৫৭৪১

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৪১-[৩] আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন আমি আদম সন্তানদের নেতা হব। আমিই সকলের আগে কবর হতে উত্থিত হব। সকলের আগে আমিই সুপারিশ করব এবং সর্বপ্রথম আমার শাফা’আত গ্রহণ করা হবে। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَوَّلُ مَنْ يَنْشَقُّ عَنْهُ الْقَبْرُ وَأَوَّلُ شَافِعٍ وَأَوَّلُ مُشَفَّعٍ . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

رواہ مسلم (3 / 2278)، (5940) ۔
(صَحِيح)

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: انا سيد ولد ادم يوم القيامة واول من ينشق عنه القبر واول شافع واول مشفع . رواه مسلم رواہ مسلم (3 / 2278)، (5940) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: (أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ) “আমি কিয়ামত দিবসে আদম সন্তানদের সরদার”।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) হারাবী-এর বরাতে বলেন, ‘সাইয়িদ’ বা সরদার হলেন যিনি তার সম্প্রদায়ের মাঝে কল্যাণের দিক থেকে সবার উপরে থাকেন। অন্যরা বলেন, “সাইয়িদ’ হলেন, বিপদাপদে সবাই যার আশ্রয়ে যায় এবং তিনি তাদের বিপদে পাশে দাঁড়ান, তাদের কষ্ট নিজের কাঁধে নেন এবং তাদের বিপদ প্রতিহত করেন।
তবে রাসূলুল্লাহ (সা.) দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতেই মানবজাতির সরদার। তারপরও কিয়ামত দিবসে সরদার বলার কারণ হলো, কিয়ামত দিবসে তার নেতৃত্ব পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ পাবে। সেদিন কেউ তার বিরোধী এবং তার সাথে বিদ্ধেষ পোষণকারী থাকবে না। কিন্তু দুনিয়ায় অনেকেই যেমন কাফিরদের বাদশাহ ও মুশরিকদের নেতারা তার সাথে বিরোধিতা করেছেন। তাই কিয়ামত দিবসের সাথে রাসূলের সরদার হওয়ার সম্পৃক্ততা (لِمَنِ الۡمُلۡکُ الۡیَوۡمَ ؕ لِلّٰهِ الۡوَاحِدِ الۡقَهَّارِ) “আজ রাজত্ব কার? এক প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহর”- (সূরাহ্ আল গাফির ৪০ : ১৬); এই আয়াতেরই মতো। অথচ আল্লাহ তা'আলার রাজত্ব দুনিয়া আখিরাত সর্বব্যাপি।

‘উলামাগণ বলেন, “আমি আদম সন্তানদের সরদার রাসূল (সা.) -এর এ কথা অহংকারবশত ছিল না। বরং সহীহ মুসলিম ছাড়া অন্যান্য মাশহুর হাদীসে অহংকার নাকচের বিষয়টি স্পষ্ট এসেছে। হাদীসে রয়েছে, (أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ يَوْمَ ولافخر) “আমি আদম সন্তানদের সরদার, তবে এটা কোন গর্বের বিষয় নয়। তাই এটা বলার দু'টি কারণ হতে পারে:
[এক] রবের নি'আমাত প্রকাশের নির্দেশ পালন; কেননা আল্লাহ তা'আলা বলেন-
(وَ اَمَّا بِنِعۡمَۃِ رَبِّکَ فَحَدِّثۡ) “আর আপনার পালনকর্তার নি'আমাতের কথা প্রকাশ করুন”- (সূরাহ্ আয যুহা- ৯৩ : ১১)।
[দুই] এটা বর্ণনা করা তার জন্য জরুরী; যাতে উম্মাত তাকে চিনতে পারে, তাকে বিশ্বাস করতে পারে, তাঁর কথা অনুযায়ী আমল করতে পারে এবং তাঁকে তাঁর যথাযথ মর্যাদা দিতে পারে।
এ হাদীসটি নবী (সা.) সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হওয়ার প্রমাণ বহন করে। কেননা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের ‘আকীদাহ্ হলো, মানুষ মালাক (ফেরেশতা) থেকে শ্রেষ্ঠ। আর রাসূলুল্লাহ (সা.) মানবের মাঝে শ্রেষ্ঠ। অতএব রাসূল (সা.) সবার শ্রেষ্ঠ। (নাবাবী ব্যাখ্যাগ্রন্থ- ১৫/৩৭, হা. ২২৭৮)

(وَأَوَّلُ مَنْ يَنْشَقُّ عَنْهُ الْقَبْرُ) অর্থাৎ কবর থেকে যাকে সর্বপ্রথম উঠানো হবে এবং হাশরের মাঠে উপস্থিত করা সে আমি। তিরমিযীর বর্ণনায় রয়েছে-
أَنَا أَوَّلُ النَّاسِ خُرُوجًا إِذَا بُعِثُوا وَأَنَا خَطِيبُهُمْ إِذَا وَفَدُوا وَأَنَا مُبَشِّرُهُمْ إِذَا أَيِسُوا لِوَاءُ الْحَمْدِ يَوْمَئِذٍ بِيَدِي وَأَنَا أَكْرَمُ وَلَدِ آدَمَ عَلَى رَبِّي وَلاَ فَخْرَ ‏ “যেদিন লোকেদেরকে উঠানো হবে (কবর হতে কিয়ামতের মাঠে) সেদিন আমিই সর্বপ্রথম আত্মপ্রকাশকারী হব। যখন সকল মানুষ আল্লাহ তা'আলার আদালতে একত্র হবে, তখন আমি তাদের ব্যাপারে বক্তব্য উত্থাপন করব। তারা যখন নিরাশ ও হতাশাগ্রস্ত হবে তখন আমিই তাদের সুখবর প্রদানকারী হর। সেদিন প্রশংসার পতাকা আমার হাতেই থাকবে। আমার প্রতিপালকের নিকট আদম-সন্তানদের মধ্যে আমিই সবচাইতে সম্মানিত, এতে গর্বের কিছু নেই।”
(সুনানুত তিরমিযী, অধ্যায়: রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মর্যাদা, হা. ৩৬১০)

(وَأَوَّلُ شَافِعٍ وَأَوَّلُ مُشَفَّعٍ) شَفَّعٍ অর্থ: সুপারিশকারী। (مُشَفَّعٍ) অর্থ: যার সুপারিশ গৃহীত। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রথম সুপারিশকারী ব্যক্তি এবং তার সুপারিশই সর্বপ্রথম কবুল করা হবে। (সম্পাদকীয়)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)