৪৩৫৫

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৪৩৫৫-[৫২] আবূ রায়হানাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশটি কাজ করা থেকে নিষেধ করেছেন। যথা- ১. দাঁত চিকন করা, ২. শরীরে উল্কি লাগানো, ৩. (সৌন্দর্য বিকশিতের জন্য) মুখ পশম উঠানো, ৪. কাপড়ের আবরণ ব্যতীত দু’জন পুরুষের একই চাদরের নিচে শয়ন করা, ৫. কাপড়ের আবরণ ছাড়া দু’জন মহিলার একই চাদরে শয়ন করা, ৬. অনারবদের ন্যায় জামার নিচে রেশম ব্যবহার করা, ৭. অথবা অনারবদের ন্যায় জামার কাঁধে রেশম ব্যবহার করা, ৮. ছিনতাই করা। ৯. চিতাবাঘের চামড়ার গদির উপর সওয়ার হওয়া এবং ১০. আংটি ব্যবহার করা, তবে শাসকের জন্য তা পরিধান বৈধ। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]

الْفَصْلُ الثَّانِي

وَعَن أبي ريحانةَ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ عَشْرٍ: عَنِ الْوَشْرِ وَالْوَشْمِ وَالنَّتْفِ وَعَنْ مُكَامَعَةِ الرَّجُلِ الرَّجُلَ بِغَيْرِ شِعَارٍ وَمُكَامَعَةِ الْمَرْأَةِ الْمَرْأَةَ بِغَيْرِ شِعَارٍ وَأَنْ يَجْعَلَ الرَّجُلُ فِي أَسْفَلِ ثِيَابِهِ حَرِيرًا مِثْلَ الْأَعَاجِمِ أَوْ يجعلَ على مَنْكِبَيْه حَرِير مِثْلَ الْأَعَاجِمِ وَعَنِ النُّهْبَى وَعَنْ رُكُوبِ النُّمُورِ وَلُبُوسِ الْخَاتَمِ إِلَّا لِذِي سُلْطَانٍ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ

وعن ابي ريحانة قال نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن عشر عن الوشر والوشم والنتف وعن مكامعة الرجل الرجل بغير شعار ومكامعة المراة المراة بغير شعار وان يجعل الرجل في اسفل ثيابه حريرا مثل الاعاجم او يجعل على منكبيه حرير مثل الاعاجم وعن النهبى وعن ركوب النمور ولبوس الخاتم الا لذي سلطان رواه ابو داود والنساىي

ব্যাখ্যাঃ (الْوَشْرِ) ‘‘আল ওয়াশ্‌র’’ বলা হয় দাঁতকে ধারালো করা, দাঁতের মাথাগুলো চিকন করা যা মহিলারা বেশি করে থাকে। এরূপ করতে নিষেধ করা হয়েছে এজন্য যে, এর মধ্যে প্রতারণা রয়েছে এবং এর দ্বারা আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করা হয়। (الْوَشْمِ) ‘‘আল ওয়াশ্ম’’ বলা হয়ে সুই দ্বারা মানবদেহের চামড়া ফুটো করে রক্ত বের করা। তারপর সেই স্থানে কাজল বা অন্য কিছু দিয়ে রঙিন করা যার মাধ্যমে আল্লাহ তার দেহে যে রং দিয়ে তাকে বানিয়েছেন তা পরিবর্তন করা। এটিকে বর্তমানে উল্কি আঁকার সাথে তুলনা করা যেতে পারে। (النَّتْفِ) ‘‘আন্ নাত্ফ’’ বলতে বুঝানো হয় নারীদের চেহারায় কোন অনাকাঙিক্ষত কোন লোম থাকলে তা তুলে ফেলা অথবা দাড়ি তুলে ফেলা বা দাড়ির সাদা চুলগুলো তুলে ফেলা। অথবা বিপদাপদে অধৈর্য হয়ে চুল ছেঁড়া।

দু’জন পুরুষের মাঝে কোন আবরণ ছাড়াই এক কাপড়ের নিচে শোয়া বলতে ইবনুল ‘আরাবী বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যাদেরকে বিবাহ করা হারাম এমন দু’জন উলঙ্গ হয়ে একই কাপড়ের নিচে শোয়া। চার আঙ্গুল পরিমাণ রেশম পরার বৈধতার প্রমাণ পাওয়া যায় বিধায় এর বেশি রেশমী কাপড় পরিধান করা পুরুষদের জন্য নিষেধ। যারা অনারব তারা তাদের পোশাকের নিচে রেশমের কাপড় পরতো। সম্ভবত তারা অহংকার ও গর্ববশতঃ তাদের পোশাকের সৌন্দর্যের উপরেও রেশমী কাপড় পরতো। মুযহির বলেনঃ পোশাকের উপরে বা নিচে সকল ক্ষেত্রে পুরুষের জন্য রেশমী কাপড় পরিধান করা হারাম। আর অনারব মূর্খদের অভ্যাস ছিল তারা তাদের পোশাকের নিচে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আরামের জন্য ছোট রেশমী কাপড় পরিধান করতো। চার আঙ্গুলের বেশি পরিমাণ রেশমী কাপড় কোন ব্যাজ বা চিহ্ন হিসেবে জামার কাঁধে ব্যবহার করাও নিষেধ।

শাসক ছাড়া অন্য কারও পক্ষ আংটি পরিধান করা সম্পর্কে হাফিয ইবনু হাজার ‘আসকালানী তাঁর ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে লিখেছেন : ‘‘আবূ রায়হানা-এর এ হাদীস বর্ণনা করার পর ইমাম তাহাভী বলেন, অনেকে মত প্রকাশ করেছেন যে, শাসক ছাড়া অন্য কারও জন্য আংটি পরিধান করা মাকরূহ। অন্যদল ‘আলিম আবার তাদের এই মতের বিরোধিতা করে আংটি পরাকে বৈধ বলেছেন। এদের দলীল হচ্ছে : আনাস  থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁর আংটি খুলে ফেলে দিলেন তখন তার দেখাদেখি সাহাবীগণও তাদের আংটি খুলে ফেলে দিলেন। এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে যে ব্যক্তি শাসক বা প্রশাসক নন এমন ব্যক্তিও আংটি পরতেন। অতঃপর তিনি অনেক সাহাবী ও তাবি‘ঈর কথা উল্লেখ করলেন যারা আংটি পরিধান করতেন অথচ তারা শাসক ছিলেন না।’’ এ হাদীসে সুলতান বা শাসক বলতে এমন ব্যক্তিকেও বুঝানো হয়েছে যিনি কোন বিষয়ে ক্ষমতা রাখেন যে ক্ষমতা প্রকাশ করার জন্য সীলযুক্ত আংটি প্রয়োজন। শুধু সর্বোচচ ক্ষমতাধর যেমন রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী ইত্যাদি বুঝানো হচ্ছে না। এখানে আংটি দ্বারা এমন আংটিকে বুঝানো হয়েছে যা সীল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যদিও মাঝে মাঝে এটি এমনি এমনিও পরা হয়। কেউ যদি সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য রূপার আংটি পরে যা সীল দেয়ার কাজে ব্যবহার করা হয় না তাহলে সেই আংটি এ হাদীসের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে না। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪০৪৫)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ আবূ রায়হানাহ্ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২: পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس )