৫২৫৭

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন

৫২৫৭-[২৭] আবূ ’আবদুর রহমান আল হুবুলী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, একদিন জনৈক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করে, আমরা কি ঐ সমস্ত গরীব মুহাজিরদের অন্তর্ভুক্ত নই? (যারা ধনীদের আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে?) তখন ’আবদুল্লাহ ইবনু আমর প্রশ্ন তাকে বললেন : আচ্ছা! তোমার স্ত্রী আছে কি? যার কাছে তুমি প্রশান্তি লাভ করো? সে বলল : হ্যা, আছে। আবদুল্লাহ আবার জিজ্ঞেস করলেন : আচ্ছা! তোমার থাকার এমন কোন ঘর আছে কি, যেখানে তুমি অবস্থান করো? সে বলল : হ্যা। তখন ’আবদুল্লাহ বললেন : তবে তো তুমি ধনীদের একজন। এবার লোকটি বলল : আমার একজন সেবকও আছে। তখন ’আবদুল্লাহ বললেন : তবে তো তুমি বাদশাহদের অন্তর্ভুক্ত। বর্ণনাকারী (আবু) আবদুর রহমান বলেন : একদিন আমি ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম, এমন সময় তিনজন লোক এসে ’আবদুল্লাহ-কে বলল : হে আবু মুহাম্মাদ! আমরা আল্লাহর কসম করে বলছি, আমরা কোন কিছুর সামর্থ্য রাখি না। আমাদের কাছে খরচপাতি নেই, আরোহণের জানোয়ারও নেই এবং অন্য কোন মাল-সামানও নেই (এমতাবস্থায় জিহাদে আমরা কিভাবে অংশগ্রহণ করতে পারি?) তখন ’আবদুল্লাহ তাদেরকে বললেন : তোমরা কি চাও? যদি তোমরা (আমার নিকট) কিছু পেতে চাও, তবে তোমরা আবার আমার কাছে এসো। (কেননা এখন আমার কাছে দেয়ার মতো কিছু নেই,) তখন আমি তোমাদেরকে তা প্রদান করব যা আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করে দেন। আর যদি তোমাদের ইচ্ছা থাকে তবে আমি তোমাদের ব্যাপারে বাদশার নিকট সুপারিশ করব। আর যদি তোমরা চাও তবে ধৈর্যধারণ করো। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয় দরিদ্র মুহাজিরীন কিয়ামতের দিন সম্পদশালীদের চল্লিশ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এতদশ্রবণে তারা বলে উঠল, আমরা ধৈর্যধারণ করব, আমরা আর কিছুই যাঞ্ছা করব না। (মুসলিম)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)

عَن أبي عبد الرَّحْمَن الحُبُليِّ قَالَ: سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرٍو وَسَأَلَهُ رَجُلٌ قَالَ: أَلَسْنَا مِنْ فُقَرَاءِ الْمُهَاجِرِينَ؟ فَقَالَ لَهُ عَبْدُ اللَّهِ: أَلَكَ امْرَأَةٌ تَأْوِي إِلَيْهَا؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: أَلَكَ مَسْكَنٌ تَسْكُنُهُ؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: فَأَنْتَ مِنَ الْأَغْنِيَاءِ. قَالَ: فَإِنَّ لِي خَادِمًا. قَالَ: فَأَنْتَ مِنَ الْمُلُوكِ. قَالَ: عَبْدُ الرَّحْمَنِ: وَجَاءَ ثَلَاثَةُ نَفَرٍ إِلَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو وَأَنَا عِنْدَهُ. فَقَالُوا: يَا أَبَا مُحَمَّد إناوالله مَا نَقْدِرُ عَلَى شَيْءٍ لَا نَفَقَةَ وَلَا دَابَّةَ وَلَا مَتَاعَ. فَقَالَ لَهُمْ: مَا شِئْتُمْ إِنْ شِئْتُمْ رَجَعْتُمْ إِلَيْنَا فَأَعْطَيْنَاكُمْ مَا يَسَّرَ اللَّهُ لَكُمْ وَإِنْ شِئْتُمْ ذَكَرْنَا أَمْرَكُمْ لِلسُّلْطَانِ وَإِنْ شِئْتُمْ صَبَرْتُمْ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ فُقَرَاءَ الْمُهَاجِرِينَ يَسْبِقُونَ الْأَغْنِيَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَى الْجَنَّةِ بِأَرْبَعِينَ خَرِيفًا» . قَالُوا: فَإِنَّا نَصْبِرُ لَا نَسْأَلُ شَيْئا . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (37 / 2979)، (7462 و 7463) ۔
(صَحِيح)

