এ কাজের জন্য তিনি খালেদ, আলী, আমর ইবনে আস এবং জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী (রাঃ)-দের সেই সেই স্থানে প্রেরণ করেন, যেখানে এ মূর্তিগুলো স্থাপিত ছিল। তাঁরা সেখানে গিয়ে সেসব ভেঙ্গে ফেলে আরব ভূভাগ থেকে শিরকের নাম পর্যন্ত নিশ্চিহ্ন করে দেন। (ইবনে কাসীর) প্রথম শতাব্দীর বহু পরে আরবের মাটিতে আবার একবার উক্ত শ্রেণীর শিরকীয় কার্যকলাপ ব্যাপক হয়ে ওঠে। এ সময় মহান আল্লাহ দাওয়াতের পতাকাবাহী শায়খ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল অহ্হাব নামক একজন সংস্কারক আলেমকে তওফীক দেন। তিনি ‘দিরইয়্যাহ’র শাসকের সহযোগিতায় শাসন ও ক্ষমতা বলে শিরকের এই সমস্ত কার্যকলাপের পরিসমাপ্তি ঘটান। তারপর বাদশাহ আব্দুল আযীয; নাজদ ও হিজাযের শাসক (বর্তমান সউদী শাসকবর্গের পিতা ও এই দেশের প্রতিষ্ঠাতা) তাঁর সেই দাওয়াত পুনরায় নবায়ন ও সংস্কার করেন। তিনি সমস্ত পাকা কবর ও গম্বুজকে ভেঙ্গে ফেলে নবী করীম (সাঃ)-এর সুন্নতকে পুনর্জীবিত করেন। এইভাবেই আল-হামদুলিল্লাহ বর্তমানে পূরো সঊদী আরবে ইসলামী বিধি-বিধান অনুসারে না কোন পাকা কবর আছে, আর না কোন মাযার।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ১১ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 7 পরের পাতা »