৩১৮৯

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - (স্বামী-স্ত্রীর) সহবাস

৩১৮৯-[৭] জুযামাহ্ বিনতু ওয়াহ্ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কিছু সংখ্যক লোকের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলছিলেন যে, আমি ’গীলাহ্’[1] হতে নিষেধ করতে ইচ্ছা পোষণ করেছিলাম; কিন্তু যখন পারস্য (ইরান) এবং রোমবাসীদের ব্যাপারে জানতে পারলাম যে, তারা (সন্তানের আশঙ্কায়) গীলাহ্ করে অথচ এটা তাদের কোনো প্রকার ক্ষতির কারণ নেই। অতঃপর লোকেরা তাঁকে ’আযল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এটা পরোক্ষভাবে জীবন্ত কন্যা পুঁতে দেয়া (সমাধিস্থ করা), যে সম্পর্কে কুরআন মাজীদের আয়াত আছে- ’’যখন জীবন্ত পুঁতে দেয়া কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল?’’ (সূরা আত্ তাকভীর ৮১ : ৮-৯)। (মুসলিম)[2]

بَابُ الْمُبَاشَرَةِ

وَعَن جذامة بِنْتِ وَهْبٍ قَالَتْ: حَضَرْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي أُنَاسٍ وَهُوَ يَقُولُ: «لقد هَمَمْت أَن أَنْهَى عَنِ الْغِيلَةِ فَنَظَرْتُ فِي الرُّومِ وَفَارِسَ فَإِذَا هُمْ يُغِيلُونَ أَوْلَادَهُمْ فَلَا يَضُرُّ أَوْلَادَهُمْ ذَلِكَ شَيْئًا» . ثُمَّ سَأَلُوهُ عَنِ الْعَزْلِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ذَلِكَ الوأد الْخَفي وَهِي (وَإِذا الموؤودة سُئِلت)
رَوَاهُ مُسلم

وعن جذامة بنت وهب قالت حضرت رسول الله صلى الله عليه وسلم في اناس وهو يقول لقد هممت ان انهى عن الغيلة فنظرت في الروم وفارس فاذا هم يغيلون اولادهم فلا يضر اولادهم ذلك شيىا ثم سالوه عن العزل فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم ذلك الواد الخفي وهي واذا المووودة سىلترواه مسلم

ব্যাখ্যা : জুযামাহ্ বিনতু ওয়াহ্ব হলেন ‘উক্কাশাহ্ (রাঃ)-এর বোন। جُذَامَةَ ‘জুযামাহ্’ শব্দটি দাল যোগে ‘জুদামাহ্’ পাঠ অতি বিশুদ্ধ। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো জনসমাবেশে উপস্থিত হয়ে বললেন, আমার মন যা চায় আমি غِيلَةِ ‘গীলাহ্’ করেত নিষেধ করি। غِ (গাইন) অক্ষর যের যোগে অর্থ হলো গর্ভকালে দুগ্ধপান করানো। আর যদি غَ (গাইন) অক্ষরটি যবর যোগে পাঠ করা হয় তাহলে অর্থ হয় দুগ্ধ। নিহায়াহ্ গ্রন্থে আছে غِ (গাইন) বর্ণ যের যোগে বিশেষ্য অর্থে ব্যবহার হয়, আর غَ বর্ণে যবর যোগে অর্থ হলো দুগ্ধদায়িনী স্ত্রীর সাথে সহবাস করা, অনুরূপ গর্ভাবস্থায় দুগ্ধপান করা। কেউ কেউ বলেন, غ বর্ণে যের ও যবর পাঠ করলেও অর্থ একই।

ইমাম মালিক বলেনঃ غِيلَةِ ‘গীলাহ’ হলো দুগ্ধ দানকারী স্ত্রীকে স্পর্শ করা অর্থাৎ সহবাস করা। ইমাম আস্মা‘ঈ এবং অন্যান্য ভাষাবিদগণও এ মত গ্রহণ করেছেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি রোম ও পারস্যবাসীদের প্রতি লক্ষ্য করলাম, তারা তাদের স্ত্রীদের সাথে ‘গীলাহ্’ করে থাকে, কিন্তু তাদের সন্তানদের কোনো ক্ষতি হয় না।

‘উলামাগণ বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিষেধ করতে চাওয়ার কারণ হলো দুগ্ধপোষ্য সন্তানের ক্ষতির আশংকা; কেননা চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ বলেন, গর্ভবতী মায়ের দুধ হয় রোগাক্রান্ত। সুতরাং ‘আরবেরা এটাকে কারাহাত মনে করেন। কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ ‘আরবেরা ‘গীলাহ্’ থেকে পরহেয করত, অর্থাৎ গর্ভকালে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে দুগ্ধপান থেকে বিরত রাখত। তারা মনে করত গর্ভবতী নারীর দুগ্ধ পান করলে সন্তানের ক্ষতি হয়, এটা তাদের বহুল প্রচলিত ধারণা। এজন্য নাবী তা থেকে নিষেধ করতে চেয়েছিলেন, পরে তিনি যখন দেখলেন রোম-পারস্যবাসীগণ এটা করা সত্ত্বেও তাদের সন্তানদের কোনো ক্ষতি হয় না, পরে তিনি নিষেধাজ্ঞা জারী থেকে বিরত হন।