عن ابي عبد الرحمن الحبلي قال سمعت عبد الله بن عمرو وساله رجل قال السنا من فقراء المهاجرين فقال له عبد الله الك امراة تاوي اليها قال نعم قال الك مسكن تسكنه قال نعم قال فانت من الاغنياء قال فان لي خادما قال فانت من الملوك قال عبد الرحمن وجاء ثلاثة نفر الى عبد الله بن عمرو وانا عنده فقالوا يا ابا محمد اناوالله ما نقدر على شيء لا نفقة ولا دابة ولا متاع فقال لهم ما شىتم ان شىتم رجعتم الينا فاعطيناكم ما يسر الله لكم وان شىتم ذكرنا امركم للسلطان وان شىتم صبرتم فاني سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ان فقراء المهاجرين يسبقون الاغنياء يوم القيامة الى الجنة باربعين خريفا قالوا فانا نصبر لا نسال شيىا رواه مسلمرواہ مسلم 37 2979 7462 و 7463 ۔صحيح

ব্যাখ্যা : মানুষের আশ্রয়ের জন্য স্ত্রী, বসবাসের জন্য আবাসন জীবনের জন্য যথেষ্ট। যারা গরীব মুহাজির সাহাবী তাদের এ দুয়ের কোনটিই ছিল না। আবার কারো একটি থাকলেও অন্যটি ছিল না। অতএব যে ব্যক্তি এসে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ)-এর কাছে দুটো জিনিসই থাকার কথা জানালেন, ফলে তিনি তাকে ধনিক শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত বলে ঘোষণা করলেন। এটা ছিল মুহাজির সহাবীদের জীবনের পরম পাওনা। এর সাথে যদি কারো চাকর বা ক্রীতদাস থাকত তবে তো সে বাদশাহ শ্রেণির, অবশ্য এটা আপেক্ষিক বিষয় ও রূপক কথা, কিন্তু তাদের জীবনে যেন ছিল এটাই বাস্তবতা। বাদশাহ বলার এও অর্থ হতে পারে যে, সে কপর্দকহীন নয় এবং অপরের ওপর কাজের নির্দেশ জারী করতে পারে। আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) সম্ভবত এ বাক্যটি আল্লাহ তা'আলার এ বাণী থেকে গ্রহণ করেছেন : (وَ جَعَلَکُمۡ مُّلُوۡکًا) “আর তোমাদেরকে রাজ্যাধিপতি করেছেন”- (সূরাহ্ আল মায়িদাহ ৫ : ২০)। বিশ্ববিখ্যাত তাফসীরকার ইবনু জারীর (রহিমাহুল্লাহ)

ইবনু আব্বাস প্রমুখাৎ, উক্ত আয়াতের প্রেক্ষিতে বর্ণনা করেছেন: বানী ইসরাঈলের কোন ব্যক্তির যদি ঘর, স্ত্রী এবং খাদেম থাকত তবে তাকে বাদশাহ বলা হত।
হাদীসে (عَنْ عَبْدِالرَّحْمٰنِ) বলে বর্তমানে অধিকাংশ মিশকাতের সংস্করণে যে নাম রয়েছে সেটা ভুল; প্রকৃত বাক্য হবে (عَن أبي عبد الرَّحْمَن) ‘আবূ আবদুর রহমান হতে বর্ণিত সহীহ মুসলিমে এভাবেই বর্ণনা বিদ্যমান রয়েছে।

তিন ব্যক্তির অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা দীনের পথে ছিল, অর্থাৎ তারা বলছিলেন- আমাদের কাছে এমন কোন কিছু নেই যা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করব, এমন কোন সওয়ারী নেই যা দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করব এবং এমন কোন আসবাবপত্র বা সামগ্রী নেই যা আল্লাহর রাস্তায় ব্যবহার করব অথবা তা বিক্রি করে ইসলামের কাজে ব্যয় করব। আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তখন তিন ব্যক্তিকে ডেকে বললেন, তোমরা যদি এগুলো পাওয়ার আশা কর তাহলে তোমরা অন্য সময় আমার নিকট আসবে, আমি বাদশাহর নিকট বলে অথবা বায়তুল মালের খাদেমকে বলে যতটুকু সম্ভব তোমাদের জন্য মঞ্জুর করব। সেটা দিয়ে তোমরা তোমাদের ইচ্ছা পূরণ করবে। তোমরা ইচ্ছা করলে তোমাদের এই অভাব ও দারিদ্রতার উপর ধৈর্যধারণও করতে পার; কেননা ধৈর্যধারণ হলো সফলতা অর্জনকারীদের সর্বোচ্চ মাকাম এবং সম্পদ না পাওয়ার শ্রেষ্ঠ প্রশান্তি ও আনন্দ। অতঃপর তিনি তাদের রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর হাদীস শুনিয়ে দিলেন যে, গরীব মুহাজিরগণ ধনীদের চেয়ে জান্নাত গমনে চল্লিশ বছরের অগ্রগামী হবেন, এ কথা শুনে তারা সকলেই দুনিয়ার সম্পদ গ্রহণ পরিহার করে আখিরাতে জান্নাতের অগ্রগামীতাকে গ্রহণ করে নিলেন।
(মিরকাতুল মাফাতীহ; শারহুন্ নাবাবী ১৮ খণ্ড, হা, ২৯৭৯; লুম'আহ্ ৮ম খণ্ড, ৪৭৪ পৃ.)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)