৫৮৬৪

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মিরাজের বর্ণনা

৫৮৬৪-[৩] ইবনু শিহাব (রহিমাহুল্লাহ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আবূ যার (রাঃ) বর্ণনা করতেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমি মক্কায় থাকাকালীন এক রাত্রে আমার ঘরের ছাদ বিদীর্ণ করা হলো এবং জিবরীল আলায়হিস সালাম অবতরণ করলেন, এরপর আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। তারপর তাকে যমযমের পানি দিয়ে ধৌত করলেন। অতঃপর জ্ঞান ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি স্বর্ণ-পাত্র এনে তা বুকের মধ্যে ঢেলে বেদিলেন। তারপর তাকে বন্ধ করে দিলেন।
অতঃপর তিনি (জিবরীল আলায়হিস সালাম) আমার হাত ধরে আমাকে আকাশের দিকে নিয়ে গেলেন। যখন আমি নিকটবর্তী আকাশে উপনীত হলাম, তখন জিবরীল আলায়হিস সালাম আসমানের দ্বার রক্ষীকে বললেন, দরজা খোল। সে বলল, (আপনি) কে? তিনি বললেন, জিবরীল। সে বলল, আপনার সাথে আর কেউ আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমার সাথে মুহাম্মাদ (সা.)। সে বলল, তাঁকে কি ডাকা হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর যখন সে দরজা খুলল, তখন আমরা নিকটবর্তী আকাশে আরোহণ করে দেখলাম, সেখানে এক লোক বসে আছেন, তার ডানপার্শ্বে বহু মানবাকৃতি এবং তার বামপার্শ্বেও অনেক মানবাকৃতি। তিনি ডানদিকে তাকালে হাসেন এবং যখন বামদিকে তাকান, তখন কাঁদেন। তিনি বললেন, খোশ আমদেদ, হে সৎ নবী (সা.)! হে পুণ্যবান সন্তান। আমি জিবরীল আলায়হিস সালাম-কে প্রশ্ন করলাম, ইনি কে? বললেন, ইনি আদম আলায়হিস সালাম ডানে ও বামে এগুলো তাঁর সন্তানের আত্মাসমূহ। ডানদিকে এগুলো জান্নাতী এবং বামদিকের এগুলো জাহান্নামী। এজন্য তিনি যখন ডানদিকে তাকান, তখন হাসেন এবং যখন বামদিকে তাকান, তখন কাঁদেন।
অতঃপর তিনি আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় আকাশের দিকে উঠলেন এবং দ্বাররক্ষীকে বললেন, দরজা খোল। তখন সে প্রথম দ্বাররক্ষীর মতো প্রশ্ন করল (তারপর দরজা খুলল)।  আনাস (রাঃ) বলেন, বর্ণনাকারী আবূ যার (রাঃ) বলেছেন, নবী (সা.) আকাসসমূহে আদম, ইদরীস, মূসা, ঈসা এবং ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে পেয়েছেন; কিন্তু তিনি (আবূ যার) তাদের অবস্থানের কথা নির্দিষ্টভাবে বলেননি। শুধু এটুকু বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সা.) আদম আলায়হিস সালাম-কে নিকটবর্তী আকাশে এবং ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে ষষ্ঠ আকাশে পেয়েছেন।
ইবনু শিহাব (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইবনু হাযম প্রথম আমাকে বলেছেন যে, ইবনু আব্বাস ও আবূ হাব্বাহ আল আনসারী একান্ত তারা উভয়ে বলতেন, নবী (সা.) বলেছেন: অতঃপর আমাকে ঊর্ধ্বলোকে নিয়ে যাওয়া হলো এবং আমি এক সমতল স্থানে পৌছলাম। সেখানে আমি কলমের লেখার শব্দ শুনতে পেলাম। ইবনু হাযম ও আনাস বা বলেন, নবী (সা.) বলেছেন: তখন মহান আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতের ওপর পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) সালাত ফরয করলেন। আমি তা নিয়ে প্রত্যাবর্তন করলাম। যখন মূসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে পৌছলাম, তখন তিনি প্রশ্ন করলেন, আপনার উম্মতের ওপর আল্লাহ তা’আলা কি ফরয করেছেন? আমি বললাম, পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) সালাত ফরয করেছেন। তিনি বললেন, আপনার প্রভুর কাছে ফিরে যান। কেননা আপনার উম্মত সক্ষম হবে না। অতঃপর মূসা আলায়হিস সালাম আমাকে ফেরত পাঠালেন। ফলে আল্লাহ তা’আলা কিছু অংশ কম করে দিলেন। অতঃপর আমি আবার মূসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে ফিরে এসে বললাম, কিছু সালাত কম করে দিয়েছেন। তিনি পুনরায় বললেন, আবারও যান। কেননা আপনার উম্মত এটাও আদায় করতে সক্ষম হবে না। অতএব আমি আবারও আমার রবের কাছে ফিরে গেলাম। আল্লাহ তা’আলা আবার কিছু মাফ করে দিলেন। আমি আবার মূসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে ফিরে আসলে তিনি বললেন, আবার যান। আরো কিছু সালাত কম করিয়ে আনেন। কেননা আপনার উম্মত এটাও আদায় করতে সক্ষম হবে না। অতএব আমি আবার আমার প্রভুর কাছে গেলাম। এবার আল্লাহ তা’আলা বললেন, এই পাঁচ সালাতই ফরয, আর তা (সাওয়াবের দিক দিয়ে) পঞ্চাশ সালাতের সমান। আমার কথার পরিবর্তন হয় না। অতঃপর আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে ফিরে আসলাম। তিনি বললেন, আবারও আপনি আপনার রবের কাছে যান।
এবার আমি বললাম, পুনরায় আমার প্রভুর কাছে যেতে আমি লজ্জাবোধ করছি। অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে নিয়ে রওয়ানা হলেন এবং ’সিদরাতুল মুনতাহা’য় পৌছলেন। উক্ত গাছটিকে বিভিন্ন বর্ণ ঢেকে ফেলল। প্রকৃতপক্ষে সেটা কি, তা আমি জানি না। অতঃপর আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হলো। দেখতে পেলাম তাতে মুক্তার গম্বুজসমূহ এবং তার মাটি মিশকের। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَابٌ فِي الْمِعْرَاجِ)

وَعَن ابْن شهَاب عَن أنسٍ قَالَ: كَانَ أَبُو ذَرٍّ يُحَدِّثُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: فُرِجَ عني سقفُ بَيْتِي وَأَنا بِمَكَّة فَنزل جِبْرِيل فَفَرَجَ صَدْرِي ثُمَّ غَسَلَهُ بِمَاءِ زَمْزَمَ ثُمَّ جَاءَ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ مُمْتَلِئٌ حِكْمَةً وَإِيمَانًا فَأَفْرَغَهُ فِي صَدْرِي ثُمَّ أَطْبَقَهُ ثُمَّ أَخَذَ بيَدي فعرج بِي إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا. قَالَ جِبْرِيلُ لِخَازِنِ السَّمَاءِ: افْتَحْ. قَالَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ جِبْرِيلُ. قَالَ: هَل مَعَك أحد؟ قَالَ: نعم معي مُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَقَالَ: أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ فَلَمَّا فَتَحَ عَلَوْنَا السَّمَاءَ الدُّنْيَا إِذَا رَجُلٌ قَاعِدٌ عَلَى يَمِينِهِ أَسْوِدَةٌ وَعَلَى يَسَارِهِ أَسْوِدَةٌ إِذَا نَظَرَ قِبَلَ يَمِينِهِ ضَحِكَ وَإِذَا نَظَرَ قِبَلَ شَمَالِهِ بَكَى فَقَالَ مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ الصَّالِحِ وَالِابْنِ الصَّالِحِ. قُلْتُ لِجِبْرِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا آدَمُ وَهَذِهِ الْأَسْوِدَةُ عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ نَسَمُ بَنِيهِ فَأَهْلُ الْيَمين مِنْهُم أهل الْجنَّة والأسودة عَن شِمَاله أهلُ النَّار فَإِذا نظر عَن يَمِينِهِ ضَحِكَ وَإِذَا نَظَرَ قِبَلَ شَمَالِهِ بَكَى حَتَّى عَرَجَ بِي إِلَى السَّمَاءِ الثَّانِيَةِ فَقَالَ لِخَازِنِهَا: افْتَحْ فَقَالَ لَهُ خَازِنُهَا مِثْلَ مَا قَالَ الْأَوَّلُ قَالَ أَنَسٌ: فَذَكَرَ أَنَّهُ وَجَدَ فِي السَّمَاوَاتِ آدَمَ وَإِدْرِيسَ وَمُوسَى وَعِيسَى وَإِبْرَاهِيمَ وَلَمْ يُثْبِتْ كَيْفَ مَنَازِلُهُمْ غَيْرَ أَنَّهُ ذَكَرَ أَنَّهُ وَجَدَ آدَمَ فِي السَّمَاءِ الدُّنْيَا وَإِبْرَاهِيمَ فِي السَّمَاءِ السَّادِسَةِ. قَالَ ابْنُ شِهَابٍ: فَأَخْبَرَنِي ابْنُ حَزْمٍ أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ وَأَبَا حَبَّةَ الْأَنْصَارِيَّ كَانَا يَقُولَانِ. قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «ثمَّ عرج بِي حَتَّى وصلت لِمُسْتَوًى أَسْمَعُ فِيهِ صَرِيفَ الْأَقْلَامِ» وَقَالَ ابْنُ حَزْمٍ وَأَنَسٌ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فَفَرَضَ اللَّهُ عَلَى أُمَّتِي خَمْسِينَ صَلَاةً فَرَجَعْتُ بِذَلِكَ حَتَّى مَرَرْتُ عَلَى مُوسَى. فَقَالَ: مَا فَرْضُ اللَّهِ لَكَ عَلَى أُمَّتِكَ؟ قُلْتُ: فَرَضَ خَمْسِينَ صَلَاةً. قَالَ: فَارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَإِن أُمَّتكَ لَا تطِيق فراجعت فَوَضَعَ شَطْرَهَا فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقُلْتُ: وَضَعَ شَطْرَهَا فَقَالَ: رَاجِعْ رَبَّكَ فَإِنَّ أُمَّتَكَ لَا تُطِيقُ ذَلِكَ فَرَجَعْتُ فَرَاجَعْتُ فَوَضَعَ شَطْرَهَا فَرَجَعْتُ إِلَيْهِ فَقَالَ: ارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَإِنَّ أُمَّتَكَ لَا تُطِيقُ ذَلِكَ فَرَاجَعْتُهُ فَقَالَ: هِيَ خَمْسٌ وَهِيَ خَمْسُونَ لَا يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَيَّ فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقَالَ: رَاجِعْ رَبَّكَ. فَقُلْتُ: اسْتَحْيَيْتُ مِنْ رَبِّي ثُمَّ انْطُلِقَ بِي حَتَّى انْتُهِيَ إِلَى سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى وَغَشِيَهَا أَلْوَانٌ لَا أَدْرِي مَا هِيَ؟ ثُمَّ أُدْخِلْتُ الْجَنَّةَ فَإِذَا فِيهَا جَنَابِذُ اللُّؤْلُؤِ وَإِذَا تُرَابُهَا الْمِسْكُ . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (349) و مسلم (263 / 163)، (415) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

وعن ابن شهاب عن انس قال كان ابو ذر يحدث ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال فرج عني سقف بيتي وانا بمكة فنزل جبريل ففرج صدري ثم غسله بماء زمزم ثم جاء بطست من ذهب ممتلى حكمة وايمانا فافرغه في صدري ثم اطبقه ثم اخذ بيدي فعرج بي الى السماء الدنيا قال جبريل لخازن السماء افتح قال من هذا قال جبريل قال هل معك احد قال نعم معي محمد صلى الله عليه وسلم فقال ارسل اليه قال نعم فلما فتح علونا السماء الدنيا اذا رجل قاعد على يمينه اسودة وعلى يساره اسودة اذا نظر قبل يمينه ضحك واذا نظر قبل شماله بكى فقال مرحبا بالنبي الصالح والابن الصالح قلت لجبريل من هذا قال هذا ادم وهذه الاسودة عن يمينه وعن شماله نسم بنيه فاهل اليمين منهم اهل الجنة والاسودة عن شماله اهل النار فاذا نظر عن يمينه ضحك واذا نظر قبل شماله بكى حتى عرج بي الى السماء الثانية فقال لخازنها افتح فقال له خازنها مثل ما قال الاول قال انس فذكر انه وجد في السماوات ادم وادريس وموسى وعيسى وابراهيم ولم يثبت كيف منازلهم غير انه ذكر انه وجد ادم في السماء الدنيا وابراهيم في السماء السادسة قال ابن شهاب فاخبرني ابن حزم ان ابن عباس وابا حبة الانصاري كانا يقولان قال النبي صلى الله عليه وسلم ثم عرج بي حتى وصلت لمستوى اسمع فيه صريف الاقلام وقال ابن حزم وانس قال النبي صلى الله عليه وسلم ففرض الله على امتي خمسين صلاة فرجعت بذلك حتى مررت على موسى فقال ما فرض الله لك على امتك قلت فرض خمسين صلاة قال فارجع الى ربك فان امتك لا تطيق فراجعت فوضع شطرها فرجعت الى موسى فقلت وضع شطرها فقال راجع ربك فان امتك لا تطيق ذلك فرجعت فراجعت فوضع شطرها فرجعت اليه فقال ارجع الى ربك فان امتك لا تطيق ذلك فراجعته فقال هي خمس وهي خمسون لا يبدل القول لدي فرجعت الى موسى فقال راجع ربك فقلت استحييت من ربي ثم انطلق بي حتى انتهي الى سدرة المنتهى وغشيها الوان لا ادري ما هي ثم ادخلت الجنة فاذا فيها جنابذ اللولو واذا ترابها المسك متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 349 و مسلم 263 163 415 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে, (ثُمَّ جَاءَ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ مُمْتَلِئٌ حِكْمَةً وَإِيمَانًا) অর্থাৎ তারপর তিনি ঈমান ও হিকমাতে পূর্ণ একটি পেয়ালা আনলেন। এ প্রসঙ্গে শারহুন নাবাবী গ্রন্থে বলা হয়েছে, ঐ পাত্রে এমন কিছু ছিল যার মাধ্যমে ঈমান ও হিকমাতের পূর্ণতা লাভ করে এবং বৃদ্ধি সাধিত হয়। আর সেই জিনিসকেই ঈমান ও হিকমাহ্ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
(إِذَا رَجُلٌ قَاعِدٌ عَلَى يَمِينِهِ أَسْوِدَةٌ) অর্থাৎ তখন দেখি একজন ব্যক্তি, যার ডানপাশে একটি দল রয়েছে। এখানে (أَسْوِدَةٌ) শব্দের বিভিন্ন অর্থ হতে পারে। যেমন আদম সন্তান, ব্যক্তি, দল ইত্যাদি। খত্ত্বাবী এবং আরো অনেকে বলেন, এই (أَسْوِدَةٌ) শব্দ দ্বারা হাদীসে উদ্দেশ্য হলো আদম সন্তানদের আত্মা।
কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীসে উল্লেখ আছে যে, রাসূল (সা.) আদম আলায়হিস সালাম এবং তাঁর জান্নাত ও জাহান্নামী সন্তানদের প্রথম আকাশে পেলেন। অথচ তাদের থাকার কথা ছিল সিজ্জীনে অথবা সপ্তম জমিনে বা তার নিচে থাকে। আর মু'মিনদের আত্মা থাকার কথা ছিল ইল্লিয়্যিনে। তাহলে আদম আলায়হিস সালাম-সহ তাঁর সন্তানদের কিভাবে রাসূল (সা.) প্রথম আকাশে পেলেন? এর উত্তর বিভিন্নভাবে দেয়া হয়ে থাকে, যেমন কখনো কখনো আদম আলায়হিস সালাম-এর সন্তানদেরকে তার কাছে পেশ করা হয়। আর সেই পেশ করার সময়টি রাসূল (সা.)-এর আদম আলায়হিস সালাম-কে অতিক্রম করার সময়ের সাথে মিলে গিয়েছিল। তাই তিনি আদম সন্তানদের আত্মাগুলোকে তার দুইপাশে পেয়েছেন। সম্ভবত এটিও হতে পারে যে, আদম আলায়হিস সালাম-এর ডান পাশে ছিল জান্নাত এবং বাম পাশে ছিল জাহান্নাম। তাই তিনি যখন জাহান্নামবাসীদের দিকে তাকাতেন তখন কাঁদতেন। তবে প্রকৃত বিষয়ে আল্লাহই অধিক অবগত।

(وَجَدَ إِبْرَاهِيمَ فِي السَّمَاءِ السَّادِسَةِ) অর্থাৎ তিনি ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে ষষ্ঠ আকাশে পেলেন। অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে সপ্তম আকশে পেলেন। এখানে উক্ত বিষয় দুটির মধ্যে বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে।
উভয় বিষয়ের সমন্বয় সাধনে শারহুন নাবাবী গ্রন্থকার বলেন, যদি রাসূল (সা.) -এর মি'রাজ দু’বার হয়ে থাকে তাহলে তিনি ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে প্রথমবার পেয়েছিলেন সপ্তম আকাশে আর দ্বিতীয়বার পেয়েছিলেন ষষ্ঠ আকাশে। আর যদি তার মি'রাজ একবারই হয়ে থাকে তাহলে বিষয়টি এমন হতে পারে যে, রাসূল (সা.) ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে ষষ্ঠ আকাশে পেয়েছিলেন। তারপর তার সাথে ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-ও সপ্তম আকাশে গিয়েছিলেন। তবে এখানে মিরকাত প্রণেতা বলেন, 'রাসূল (সা.) ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে সপ্তম আকাশে পেয়েছিলেন এ কথাটিই অধিক গ্রহণযোগ্য। কারণ তার বর্ণনাটি হলো বেশি শক্তিশালী। তবে প্রকৃত বিষয়ে আল্লাহই অধিক অবগত। (শারহুন নাবাবী ২/২৬৩)

(صَرِيفَ الْأَقْلَامِ) অর্থাৎ কলমের খচখচে আওয়াজ। এর অর্থ সম্পর্কে ব্যাখ্যাকারদের মাঝে মতানৈক্য আছে। যেমন- খত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: (صَرِيفَ)-এর অর্থ হলো উত্তোলন যন্ত্র। কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ হলো সমান জায়গা। আবার কেউ কেউ বলেন, মালাক (ফেরেশতা) কর্তৃক আল্লাহ ফায়সালা লিখে রাখার আওয়াজ।
কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটি হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আত-এর দলীল এ বিষয়ে যে, ওয়াহী এবং সকল তাকদীরের বিষয় আল্লাহর কাছে লিপিবদ্ধ আছে। যার প্রকৃতরূপ আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।
(وَإِذَا تُرَابُهَا الْمِسْكُ) জান্নাতের মাটি মিসকে আম্বরের মতো সুগন্ধিযুক্ত। এটি হলো সবচেয়ে উত্তম সুগন্ধি। হাদীসে এসেছে, জান্নাতের সুঘ্রাণ পাঁচশত বছরের দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)