এরপর লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ‘আযল সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন, অর্থাৎ ‘আযল বৈধ কিনা? এ প্রশ্ন সাধারণ সময়ের ব্যাপারেও হতে পারে। উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সেটা গোপন হত্যা বা জীবন্ত কবর দেয়া।

ইমাম নববী (রহঃ) বলেনঃ الْوَأدُ বলা হয় কন্যা শিশুকে জীবন্ত কবর দেয়া। জাহিলী যুগে ‘আরবেরা কন্যা সন্তানকে সম্মানহানীকর মনে করে অথবা খাদ্যদানের ভয়ে জীবন্ত কবর দিয়ে ফেলত।

আল্লাহ তা‘আলা শুক্রবৃন্দকে সৃষ্টি করেছেন মানব সৃষ্টির জন্য, ‘আযলের মাধ্যমে সেই শুক্রানু বিনষ্ট করাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবন্ত কবর দেয়ার সাথে তুলনা করেছেন। অতঃপর আল্লাহর নাবী এ আয়াতটি পাঠ করেন : ‘‘আর যখন জীবন্ত প্রোথিত শিশু কন্যাদের জিজ্ঞেস করা হবে কোন্ অপরাধে তোমাদেরকে হত্যা করা হয়েছে?’’ (সূরা আত্ তাকভীর ৮১ : ৮-৯) অর্থাৎ কিয়ামতের দিন জীবন্ত প্রোথিত কন্যা সন্তানদের জীবিত করে জিজ্ঞেস করা হবে তোমাদের পিতাগণ তোমাদের কোন্ অপরাধের কারণে জীবন্ত কবর দিয়ে হত্যা করেছিল?

ইতিপূর্বের আলোচনায় বলা হয়েছে ‘আযল মূলত বৈধ। অত্র হাদীসের ভিত্তিতেও বলা যায় না যে, ‘আযল হারাম, বরং এটা অপছন্দনীয় কাজ। এটা জীবন্ত হত্যা নয়, রূহ ধ্বংস হলো জীবন্ত হত্যা। যেখানে বীর্য নারী গর্ভে তিন চল্লিশ অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তাতে রূহ প্রবিষ্ট হয় না সেখানে তা নারী গর্ভে না দিয়ে বাহিরে নিক্ষেপ করা কিভাবে জীবন্ত হত্যা হতে পারে? ‘আযল বৈধ হওয়া সত্ত্বেও সাহাবীগণ অনেকেই এটাকে অপছন্দ করতেন। ‘উমার তার সন্তানদের ‘আযলের জন্য প্রহার করতেন। ‘উসমান -ও এটা নিষেধ করতেন। মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেন, ‘আযল হারাম হওয়ার মতটি বিশ্লেষণে দুর্বল কেননা এটা মূলতঃ রূহের ধ্বংস বা হত্যা নয়। তবে নিঃসন্দেহে এটা অপছন্দনীয় কাজ।

‘আল্লামা ইবনুল হুমাম উল্লেখ করেছন, ‘উমার ‘আলী (রাঃ) সাহাবীদ্বয় একমত হয়েছেন যে, ‘আযল জীবন্ত কবরদেয়া নয়। আবূ ইয়া‘লা প্রমুখ ‘উবায়দ ইবনু রিফা‘আহ্-এর সূত্রে তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ‘উমার, ‘আলী, যুবায়র, সা‘দ সহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আরো কতিপয় সাহাবীর এক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, তারা ‘আযল সম্পর্কে আলোচনা করলেন এবং বললেন, ‘আযল দোষণীয় নয়। তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি বলে উঠলেন অনেকেই তো মনে করে এটাতো ছোটখাটো জীবন্ত কবর দেয়া! এ কথা শুনে ‘আলী বললেন, কখনো সাতটি স্তরকাল অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত জীবন্ত কবর বলে বিবেচিত হবে না।

মানব সন্তানের ঐ সাতটি স্তর হলো : (১) মাটির নির্যাস (২) নুতফা বা বীর্য (৩) রক্তপি- (৪) [থলথলে বা চর্বিত] গোশত সদৃশ (৫) হাড় হাড্ডি ধারণ (৬) হাড়ে গোশতের আবরণ (৭) মানব আকৃতি বা রূপ অবয়ব ধারণ করা। এ কথা শুনে ‘উমার ‘আলী -কে বললেন, আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘজীবি করুন, আপনি সত্য কথাই বলেছেন।

লোকটি পুনরায় প্রশ্ন করলেন, গর্ভ সঞ্চারের পর গর্ভপাত করা কি বৈধ হবে? উত্তরে বলেন, মানব আকৃতি ধারণের পূর্বে বৈধ। ‘উলামায়ে কিরাম বলেছে একশত বিশ দিনে ভ্রূণে রূহ প্রবিষ্ট হয়, এরপর গর্ভপাত বৈধ নয়। (শারহূ মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪৪২; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح)