ফাতাওয়া ও প্রশ্নোত্তর আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল ২২ টি
ফাতাওয়া ও প্রশ্নোত্তর আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল ২২ টি
শহিদ মিনারে ফুল দেওয়ার বিধান কী? তা কি শিরক?

প্রথমত: আমাদের জানা জরুরি যে, ইসলামের দৃষ্টিতে কোন মুসলিম মৃত বরণ করলে (চাই স্বাভাবিক মৃত্যু হোক বা জিহাদের ময়দানে শাহাদত বরণ করুক অথবা অন্যায়ভাবে জুলুমের শিকার হয়ে মৃত্যু হোক) তার জন্য কী কী করণীয় তা নির্দিষ্ট করা আছে।

যেমন: তাদের জন্য দুআ করা, তাদের পক্ষ থেকে গরিব-অসহায় মানুষকে দান-সদকা করা ও জন কল্যাণ মূলক কাজ করা, সকদায়ে জারিয়া মূলক কার্যক্রম করা, তাদের উদ্দেশ্যে হজ-উমরা আদায় করা ইত্যাদি। এগুলোর মাধ্যমে তারা কবরে উপকৃত হবে ইনশাআল্লাহ।
পক্ষান্তরে তাদের স্মৃতি রক্ষার উদ্দেশ্যে তথাকথিত স্মৃতিস্তম্ভ ও শহীদ মিনার নির্মাণ করা, তাতে পুষ্পার্ঘ নিবেদন করা ও সেনাবাহিনী কর্তৃক স্যালুট জানানো, তাদের উদ্দেশ্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা, মোমবাতি জ্বালানো, মশাল জ্বালানো, শিখা অনির্বাণ বা শিখা চিরন্তন প্রজ্বলন ইত্যাদি হল অমুসলিমদের সংস্কৃতি- যা অমুসলিম সংস্কৃতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ও ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ মুসলিমরা অবলীলা ক্রমে তাদের অন্ধ অনুকরণ বশত পালন করে থাকে। ইসলামের সাথে এগেুলোর দূরতম কোন সম্পর্ক নাই। ‌
অথচ ইসলামে অমুসলিমদের অনুসরণ-অনুকরণ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ-চাই তা ইবাদতের ক্ষেত্রে হোক অথবা আচার-আচরণ, পোশাক-পরিচ্ছদ, রীতি-নীতি বা কৃষ্টি-কালচারের ক্ষেত্রে হোক।
কেননা হাদিসে এসেছে:

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,


مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ

"যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।" [সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছেদ হা/৪০৩১-হাসান সহিহ]

এছাড়াও হাদিসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিয়ামতের পূর্বে অনেক মুসলিম ইহুদি-খৃষ্টানদের রীতি-নীতি অনুসরণ করবে বলে ভবিষ্যতবাণী করেছেন-বর্তমানে যার বাস্তব প্রতিফলন আমরা স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছি।

সাহাবি আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত আছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,


«لَتَتَّبِعُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حذو القذة بالقذة حَتَّى لَوْ دخلوا جُحْرَ ضَبٍّ لَدخلتتُمُوهُ قالوا: يَا رسول الله الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى. قَالَ: فَمَنْ؟»

‘‘তোমরা অবশ্যই পূর্ববর্তী উম্মতদের অভ্যাস ও রীতি-নীতির ঠিক ঐ রকম অনুসরণ করবে, যেমন এক তীরের ফলা অন্য এক তীরের ফলার সমান হয়। অর্থাৎ তোমরা পদে পদে তাদের অনুসরণ করে চলবে। এমনকি তারা যদি ষণ্ডা (মরুভূমিতে বসবাসকারী গুই সাপের ন্যায় এক ধরণের জন্তু বিশেষ) এর গর্তে প্রবেশ করে থাকে, তাহলে তোমরাও সেখানে প্রবেশ করবে।”
সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! পূর্ববর্তী উম্মত দ্বারা আপনি কি ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বোঝাচ্ছেন?
তিনি বললেন: তবে আর কারা?
[বুখারি, অধ্যায়: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী: ”তোমরা অবশ্যই পূর্ববর্তী লোকদের রীতি-নীতির অনুসরণ করবে।” তবে বুখারির বর্ণনায় حذو القذة بالقذة - এই শব্দসমূহ নেই। তার স্থলে شبرا بشبر وذراعا بذراع শব্দগুলো রয়েছে। অর্থাৎ এক হাতের বিঘত যেমন অন্য হাতের বিঘতের সমান হয় এবং এক হাতের বাহু অন্য হাতের বাহুর সমান হয়।]

এমনকি সরাসরি মৃতদের কবরেও এসব কার্যক্রম করা দীনের মধ্যে চরম গর্হিত ও নিন্দনীয় কাজ। আর শহিদ মিনার বা স্মৃতি স্তম্ভে ফুল দেয়া সরাসরি শিরক না হলেও তা শিরকের দিকে ধাবিত হওয়ার মাধ্যম। কাফেরদের অন্ধ অনুকরণ তো বটেই। সব দিক থেকেই তা পালন করা হারাম। (আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন)


অনুরূপভাবে মৃত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে শবিনা খানি, কুলখানি, ইসালে সওয়াব, মিলাদ মাহফিল, মৃত্যু বার্ষিকী পালন, স্মরণ সভা, ওরস মাহফিল ইত্যাদি হল দীনের মধ্যে নব সংযোজিত বিদআত। আর বিদআত হল, ভ্রষ্টতা এবং জাহান্নামের পথ। ইসলামের লেবাস পরা 'দেখিত সুন্দর' প্রতিটি বেদআতই হল, শয়তানের দেখানো সুসজ্জিত পথ।

কেউ যদি বিশ্বাস করে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বীনের মধ্যে কোনও কমতি রেখে গেছেন তাহলে সে প্রকারান্তরে ইসলামকে অপূর্ণ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে রেসালাতের দায়িত্ব পালনে অবহেলাকারী' হিসেবে অভিযুক্ত করল। (নাউযুবিল্লাহ) অথচ ইসলাম পরিপূর্ণ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্ণাঙ্গভাবে তা উম্মতের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। সুতরাং তাতে সামান্যতম সংযোজন ও বিয়োজনের কোনও সুযোগ নাই।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই হওয়া সাল্লাম দ্বীনের ভিতর নতুন নতুন বিদআত তৈরি করার ব্যাপারে কঠিন ভাবে সতর্ক করে গেছেন। তিনি বলেন,


وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلالَةٌ

“দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্ট বিষয়াদি থেকে সাবধান! কারণ প্রতিটি নতুন আবিষ্কৃত বিষয়ই গোমরাহি। [মুসতাদরাক, কিতাবুল ইলম, আলবানি রা. হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। দেখুন: সিলসিলা সাহীহা (সহিহ হাদিস সিরিজ) হাদিস নম্বর: ২৭৩৫]
তিনি বিভিন্ন সময় বক্তৃতা দেয়ার শুরুতে বলতেন,


أَمَّا بَعْدُ: فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ وَخَيْرُ الْهُدَى هُدَى مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ

“অতঃপর,সর্বোত্তম বাণী হল আল্লাহর কিতাব। আর সর্বোত্তম নির্দেশনা হচ্ছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশনা। সব চেয়ে নিকৃষ্ট জিনিস হল দ্বীনের মধ্যে নতুন আবিষ্কৃত বিষয়াদি। আর প্রতিটি নতুন বিষয়ই ভ্রষ্টতা। [সহীহ মুসলিম, অনুচ্ছেদ: নামায এবং খুতবা সংক্ষিপ্ত করা।]

প্রশ্নোত্তরের সার কথা হল, শহিদ মিনারে ফুল দেয়া সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অমুসলিমদের সাদৃশ্য অবলম্বন ও তাদের অন্ধ অনুকরণের কারণে হারাম। কোনও মুসলিমের জন্য কথিত শহিদদের বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা এবং এর সাথে সম্পৃক্ত কোনও কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করা জায়েজ নাই। কেউ অজ্ঞতা বশত: এমনটি করে থাকলে তার উচিৎ, অনতিবিলম্বে আল্লাহর নিকট তওবা করা। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুল কারী।

আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরণের কু-সংস্কৃতি, অমুসলিমদের অন্ধ অনুকরণ এবং ইসলামের নামে সব ধরণের বিদআতি কার্যক্রম থেকে হেফাজত করুন"। আমিন।

ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে সকল প্রকার অনুষ্ঠান করা হারাম – সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের ফতোয়া

সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদে বিশ্লেষণের পর এই মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, কুরআন-সুন্নাহর স্পষ্ট প্রমাণাদি দ্বারা এ কথা অকাট্য ভাবে প্রমাণিত যে, ইসলামে ঈদ বা উৎসবের দিন মাত্র দুটি। সালাফে সালেহীনগণও এ বিষয়ে একমত হয়েছেন। ইসলামে স্বীকৃত ঈদ দুটির একটি হল ঈদুল ফিতর, অপরটি হল ঈদুল আজহা বা কুরবানির ঈদ।

উল্লিখিত ঈদ দুটি ব্যতীত যত ঈদ বা উৎসব আছে, হোক না তা কোন ব্যক্তির সাথে সম্পৃক্ত বা কোন গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত বা কোন ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত তা বিদআত। মুসলমানদের তা পালন করা বা পালন করতে বলা বৈধ নয় এবং এ উপলক্ষে আনন্দ প্রকাশ করা ও এ ব্যাপারে কিছু দিয়ে সাহায্য করাও নিষেধ। কেননা এ ধরণের কাজ আল্লাহ তা’আলার সীমা লঙ্ঘন বৈ অন্য কিছু হবে না। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করবে সে নিজের উপর অত্যাচার করবে। এ ধরণের কালচার বিধর্মীদের অনুসরণের কল্পে গ্রহণ করা হলে অপরাধ আরও মারাত্মক হবে। কারণ এর মাধ্যমে তাদের সদৃশ্যতা গ্রহণ করা এবং তাদেরকে এক ধরণের বন্ধু বানানো হয়। অথচ আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে এ থেকে বারণ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,


من تشبه بقوم فهو منهم

“যে ব্যক্তি কোনও সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্যতা অবলম্বন করল সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য। ভালোবাসা দিবস পালন করাও এ নিষেধের অন্তর্ভুক্ত। কেননা এটি খৃষ্টানদের উৎসব। যে মুসলমান আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে তার জন্য এ কাজ করা বা এই দিনে কাউকে ফুল বা অন্যকোনো উপহার দেয়া বৈধ নয়। বরং তার কর্তব্য হল আল্লাহ এবং তার রাসূলের হুকুম পালন করা এবং আল্লাহর শাস্তি ও গযব আসে এমন কাজ থেকে নিজে দূরে থাকা ও অন্যদের দূরে রাখা।
অতএব এ দিবসকে কেন্দ্র করে পানাহার করা, ক্রয়-বিক্রয় করা, কোন কিছু প্রস্তুত করা বা উপঢৌকন দেয়া, চিঠি-পত্র চালাচালি করা ও প্রচার-পত্র বিলি করা অবৈধ। এ সমস্ত কাজের মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানি করা হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন,


وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَاب

“সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না।” [সূরা মায়িদাহ: ২]


সৌদি আরবের গবেষণা ও ফতোয়া প্রদান বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দ:

১. চেয়ারম্যান: আব্দুল আযিয বিন আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আলে শেখ
২. সদস্য: সালেহ বিন ফাওজান আল-ফাওজান
৩. সদস্য: আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল-গুদাইয়ান
৪. সদস্য: বকর বিন আব্দুল্লাহ আবু জায়েদ
[ফতোয়া নং ২১২০৩ তারিখ: ২৩-১১- ১৪২০ হি.]

মিরাজ দিবস কিংবা শবে মিরাজ উদযাপন করা রজব মাসের অন্যতম বিদআত। জাহেলরা এই বিদআতকে ইসলামের উপর চাপিয়ে দিয়ে প্রতি বছর তা পালন করে যাচ্ছে! এরা রজব মাসের সাতাইশ তারিখকে শবে মিরাজ পালনের জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছে। এ উপলক্ষে এরা একটি নয় একাধিক বিদআত তৈরি করেছে। যেমন:

- শবে মিরাজ উপলক্ষে মসজিদে মসজিদে একত্রিত হওয়া।
- মসজিদে কিংবা মসজিদের মিনারে মোমবাতি-আগরবাতি জ্বালানো বা আলোকসজ্জা করা।
- এ উপলক্ষে অর্থ অপচয় করা।
-  কুরআন তিলাওয়াত বা জিকিরের জন্য একত্রিত হওয়া।
-  'মিরাজ দিবস' উপলক্ষে মসজিদে বা বাইরে সভা-সেমিনার আয়োজন করে তাতে মিরাজের ঘটনা বয়ান করা ইত্যাদি।
এগুলো সবই গোমরাহি এবং বাতিল কর্মকাণ্ড। এ প্রসঙ্গে কুরআন-সুন্নাহতে ন্যূনতম কিছু বর্ণিত হয়নি। তবে এভাবে দিবস পালন না করে যে কোন সময় মিরাজের ঘটনা বা শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করা দোষণীয় নয়।

ক) কোন রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইসরা ও মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল?
যে রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইসরা ও মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল সেটি নির্ধারণের ক্ষেত্রে পূর্ব যুগ থেকেই ওলামাগণের মাঝে মত পার্থক্য রয়েছে। অর্থাৎ এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোন হাদীস না থাকায় আলেমগণ বিভিন্ন জন বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন।

▪ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, মিরাজের সময় নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।

কেউ বলেছেন, নবুওয়তের আগে। কিন্তু এটা একটি অপ্রচলিত মত। তবে যদি উদ্দেশ্য হয়, যে সেটা স্বপ্ন মারফত হয়েছিল সেটা ভিন্ন কথা।
অধিকাংশ আলেমগণের মত হল, তা হয়েছিল নবুওয়তের পরে। তবে নবুওয়তের পরে কখন সেটা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।

কেউ বলেছেন: হিজরতের এক বছর আগে। ইবনে সা’দ প্রমুখ এ মতের পক্ষে। ইমাম নওবী রহ. এই মতটির পক্ষে জোর দিয়ে বলেছেন। তবে ইবনে হাজাম এর পক্ষে আরও শক্ত অবস্থান নিয়ে বলেন, এটাই সর্ব সম্মত মত। এই মতের আলোকে বলতে হয় মিরাজ হয়েছিল রবিউল আওয়াল মাসে।
কিন্তু তার কথা অগ্রহণযোগ্য। কারণ, এটা সর্ব সম্মত মত নয়। বরং এক্ষেত্রে প্রচুর মতবিরোধ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিশটির অধিক মত পাওয়া যায়।

- ইবনুল জাওযী বলেন, হিজরতের আট মাস আগে মিরাজ হয়েছিল। এ মতানুসারে সেটা ছিল রজব মাসে।
- কেউ বলেন, হিজরতের ছয় মাস আগে। এ মত অনুযায়ী সেটা ছিল রমাযানে। এ পক্ষে মত দেন আবুর রাবী বিন সালেম।
- আরেকটি মত হল, হিজরতের এগার মাস আগে। এ পক্ষে দৃঢ়তার সাথে মত ব্যক্ত করেন, ইবরাহীম আল হারবী। তিনি বলেন, হিজরতের এক বছর আগে রবিউস সানীতে মিরাজ সংঘটিত হয়।
- কারো মতে, হিজরতের এক বছর তিন মাস আগে। ইবনে ফারিস এ মত পোষণ করেন।
এভাবে আরও অনেক মতামত পাওয়া যায়। কোন কোন মতে রবিউল আওয়াল মাসে, কোন মতে শাওয়াল মাসে, কোন মতে রমাযান মাসে, কোন মতে রজব মাসে।

▪ আর তাই শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন,

"ইবনে রজব বলেন, রজব মাসে বড় বড় ঘটনা ঘটেছে মর্মে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায় কিন্তু কোনটির পক্ষেই সহীহ দলীল নাই। বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজবের প্রথম রাতে ভূমিষ্ঠ হয়েছেন, সাতাইশ বা পঁচিশ তারিখে নবুওয়ত প্রাপ্ত হয়েছেন অথচ এ সব ব্যাপারে কোন সহীহ দলীল পাওয়া যায় না।" [লাতাইফুল মায়ারেফ, ১৬৮ পৃষ্ঠা]
  ▪ আবু শামাহ বলেন, গল্পকারেরা বলে থাকে যে, ইসরা ও মিরাজের ঘটনা ঘটেছিল রজব মাসে। কিন্তু ইলমে জারহ ওয়াত তাদীল সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ আলেমগণের মতে এটা ডাহা মিথ্যা। (আল বায়িস: ১৭১)

খ) শবে মিরাজ পালন করার বিধান:
সালফে সালেহীনগণ এ মর্মে একমত যে, ইসলামী শরীয়তে অনুমোদিত দিন ছাড়া অন্য কোন দিবস উদযাপন করা বা আনন্দ-উৎসব পালন করা বিদআত। কারণ, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,


( من أحدث في ديننا ما ليس منه فهو رد)

“যে ব্যক্তি দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন নতুন জিনিষ চালু করল তা পরিত্যাজ্য। [বুখারী, অধ্যায়: সন্ধি-চুক্তি।]
আর সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে:


( من عمل عملاً ليس عليه أمرنا فهو رد )

“যে ব্যক্তি এমন আমল করল যার ব্যাপারে আমার নির্দেশ নাই তা প্রত্যাখ্যাত। [মুসলিম, অধ্যায়: বিচার-ফয়সালা]
সুতরাং মিরাজ দিবস অথবা শবে মিরাজ পালন করা দ্বীনের মধ্যে সৃষ্ট বিদআতের অন্তর্ভুক্ত সাহাবীগণ, তাবেঈনগণ বা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণকারী সালফে সালেহীনগণ তা পালন করেন নি। অথচ সকল ভাল কাজে তারা ছিলেন আমাদের চেয়ে অনেক বেশি অগ্রগামী।


▪ ইবনুল কাইয়েম জাওযিয়া রহ. বলেন,
ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, পূর্ববর্তী যুগে এমন কোন মুসলমান পাওয়া যাবে না যে শবে মিরাজকে অন্য কোন রাতের উপর মর্যাদা দিয়েছে। বিশেষ করে শবে কদরের চেয়ে উত্তম মনে করেছে এমন কেউ ছিল না। সাহাবায়ে কেরাম এবং তাদের একনিষ্ঠ অনুগামী তাবেঈনগণ এ রাতকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোন কিছু করতেন না এমনকি তা আলাদাভাবে স্মরণও করতেন না। যার কারণে জানাও যায় না যে, সে রাতটি কোনটি।
নিঃসন্দেহে ইসরা ও মিরাজ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার প্রমাণ বহন করে। কিন্তু এজন্য এর মিরাজের স্থান-কালকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোন ইবাদত করার বৈধ নয়। এমনকি যে হেরা পর্বতে ওহী নাযিলের সূচনা হয়েছিল এবং নবুওয়তের আগে সেখানে তিনি নিয়মিত যেতেন নবুওয়ত লাভের পর মক্কায় অবস্থান কালে তিনি কিংবা তাঁর কোন সাহাবী সেখানে কোন দিন যান নি। তারা ওহী নাজিলের দিনকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোন ইবাদত-বন্দেগী করেন নি বা সেই স্থান বা দিন উপলক্ষে বিশেষ কিছুই করেন নি।
যারা এ জাতীয় দিন বা সময়ে বিশেষ কিছু ইবাদত করতে চায় তারা ঐ আহলে কিতাবদের মত যারা ঈসা আলাইহিস সালাম এর জন্ম দিবস (Chisthomas) বা তাদের দীক্ষাদান অনুষ্ঠান (Baptism) পালন ইত্যাদি পালন করে।

উমর ইবনুল খাত্তাব রা. দেখলেন, কিছু লোক একটা জায়গায় নামাজ পড়ার জন্য হুড়াহুড়ি করছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কী? তারা বলল, এখানে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজ পড়েছিলেন। তিনি বললেন, তোমরা কি তোমাদের নবীদের স্মৃতি স্থলগুলোকে সাজদার স্থান বানাতে চাও? তোমাদের পূর্ববর্তী জমানার লোকেরা এ সব করতে গিয়েই ধ্বংস হয়ে গেছে। এখানে এসে যদি তোমাদের কারো নামাযের সময় হয় তবে সে যেন নামাজ পড়ে অন্যথায় সামনে অগ্রসর হয়। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, ২য় খণ্ড, ৩৭৬, ৩৭৭]


▪ ইবনুল হাজ্জ বলেন,
“রজব মাসে যে সকল বিদআত আবিষ্কৃত হয়েছে সবগুলোর মধ্যে সাতাইশ তারিখের লাইলাতুল মিরাজের রাত অন্যতম।”[আল মাদখাল, ১ম খণ্ড, ২৯৪পৃষ্ঠা]
পরিশেষে বলব, যেহেতু রজব মাসে নফল নামায, রোযা করা, মসজিদ, ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট দোকান-পাট ইত্যাদি সাজানো, সেগুলোকে আলোক সজ্জা করা কিংবা ছাব্বিশ তারিখের দিবাগত রাত তথা সাতাইশে রজবকে শবে মিরাজ নির্ধারণ করে তাতে রাত জেগে ইবাদত করার ব্যাপারে কোন গ্রহণযোগ্য প্রমাণ নাই। তাই আমাদের কর্তব্য হবে সেগুলো থেকে দূরে থাকা। অন্যথায় আমরা বিদআত করার অপরাধে আল্লাহ তায়ালার দরবারে গুনাহগার হিসেবে বিবেচিত হব। অবশ্য কোন ব্যক্তি যদি প্রতি মাসে কিছু নফল রোযা রাখে সে এমাসেও সেই ধারাবাহিকতা অনুযায়ী এ মাসে রোযা রাখতে পারে, শেষ রাতে উঠে যদি নফল নামাযের অভ্যাস থাকে তবে তবে এ মাসের রাতগুলিতেও নামাজ পড়তে পারে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সকল অবস্থায় তাওহীদ ও সুন্নাহর উপর আমল করার তাওফিক দান করুন এবং শিরক ও বিদয়াত থেকে হেফাজত করুন। আমীন।


উৎস: আল বিদা' আল হাওলিয়াহ
লেখক: শাইখ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আযীয আত তুওয়াইজিরী

চোখের পাতা লাফানো: শারীরিক সমস্যা নাকি শুভ-অশুভের আলামত? প্রতিকার কী?

মাঝেমধ্যেই আমাদের চোখের পাতা লাফায় বা চোখ নাচে। এ ক্ষেত্রে কেউ মনে করে, চোখের পাতা লাফানো মানেই সর্বনাশ আবার কেউ মনে করে ভালো কিছুর পূর্বাভাস। অনেকের মতে, বাম চোখের পাতা লাফালে কোনও না কোনও বিপদ আসন্ন। এমনটা হলে বাড়ির লোকজন যথেষ্ট দুশ্চিন্তায় থাকেন।
আবার কেউ মনে করে, চোখ কাঁপলে তার শুভ-অশুভ ইঙ্গিত নির্ভর করে ব্যক্তির উপর। যদি মহিলাদের ডান চোখ কাঁপে, তবে তা অশুভ বলে ধরা হয় আর পুরুষদের ক্ষেত্রে ডান চোখ কাঁপার অর্থ তার মনের ইচ্ছে পূরণ হওয়ার সময় এসেছে। চোখের পাতা লাফানো নিয়ে এ রকম নানা বিশ্বাস সমাজে প্রচলিত আছে। এ সব বিশ্বাসের কারণ হল, জ্যোতিষ শাস্ত্রে এ জাতীয় ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।

এখন আমরা জানব, এই চোখের পাতা লাফানো কি কোনও শারীরিক সমস্যা নাকি শুভ-অশুভের আলামত?
প্রকৃত বিচারে, চোখের পাতা লাফানোকে অশুভ বা শুভ আলামত মনে করা একটি ভ্রান্ত কুসংস্কার ছাড়া অন্য কিছু নয়। ডান কিংবা বাঁ কোনও চোখ লাফানোর সঙ্গেই শুভ-অশুভ বা কল্যাণ-অকল্যাণের কোনও সম্পর্ক নেই।
এটি ইসলামের দৃষ্টিতে যেমন ভ্রান্ত বিশ্বাস তেমনি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার আলোকেও ভিত্তিহীন।

  •  চোখের পাতা কেন লাফায়?

বিশেষজ্ঞদের মতে, মাঝেমধ্যে মানুষের চোখের পাতা লাফায়। এটা কিছু কারণে ঘটে থাকে। যেমন: চোখের উপর অতিরিক্ত চাপ, (একটানা দীর্ঘক্ষণ মোবাইল, টিভি বা কম্পিউটারের দিকে গভীর মনোযোগ সহকারে তাকিয়ে থাকা ইত্যাদি কারণে) ঘুম কম হওয়া,‌ অ্যালার্জি ইত্যাদি। বাতাসের ধুলাবালি, ময়লা, রাসায়নিক পদার্থ প্রভৃতির সংস্পর্শে আসার কারণে চোখ লাফাতে পারে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহনুর শারমিন বলেন, “চোখের কোনও পেশির হঠাৎ নড়ে ওঠাকেই আমরা চোখ লাফানো বলে থাকি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাধারণ কিছু শারীরবৃত্তীয় কারণেই চোখ লাফানোর মতো অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়ে থাকে। চোখের কিছু সাধারণ রোগবালাইয়েও চোখ লাফাতে পারে। কিছু স্নায়বিক সমস্যাতেও চোখ লাফাতে পারে, তবে সে ক্ষেত্রে রোগের অন্যান্য উপসর্গও দেখা দেয়। আদতে ডান কিংবা বাঁ কোনও চোখ লাফানোর সঙ্গেই শুভ-অশুভ বা কল্যাণ-অকল্যাণের কোনও সম্পর্ক নেই।” [প্রথম আলো]
এটিকে কল্যাণ-অকল্যাণ বা শুভ-অশুভর ইঙ্গিত বাহী হিসেবে মনে করা হিন্দুদের মধ্যে বেশি প্রচলিত। কোনও মুসলিমের জন্য এমন কুসংস্কারে বিশ্বাস করা জায়েজ নয়।কেননা:
 

  • কুলক্ষণে বিশ্বাস করার বিধান:

ইসলামের দৃষ্টিতে কল্যাণ-অকল্যাণ একমাত্র আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন:
মহান আল্লাহ বলেন,


إِن يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ ۖ وَإِن يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَادَّ لِفَضْلِهِ ۚ يُصِيبُ بِهِ مَن يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ

“আর আল্লাহ যদি তোমার উপর কোন কষ্ট আরোপ করেন তাহলে কেউ নেই তা খণ্ডাবার মত তাঁকে ছাড়া। পক্ষান্তরে যদি তিনি কিছু কল্যাণ দান করেন, তবে তার অনুগ্রহকে প্রতিহত করার মতও কেউ নেই। তিনি যার প্রতি অনুগ্রহ দান করতে চান স্বীয় বান্দাদের মধ্যে তাকেই দান করেন।” [সূরা ইউনুস: ১০৭]

ইসলামে কুলক্ষণের বিশ্বাস করা শিরক:
- আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,


لا عَدْوَى وَلا طِيَرَةَ وَلا هَامَةَ وَلا صَفَرَ

“রোগ সংক্রমণ, কুলক্ষণ, পেঁচা এবং সফর মাস বলতে কিছু নাই।” [সহীহু বুখারী, হা/৫৭০৭]
- আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,


 الطِّيَرَةُ شِرْكٌ الطِّيَرَةُ شِرْكٌ ثَلاَثًا وَمَا مِنَّا إِلاَّ وَلَكِنَّ اللهَ يُذْهِبُهُ بِالتَّوَكُّلِ

“কোনও কিছুকে অশুভ লক্ষণ বলে মনে করা শিরক। কোনও কিছুকে অশুভ লক্ষণ বলে মনে করা শিরক। এ কথা তিনি তিন বার বললেন। কিন্তু আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার মনে কু ধারণা জন্মে না। তবে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা তা (আমাদের মন থেকে) দূর করে দেন।” [আহমদ, ১/৩৮৯, ৪৪০, আবু দাউদ ৩৯১২, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান, হাকেম প্রমুখ। সনদ সহিহ-সিলসিলাহ সহীহাহ, ৪৩০]
- ইমরান বিন হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,


لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَطَيَّرَ، أَوْ تُطُيِّرَ لَهُ أَوْ تَكَهَّنَ، أَوْ تُكُهِّنَ لَهُ أَوْ سَحَرَ، أَوْ سُحِرَ لَهُ

“যে ব্যক্তি নিজে কুলক্ষণে বিশ্বাস করে ও যার কারণে অন্যের মাঝে কুলক্ষণের প্রতি বিশ্বাসের প্রবণতা সৃষ্টি হয় এবং যে ব্যক্তি ভাগ্য গণনা করে ও যার জন্য ভাগ্য গণনা করা হয় (বর্ণনাকারী মনে করেন যে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সম্পর্কেও বলেছিলেন) এবং যে জাদু করে ও যার কারণে জাদু করা হয় সেই ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়।” [তাবারানী, সিলসিলা সহীহাহ, হা/২১৯৫।]
- আব্দুল্লাহ বিন আমর বর্ণিত হাদিসে এসেছে। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা বললেন, কুলক্ষণ যে ব্যক্তিকে কোন কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে, নিশ্চয়ই সে শিরক করে। সহাবিগণ আরজ করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ, উহার কাফফারা কী হবে?
তিনি বললেন, ঐ ব্যক্তি বলবে,


اَللَّهُمَّ لاَ خَيْرَ إِلاَّ خَيْرُكَ وَلاَ طَيْرَ إِلاَّ طَيْرُكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা লা খায়রা ইল্লা খায়রুকা ওয়ালা ত্বায়রা ইল্লা ত্বায়রুকা ওয়ালা ইলা-হা গায়রুকা।
“হে আল্লাহ! আপনার কল্যাণ ছাড়া কোন কল্যাণ নেই। আপনার সৃষ্ট কুলক্ষণ ছাড়া কোন কুলক্ষণ নেই। আর আপনি ছাড়া কোন (হক) মাবুদও নেই।” [আহমদ, হা/৭০৪৫; সিলসিলা সহীহাহ হা/১০৬৫]
- ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,


يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِي سَبْعُونَ أَلْفًا بِغَيْرِ حِسَابٍ هُمْ الَّذِينَ لاَ يَسْتَرْقُونَ وَلاَ يَتَطَيَّرُونَ وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ

“আমার উম্মতের সত্তর হাজার লোক বিনা হিসেবেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা হবে এমন লোক, যারা শরিয়তে নিষিদ্ধ ঝাড়ফুঁকের আশ্রয় নেয় না, কোনও বস্তুর শুভ-অশুভ মানে না। একমাত্র প্রতিপালকের ওপরই ভরসা রাখে।” [বুখারি, অধ্যায়: ৮১/ সদয় হওয়া, পরিচ্ছেদ: ৮১/২১. “যে কেউ আল্লাহর উপর ভরসা করে তবে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।” [সূরা তালাক ৬৫/৩]

  • প্রতিকার:

চোখের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়লে কমানোর ব্যবস্থা করুন। মুঠোফোন, টেলিভিশন এবং অন্যান্য ডিজিটাল পর্দায় সময় কম ব্যয় করুন। কম আলোতে চোখের কাজ করবেন না। মানসিক চাপ কমাতে চেষ্টা করুন। চা-কফির পরিমাণও কমিয়ে দিন। দূষিত বাতাসের কারণে সমস্যা হচ্ছে বলে মনে হলে রোদ-চশমা ব্যবহার করতে পারেন। ঘুম কম হলে পর্যাপ্ত ঘুমান। চোখকে বিশ্রাম দিন।
চোখের পাতা লাফালে প্রাথমিকভাবে বাড়িয়ে দিন পানি খাওয়ার পরিমাণ। নিশ্চিত করুন ৮ ঘণ্টার গভীর ঘুমের। ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিনের ঘাটতি ও চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খেতে পারেন ডাব, দুধ, ডিম, বাদাম ও মৌসুমি ফলমূল।

  • কখন যাবেন চিকিৎসকের কাছে:

ডাক্তারি পরিভাষায় চোখের পাতা লাফানোকে 'মায়োকেমিয়া' (Myokemia) বলা হয়। চিকিৎসকদের মতে, দিনে দু বার ঘটা স্বাভাবিক। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত হলে চিকিৎসা করানো দরকার। চোখ ছাড়া শরীরের অন্য কোনও অংশের পেশি লাফাচ্ছে মনে হলে কিংবা কোনও অংশ দুর্বল হয়ে পড়ছে মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চোখ লাফানো ছাড়া চোখে ব্যথা, লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানি বা চোখের অন্য কোনও উপসর্গ দেখা দিলে চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন।
তা ছাড়া জেনে রাখা ভালো যে, পুষ্টির ভারসাম্যের অভাবে চোখ কাঁপা শুরু করলে চিকিৎসকরা ধরে নেন, শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি রয়েছে। যে কারণে সঠিক ডায়েট প্ল্যান আর ওষুধ এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যা একজন চিকিৎসক ছাড়া মোটেও সম্ভব নয়।
যদি অ্যালার্জির কারণে চোখ কাঁপা সমস্যার শুরু হয় তবে আপনার চোখের পানির সঙ্গে হিস্টামিন নির্গত হচ্ছে বলে ধরে নেয়া হয়, যা সঠিক সময়ে রোগী চিকিৎসা না নিলে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। [প্রথম আলো, সময় নিউজ ইত্যাদি]

বিকাশ ​বিষয়ক একগুচ্ছ ​ইসলামি প্রশ্নোত্তর​

ক. বিকাশ বয়কট ও ব্যবহার প্রসঙ্গ:

প্রশ্ন-১: হয়ত অবগত আছেন যে, ট্র্যান্স জেন্ডার নিয়ে প্রতিবাদ করায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ মাহতাব স্যারকে চাকরি চ্যুত করা হয়েছে। আমাদের মোটামুটি পরিসরের একটা সদকা ফান্ড আছে। খাবার বিতরণ, এতিমদের নিয়ে কাজ করা এবং অন্যান্য দরিদ্র-অসহায়দের নিয়ে কাজ করি এই ফান্ড থেকে।
ফান্ডে অনেক প্র্যাক্টিসিং নন প্র্যাক্টিসিং মুসলিম দান করেন। সবাই হয়ত বিকাশ বয়কটের বিষয়টা আমলে নিবে না। ফলে ফান্ডে টাকা আসার পরিমাণ কমে যেতে পারে। এমতাবস্থায় আমাদের করণীয় কী বুঝতে পারছি না। পার্সনালি বয়কট করেছি। কিন্তু ফান্ডের ক্ষেত্রেও বয়কট করব কিনা সে বিষয়ে আপনার থেকে উত্তর আশা করছি।

উত্তর:
বিকল্প পন্থা থাকলে তাই ব্যবহার করা উচিত। অন্যথায় প্রয়োজনে বিকাশ ব্যবহার করা যাবে ইনশাআল্লাহ। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্মিলিতভাবে ব্র্যাক এবং বিকাশ সহ ব্র্যাকের সকল অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বয়কট করা উচিত। কারণ ট্রান্সজেন্ডারের মত বিকৃত এবং শরিয়ত বিরোধী মতবাদের বিরুদ্ধে ব্যাপারে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়-এর উক্ত শিক্ষক এক সেমিনারে ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ক পাঠ্যপুস্তক থেকে দুটি পৃষ্ঠা ছিঁড়ে প্রতিবাদ করায় তাকে চাকরিচ্যুত করেছে। বিষয়টি ধৃষ্টতাপূর্ণ এবং উদ্বেগজনক। (যদিও কর্তৃপক্ষ চাকরিচ্যুত করার ভিন্ন কারণ দেখিয়েছে)।


প্রশ্ন-২: বিকাশ তো সবাই বয়কট করতে বলছে। তো বিকাশ কি বন্ধ করে দিতে হবে? বন্ধ না করলে কি গুনাহ হবে?


উত্তর:
প্রয়োজনে বিকাশ ব্যবহার করলে গুনাহ হবে না। তবে বিকল্প থাকলে বিকাশ ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ তা ব্র্যাক সুদি ব্যাংক-এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া ব্র্যাক ট্র্যান্সজেন্ডার নামক নিকৃষ্ট মতবাদের সমর্থক-যা প্রমাণিত হয়েছে, সম্প্রতি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়-এর এক শিক্ষক এ বিষয়ে বই ছিঁড়ে প্রতিবাদ করায় তাকে বহিষ্কার করার মাধ্যমে।


খ. বিকাশ থেকে টাকা উঠানোর পর উক্ত টাকা পুনরায় একাউন্টে জমা হয়েছে

প্রশ্ন-৩: একদিন বোন তার বিকাশ থেকে টাকা উঠানোর পর আবার দেখে যে পুনরায় সেই টাকাগুলোই যত টাকা উঠানো হয়েছে সেই টাকাগুলো তার বিকাশে পুনরায় ফিরে এসেছে। তখন তিনি দোকানদারকে বললে দোকানদার বলে এই টাকাগুলো তার না। এ অবস্থায় দ্বীনী বোনের প্রশ্ন, তিনি এই টাকাগুলা উঠিয়ে কী করবেন? তাছাড়া তিনিও অনেকদিন যাবত কিছু ঋণগ্রস্ত অবস্থায় আছেন। এখন তিনি কি টাকাগুলো ঋণ পরিশোধ করবেন না কাউকে দান করে দিবেন?

উত্তর:
বিকাশ একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলনের পরেও পুনরায় উক্ত টাকা ফিরে আসা এটা হয়তো বিকাশের কোন টেকনিক্যাল ভুলের কারণে হতে পারে। এইজন্যে প্রথমত করণীয় হল, বিকাশ কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে এই সমস্যার কথা জানানো এবং তাদের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা।
কিন্তু তারা কোন সমাধান দিতে না পারলে আপনি উক্ত টাকা ক্যাশ আউট করে নিজে ব্যবহার করতে পারেন। কেননা আপনার পক্ষ থেকে কোন ধরনের দুর্নীতি ও অসৎ  কলাকৌশল ব্যতিরেকে এই টাকা আপনার একাউন্টে জমা হয়েছে এবং আপনি নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা জানিয়েছেনও। কিন্তু তারা তার কোন সমাধান দিতে পারেনি। অতএব আপনার জন্য তা ব্যবহার করা বৈধ, অথবা চাইলে কোন মাদরাসা, মসজিদ, জনকল্যাণ খাত বা গরিব মানুষকে দান করে দিতে পারেন। তবে বিকাশ কর্তৃপক্ষ থেকে যদি পরবর্তীতে এর কোন সমাধান আসে তাহলে উক্ত টাকা ফেরত দিতে হবে বা তারা কেটে নেবে তখন আপনার আপত্তি করার সুযোগ থাকবে না।


গ. বিকাশের ক্যাশব্যাক কি সুদের অন্তর্ভূক্ত?


প্রশ্ন-৪: ক্যাশ ব্যাক-এ যে টাকা টা সেটা কি সুদের অন্তর্ভুক্ত? এটা খরচ করা জায়েজ হবে?

উত্তর:
বিকাশ এবং তাদের পার্টনার (যারা বিকাশের সাথে পার্টনারশিপে চুক্তিবদ্ধ) বিভিন্ন ব্র্যান্ড, দোকান বা প্রতিষ্ঠানে বিকাশের মাধ্যমে পে করা হলে তারা তৎক্ষণাৎ নির্ধারিত মূল্য থেকে কিছু টাকা ফেরত দেয়। এটাই ক্যাশ ব্যাক।
যেমন: আপনি যদি বিকাশের সাথে চুক্তিবদ্ধ কোন দোকান বা প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০০ টাকার পণ্য ক্রয় করেন এবং সেই টাকাটা বিকাশের মাধ্যমে পে করেন তাহলে আপনি ২০ টাকা ফেরত পাবেন। অর্থাৎ আপনি বিকাশে মাধ্যমে পে করার কারণে উক্ত পণ্যটা পেলেন ৯৮০ টাকায়। এটা মূলত বিকাশ এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত গ্রাহক আকৃষ্ট করার পদ্ধতি। এতে একদিকে বিকাশের প্রচার-প্রচারণা এবং গ্রাহক বৃদ্ধি হয়, অপরদিকে উক্ত প্রতিষ্ঠানেরও প্রচার-প্রচারণা এবং বিক্রয় বৃদ্ধি পায়।

সুতরাং আপনি যদি ন্যায্য মূল্যে কোন পণ্য ক্রয় করেন বা সেবা গ্রহণ করেন কিন্তু এতে যদি কিছু টাকা ছাড় পাওয়া যায় তাহলে তা গ্রহণ করতে কোন দোষ নেই। কারণ পণ্যের মালিক আপনাকে ছাড় দিয়েছে। এক্ষেত্রে বিকাশ এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের মাঝে চুক্তি থাকে এবং পরবর্তীতে তারা গ্রাহককে দেওয়া এই ছাড়টা নিজেদের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী ভাগাভাগি করে নেয়-যা তাদের উভয়ের প্রচার প্রসারের খরচ হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে আমরা জানি, বিকাশ ব্র্যাক ব্যাংকের অঙ্গীভূত একটি সুদ ভিত্তিক আর্থিক পরিষেবা। তাই একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিকাশ ব্যবহার করা উচিত নয়। কেননা এতে প্রকারান্তরে তাদেরকে সহায়তা করা হয়।
সুতরাং ক্যাশ ব্যাক পাওয়ার আশায় কোন দোকান থেকে পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিকাশ ব্যবহার না করাই ভালো। বরং সরাসরি দোকানদারকে নির্দিষ্ট মূল্য পরিশোধ করেই পণ্য ক্রয় করবেন। এটাই সবচেয়ে নিরাপদ। আল্লাহু আলম।


ঘ. বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে জাকাতের টাকা পাঠালে খরচের টাকা কি আলাদা দিতে হবে?


প্রশ্ন-৫: বিকাশ, নগদ বা রকেট-এ জাকাতের টাকা পাঠালে টাকা উঠাতে গেলে খরচ কেটে নিবে। সেই খরচও কি জাকাতের মধ্যেই পড়বে? নাকি আলাদা করে উক্ত জাকাতের টাকার খরচ পাঠিয়ে দিতে হবে?

উত্তর:
খরচের টাকা আলাদা দিতে হবে।


ঙ. বিকাশের বার্ড গেম খেলা থেকে প্রাপ্ত পুরস্কারের টাকা কি হালাল?

প্রশ্ন-৬: বিকাশে বার্ড (পাখি) গেম খেলে পুরস্কারের টাকা কি হালাল হবে? গেমের মধ্যে তেমন কোন হারাম আমি দেখি না!

উত্তর:
ব্র্যাক ব্যাংক হল, একটি সুপরিচিত সুদি ব্যাংক। এরই একটি শাখা হল বিকাশ। সুতরাং বিকাশ সরাসরি সুদি ব্যাংকের সাথে রিলেটেড।
অতএব এতে এজেন্ট হিসেবে কাজ করা বা তার কাস্টমার কেয়ারে চাকরি করা সুদি ব্যাংকে চাকরি করার নামান্তর। এটা যেমন হারাম তেমনি তার প্রচার-প্রসার বা এ্যাড দেওয়া, এর জন্য ঘর ভাড়া দেওয়া, অ্যাপ রেফার করে অর্থ উপার্জন করা, বিকাশ ওয়াপ-এ বার্ড নামক গেম খেলে অর্থ উপার্জন ইত্যাদি জায়েজ নাই। কারণ এর মাধ্যমে তাদের সুদি কার্যক্রমকে সমৃদ্ধ ও ব্যাপ্তিতে সহায়তা করা হয়। আর এ কথা অজানা নয় যে, ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ ভয়ানক হারাম, ধ্বংসাত্মক কবিরা গুনাহ এবং অভিশাপ যোগ্য কাজ হিসেবে পরিগণিত।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে সুদকে হারাম ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন,


أَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا

"আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন।" [বাকারা: ২৭৫]

আল্লাহু আলাম।

কথিত ‘শবে বরাত’ উপলক্ষে প্রচলিত কতিপয় বিদআত

আমাদের সমাজে ‘শবে বরাত’ নামক রাতটি খুব জমজমাট ভাবে উদযাপন করা হয়। আর এ উপলক্ষে সমাজের বিভিন্ন অঙ্গনে ছড়িয়ে আছে অনেক অজ্ঞতা, অনেক বিদআত ও শরিয়ত বিরোধী বিষয়। নিম্নে এমন কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরা হল:

১) কথিত শবে বরাত উপলক্ষে একশত রাকআত নামাজ আদায় করা:

এ রাতে এক অদ্ভুত পদ্ধতিতে একশত রাকআত নামাজ আদায় করা হয়। পদ্ধতিটি হল নিম্নরূপ:
মোট একশত রাকআত নামাজ পড়তে হয়। প্রতি দু রাকাত পর সালাম ফিরাতে হবে। প্রতি রাকআতে সূরা ফাতিহার পর দশ বার সূরা ইখলাস পাঠ করতে হবে। একশত রাকআত নামাজে সূরা ইখলাস পাঠ করতে হয় মোট এক হাজার বার। তাই এ নামাজকে ‘সলাতে আলফিয়া’ বলা হয়। [ইমাম গজালি রহ. এ পদ্ধতিটি এহিয়া উলুমুদ্দীন কিতাবে উল্লেখ করেছেন। দেখুন: ১ম খণ্ড ২০৩ পৃষ্ঠা]

কথিত শবে বরাতে একশত রাকআত নামাজ পড়ার বিধান:
ইসলামে এ ধরণের নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পূর্ণ নতুন আবিষ্কৃত বিদআত। এ ব্যাপারে সর্ব যুগের সমস্ত আলেমগণ একমত। কারণ, তা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং খুলাফায়ে রাশেদিন কখনো তা পড়েননি। তাছাড়া ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালিক, ইমাম শাফেয়ী, আহমদ বিন হাম্বল, সুফিয়ান সাওরি, আওযাঈ, লাইস প্রমুখ যুগ শ্রেষ্ঠ ইমামগণ কেউ এ ধরণের বিশেষ নামাজ পড়ার কথা বলেননি। এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসটি হাদিস বিশেষজ্ঞদের মতে বানোয়াট এবং জাল। যেমন: ইবনুল জাওযী উক্ত হাদিসটি মাওযু’আত (জাল হাদিস সংগ্রহ) কিতাবে তিনটি সনদে উল্লেখ করে বলেছেন, "এটি যে বানোয়াট তাতে কোন সন্দেহ নেই। তিনটি সনদেই এমন সব বর্ণনাকারী রয়েছে যাদের অধিকাংশরেই পরিচয় অজ্ঞাত। আরও কতিপয় বর্ণনাকারী খুব দুর্বল। সুতরাং হাদিসটি নিশ্চিতভাবে জাল।" [আল মাউযূআত ২য় খণ্ড ১২৭-১৩০ পৃষ্ঠা]

এ নামাজ কে কখন কীভাবে চালু করল?
ইমাম তরতূশী রহ. বলেন, শাবান মাসের পনের তারিখ রাতে একশত রাকআত নামাজ পড়ার পদ্ধতি সর্ব প্রথম যে ব্যক্তি চালু করে তার নাম হল ইবনে আবুল হামরা। তিনি ছিলেন ফিলিস্তিনের নাবলুস শহরের অধিবাসী। তিনি ৪৪৮ হিজরি সনে বায়তুল মাকদিসে আসেন। তার তেলাওয়াত ছিল খুব সুন্দর। তিনি শাবান মাসের পনের তারিখ রাতে মসজিদুল আকসায় এসে নামাজ শুরু করে। আর এক লোক তার পেছনে অনুসরণ করে। অতঃপর আর একজন আসে। কিছুক্ষণ পর আরে আরও একজন। এভাবে নামাজ শেষে দেখা গেল বিরাট জামাআতে পরিণত হয়েছে।
পরিবর্তী বছর শবে বরাতে সে ব্যক্তির সাথে প্রচুর পরিমাণ মানুষ নামাজে শরীক হয়। এভাবে এ নামাজটি মসজিদে আকসা সহ বিভিন্ন মসজিদে পড়া আরম্ভ হয়ে গেল। কিছু মানুষ নিজেদের বাড়িতে এ নামাজ পড়া শুরু করে দিল। পরিশেষে এমন অবস্থা দাঁড়ালো যেন এটি একটি সুন্নত। [আত্‌ ত্বারতুশী রচিত আত্‌তাহযীর মিনাল বিদা। পৃষ্ঠা: ১২১ ও ১২২]

২) এ রাতে কুরআন অবতীর্ণ হওয়া এবং এ রাতেই মানুষের আগামী বছরের ভাগ্য নির্ধারিত হওয়ার ধারণা:
কুরআন কোন রাতে অবতীর্ণ হয়? শাবান মাসের শবে বরাতে নাকি রমজান মাসের শবে কদরে? আল্লাহ তাআলা বলেন,


إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ * فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ

“আমি এটি (আল কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাতে। কেননা আমি মানুষকে সতর্ক কারী। এ রাতে প্রতিটি প্রজ্ঞা পূর্ণ বিষয় স্থির করা হয়।” [সূরা দুখান: ৩-৪]

এ ‘বরকতময় রাত‘ দ্বারা কোন রাত উদ্দেশ্য?
উক্ত আয়াতে উল্লেখিত রাত দ্বারা কোন রাত বুঝানো হয়েছে? শবে কদর না শবে বরাত?
● অধিকাংশ তাফসির বিশারদগণ বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল শবে কদর যা রমজান মাসে রয়েছে। যারা বলেন, শবে বরাত তাদের কথা ঠিক নয়। নিম্নে এ ব্যাপারে পর্যালোচনা উপস্থাপন করা হল:
● তাফসিরে ইবনে কাসির রহ. বলেন, "উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা এ মর্মে সংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি এ কুরআনকে এক বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছেন। আর সেটি হল কদরের রাত। যেমন: মহান আল্লাহ বলেন,


إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْر

“আমি তো তা (কুরআন) কদরের রাতে অবতীর্ণ করেছি।” [সূরা ক্বদর: ১] আর এ রাতটি ছিল রমজান মাসে। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,


شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ

“রমজান মাস। যে মাসে আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি।” [সূরা বাকারা. ১৮৫]

এ প্রসঙ্গে হাদিসগুলো সূরা বাকারায় উল্লেখ করেছি যা পুনরুল্লেখ করার নিষ্প্রয়োজন মনে করছি। আর যারা বলে যে, উক্ত রাতটি হল অর্ধ শাবানের রাত-যেমন ইকরিমা বর্ণনা করেছেন-তাদের এ মত অনেক দূরবর্তী। কারণ, তা কুরআনের সুস্পষ্ট বক্তব্য বিরোধী। [তাফসিরে ইবনে কাসির, ৪র্থ খণ্ড ৫৭০ পৃষ্ঠা]

● ইকরিমা রহ. উক্ত আয়াতের তাফসিরে বলেন, “এ রাত হল অর্ধ শাবানের রাত। এ রাতেই সারা বছরের সকল ফয়সালা চূড়ান্ত করা হয়…।” [আল জামিউল কুরতুবী ১৬/১২৬।]
কিন্তু এ দাবী মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ তা সরাসরি কুরআন বিরোধী। আর এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসগুলো সহিহ তো নই বরং সেগুলো ভিত্তিহীন। যেমনটি ইবনুল আরবি প্রমুখ গবেষক আলেমগণ দৃঢ়তার সাথে করেছেন। সেই সাথে সেগুলো কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক (যেমনটি উল্লেখ করা হয়েছে)।
সুতরাং অবাক হতে হয় সে সকল মুসলমানদের অবস্থা দেখে যারা কুরআন ও সহীহ হাদিসের দলিল ছাড়া কুরআনের স্পষ্ট বক্তব্যের বিরোধিতা করে। [আযওয়াউল বায়ান ৭/৩১৯]

৩) হালুয়া-রুটি খাওয়া:
শবে বরাত উপলক্ষে ঘরে ঘরে হালুয়া-রুটি খাওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। শুধু তাই নয় বরং সে দিন গরিব মানুষও টাকা হাওলত করে হলেও এক বেলা গোস্ত কিনে খায়। কারণ, সে দিন যদি ভালো খাবার খাওয়া যায় তাহলে নাকি সারা বছর ভালো খাবার খাওয়া যাবে। আর হালুয়া-রুটি খাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহুদ যুদ্ধে দাঁত ভাঙ্গার পর শক্ত খাবার খেতে পারেন নি। তাই তাঁর প্রতি সমবেদনা জানানোর উদ্দেশ্যে এ দিন ঘটা করে হালুয়া রুটি খাওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবতা কি তাই? আমরা জানি ওহুদের এক রক্তক্ষয়ী ও অসম যুদ্ধে কাফেরদের আঘাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁত ভেঙ্গে গিয়ে ছিল। কিন্তু শাবান মাসে তো ওহুদ যুদ্ধ হয়নি। বরং তা হয়েছিল ৩য় হিজরি শাওয়াল মাসের সাত তারিখে। তাহলে এ সমবেদনা শাবান মাসের পনের তারিখে টেনে আনার অর্থ কী?

২য় কথা হল, তিনি নরম খাবার কি শুধু একদিন খেয়ে ছিলেন? তাহলে এ কেমন ভালবাসা? আপনি শাবান মাসের পনের তারিখে কিছু হালুয়া-রুটি খেলেন আবার কিছুক্ষণ পর গরুর গোস্ত তো ঠিকই চাবিয়ে চাবিয়ে ভক্ষণ করতে থাকেন?

৩য়ত: রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো কাফেরদের সাথে এক কঠিন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বীরে মত যুদ্ধ করে তার পবিত্র দাঁত হারিয়েছেন কিন্তু আমাদের এসব নবী ভক্তদের (!) অধিকাংশের অবস্থা হল, এরা আল্লাহর নবীর রেখে যাওয়া সাধারণ সুন্নতগুলোও ঠিকমত পালন করে না! অনেকে তো ফরজ নামাজই ঠিকমত আদায় করে না। এটাই হল এদের তথাকথিত ভালবাসার নমুনা!

৪) ছবি ও মূর্তি তৈরি:
শবে বরাত উপলক্ষে দেখা যায় নানা রং-বেরঙ্গের ছবি ও মূর্তি তৈরি কৃত মিষ্টান্নতে বাজার ছেয়ে যায়। অথচ ছবি ও মূর্তি-প্রকৃতি ইত্যাদি তৈরি করা ইসলামে হারাম। আবার আল্লাহর দেয়া রিজিক নিয়ে এভাবে খেল-তামাশা?!

৫) মিলাদ ও জিকির:
শবে বরাত উপলক্ষে মসজিদ, খানকা ও দরগায় সমূহে শুরু হয় মিলাদ মাহফিল। চলে মিষ্টি খওয়ার ধুম। চলতে থাকে বিদআতি পন্থায় গরম জিকিরের মজলিশ। এ সব কাজ দ্বীনের মধ্যে বিদআত ছাড়া কিছু নয়।

৬) কবর জিয়ারত:
এক শ্রেণির মানুষ এ রাতে গোরস্থান বা মাযার জিয়ারতে বের হয়। এমনকি কোথাও কোথাও এ প্রথাও দেখা যায় যে, একদল মানুষ এ রাতে ধারাবাহিকভাবে এলাকার সকল কবর যিয়ারত করে থাকে। এদের দলিল হল, শাবান মাসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাকি গোরস্থান যিয়ারতের হাদিস অথচ মুহাদ্দিসগণ উক্ত হাদিসটি জঈফ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।

নিম্নে কবর জিয়ারতের হাদিসটি এবং এ সম্পর্কে মুহাদ্দিসদের বক্তব্য তুলে ধরা হল:
আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। এক রাতে আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে (আমার ঘরে) পেলাম না। তাই তাকে খুঁজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে তাকে বাকি গোরস্থানে পেলাম। তিনি আমাকে দেখে বললেন, “তুমি কি এ আশংকা কর যে, আল্লাহ এবং তার রসূল তোমার প্রতি অবিচার করবেন?” আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল, আমি ধারণা করে ছিলাম যে, আপনি হয়ত আপনার অন্য কোন স্ত্রীর ঘরে গিয়েছেন। একথা শুনে তিনি বললেন, “আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে নিচের আসমানে নেমে আসেন এবং কালব গোত্রের ছাগল সমূহের লোম সমপরিমাণ মানুষকে ক্ষমা করে দেন।” - তিরমিযী। অনুচ্ছেদ: অর্ধ শাবানের ব্যাপারে যা এসেছে।

তবে তিনি নিজেই এর পরে উল্লেখ করেছেন, মুহাম্মদ অর্থাৎ ইমাম বুখারী রহ. কে বলতে শুনেছি তিনি এ হাদিসটিকে জঈফ বলেছেন। ইমাম দারাকুতনী (রাহ.) বলেন, এ হাদিসটি একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তবে সনদগুলো মুযতারাব এবং সু প্রমাণিত নয়। বর্তমান শতকের শ্রেষ্ঠ হাদিস বিশারদ আল্লামা আলবানী রাহ: ও এ হাদিসটিকে জঈফ বলে সাব্যস্ত করেছেন। দেখুন: সহীহ ওয়া জঈফ তিরমিযী, হাদিস নং ৭৩৯, মাকতাবা শামেলা

৭) আলোক সজ্জা:
শবে বরাত উপলক্ষে রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি, মসজিদ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি আলোকসজ্জা করা হয়। মূলত: এসব কাজ একদিকে লক্ষ লক্ষ টাকা শুধু অপচয় করা হয় না তেমনি এটা অগ্নি পূজকদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

৮) মৃতদের আত্মার দুনিয়ায় পুনরাগমনের বিশ্বাস:
এ উপলক্ষে দেখা যায়, মহিলাগণ ঘর-বাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে আতর সুগন্ধি লাগিয়ে পরিপাটি করে রাখে। বিশেষ করে বিধবা মহিলাগণ এমনটি করেন। এমনকি তারা কিছু খাবার একটুকরো কাপড়ে পুরে ঘরে ঝুলিয়ে রাখে। কারণ তাদের বিশ্বাস হল, তাদের মৃত স্বামী-স্বজনদের আত্মা এ রাতে ছাড়া পেয়ে নিজ নিজ পরিবারের সাথে দেখা করতে আসে। এটা যে কত বড় মূর্খতা তা একমাত্র আল্লাহ জানেন। মানুষ মারা গেলে তাদের আত্মা বছরের কোন একটি সময় আবার দুনিয়াতে ফিরে আসা মুসলিমদের আকিদা নয়। বরং অনেকটা তা হিন্দুয়ানী বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আমাদের জন্য প্রয়োজন সকল প্রমাণ হীন অনুষ্ঠানাদী বর্জন করা এবং সঠিক দ্বীনের দিকে ফিরে আসা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সকল বিদআত ও গোমরাহি থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

[আল বিদা আল হাওলিয়া গ্রন্থ থেকে মুল তথ্যগুলো সংগৃহীত]

তাবলিগ জামাতকে 'না' বলার (বা প্রত্যাখ্যান করার) ১২টি কারণ

الحمد لله و الصلاة و السلام على رسول الله -أما بعد:

নিম্নে তাবলিগ জামাতকে ‘না’ বলার বা প্রত্যাখ্যান করার অসংখ্য কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ও গুরুতর ১২টি কারণ উল্লেখ করা হলো:

১. তাবলিগ জামাতের অবস্থা হল, ঘরের ফাউন্ডেশন মজবুত ভাবে তৈরি না করে ডেকোরেশন নিয়ে ব্যস্ত থাকার মত বা ভঙ্গুর ঘরকে মজবুত ভিত্তির উপরে নির্মাণ করার পরিবর্তে কোনমতে ঠেকা দিয়ে রাখার মত কিংবা যে গাছের শেকড়ে ঘুণ ধরেছে তার মূল সমস্যা বাদ দিয়ে গাছের আগায় পানি ঢালার মত। কেননা মানুষের আকিদা সংশোধন, শিরক, বিদআত, ইসলামবিরোধী নানা মতবাদ, ভ্রান্ত আকিদা-বিশ্বাস ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত করার থেকে এদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, লম্বা দাড়ি রাখা, মাথায় পাগড়ি পরা, লম্বা জুব্বা পরা, বোরকা পরা, মিসওয়াক করা, চিল্লায় বের হওয়া ইত্যাদি।

২. চতুর্দিকে শিরকের জমজমাট আসর, মানুষ কবর পূজায় লিপ্ত ও বিভিন্ন বাতিল দল ও ফিরকায় দিশেহারা। কিন্তু এসব ব্যাপারে তাদের কোন বক্তব্য নেই। কেননা এসব বিষয়ে কথা বললে নাকি সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে!

৩. মানুষ বিদআত, কুসংস্কার ও অপসংস্কৃতির অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছে। কিন্তু সেদিকে তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। কারণ এসব বিষয়ে কথা বললে নাকি ‘হাজার বছরের ঐক্য’ নষ্ট হবে এবং মানুষের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ ও ঝগড়া সৃষ্টি হবে।

৪. এই জামাতের ভিত্তি জাহালত বা মূর্খতার উপরে প্রতিষ্ঠিত। ফলে মানুষকে দীনী ইলম বা ইসলামের বিশুদ্ধ জ্ঞানান্বেষণের দিকে উৎসাহিত করার চেয়ে তাদের কথিত 'চিল্লা'য় বের হওয়ার জন্য উৎসাহিত করাই তাদের অন্যতম প্রধান কাজ।
ফলশ্রুতিতে মূর্খরা মাথায় পাগড়ি বেঁধে ফাজায়েলের কিতাব নিয়ে জনগণের সামনে ওয়াজ করতে দাঁড়িয়ে যায়। তারপর স্বভাবতই ইসলাম সম্পর্কে উল্টাপাল্টা ও ভুলভাল ব্যাখ্যা দিতে শুরু করে। অনুরূপভাবে দীন সম্পর্কে অজ্ঞ মহিলারাও পাড়ায়-মহল্লায় দ্বীন সম্পর্কে সাধারণ মহিলাদের মাঝে ইসলাম সম্পর্কে নানা ভ্রান্ত ও বিদআতি কথাবার্তা প্রচারে নিয়োজিত রয়েছে। অথচ ইসলাম সম্পর্কে কথা বলা এবং আমল করার পূর্বে ইলম (জ্ঞান) অর্জন করা ফরজ।

৫. দীনী ইলম অর্জনে অনীহা ও গুরুত্ব হীনতা:
যার কারণে আপনি দেখবেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাবলিগের একজন মুরুব্বি যে, ১০-১৫ বা ২০ বছর ধরে তাবলিগের মেহনতের সাথে জড়িত তাকে যদি ইসলামের প্রাথমিক এবং মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয় তাহলে তার উত্তর দিতে ব্যর্থ হবে। যেমন:
- ইসলাম ও ঈমান কাকে বলে?
- ইসলাম এবং ঈমানের রোকন কয়টি ও কী কী?
- দীনের স্তর কয়টি ও কী কী?
- ইবাদত কাকে বলে?
- ইবাদতের রোকন কয়টি ও কী কী?
- ইবাদত কবুলের শর্তাবলী কয়টি ও কী কী?
- ঈমান ভঙ্গের কারণগুলো কী কী?
- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর সঠিক অর্থ এবং এর শর্তাবলী কয়টি ও কী কী?
- এছাড়াও শিরক, কুফর, নিফাক, উসিলা, শাফাআত ইত্যাদি। বিষয়টি আপনারা নিজেরাই পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।

৬. উদ্ভট কিচ্ছা-কাহিনী এবং জাল-জইফ হাদিস বর্ণনা:
এই মূর্খদের ওয়াজ বা বয়ানের মূল ভিত্তি হলো, বুজুর্গদের বুজুর্গির বর্ণনা, উদ্ভট স্বপ্ন, কিচ্ছা-কাহিনী, জাল-জইফ হাদিসের বয়ান এবং ভিত্তিহীন ফজিলতের ফুলঝুরি। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে মিথ্যা হাদিস বর্ণনার পরিণতি জাহান্নাম।

৭. সংস্কার ও সংশোধনে অনীহা:
তাবলিগ জামাতের প্রধান সিলেবাস ফাজায়েল নামক কিতাবগুলো অসংখ্য ভ্রান্ত কথাবার্তা, জাল-জইফ হাদিস এবং ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে পরিপূর্ণ। এসব কিতাবের ভুল-ভ্রান্তি সম্পর্কে সচেতন করে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ভাষায় শত শত গ্রন্থ রচিত হলেও তারা মোটেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করে না‌। বরং তারা উল্টো সংস্কার প্রত্যাশীদেরকে গালাগালি, নানা অপবাদ ও তির্যক বাক্যবাণে জর্জরিত করে ছলে-বলে-কৌশলে ভুলগুলোকেই সঠিক প্রমাণের অপচেষ্টায় লিপ্ত!

৮. দলাদলি, কোন্দল ও রক্তপাত:
এই জামাতটি বর্তমানে দুই ভাগে (জুবায়ের পন্থী ও সাদ পন্থী) বিভক্ত হয়ে একে অপরের সাথে চরম কোন্দলে লিপ্ত হয়েছে। মসজিদ ভাগাভাগি, মসজিদে মারামারি, এক মসজিদে দু গ্রুপের আলাদা আলাদা জামাত, একই ময়দানে আলাদা আলাদা ইজতিমা। এমনকি একদল আরেক দলকে কাফের বা ইহুদি-খ্রিষ্টানের দালাল বলেও আখ্যায়িত করছে। সর্বোপরি টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে দুই গ্রুপের লোমহর্ষক রক্তাক্ত মারামারি জাতিকে স্তম্ভিত করেছে।

৯. এদের মাধ্যমে কিছু মানুষ দাড়ি ছেড়েছে, মাথায় টুপি পরেছে, মহিলারা বোরকা পরেছে, নামাজি হয়েছে, নানা পাপকর্ম থেকে ফিরে এসেছে তা ঠিক। কিন্তু শিরক যুক্ত ঈমান এবং বিদআত যুক্ত আমল আল্লাহর কাছে কোনই কাজে লাগবে না সে ব্যাপারে তারা নিতান্তই বেখবর। তাই তো আল্লাহ বলেছেন,


قُلۡ هَلۡ نُنَبِّئُكُم بِٱلۡأَخۡسَرِینَ أَعۡمَـٰلًا
ٱلَّذِینَ ضَلَّ سَعۡیُهُمۡ فِی ٱلۡحَیَوٰةِ ٱلدُّنۡیَا وَهُمۡ یَحۡسَبُونَ أَنَّهُمۡ یُحۡسِنُونَ صُنۡعًا


"(হে নবী আপনি বলুন), আমি কি তোমাদেরকে সেসব মানুষের ব্যাপারে বলবো যারা আমলের দিক দিয়ে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত? তারা হল, সে সব লোক, যাদের কর্ম প্রচেষ্টা দুনিয়ার জীবনেই বাতিল যায় অথচ তারা মনে করে যে, তারা ভালো কাজ করেছে!" [সূরা কাহফ: ১০৩ ও ১০৪]

১০. এই জামাতটি নিজেদের টাকায় দাওয়াতি কাজ করে বলে গর্ব করে। কিন্তু তারা নিজেদের টাকায় মূলত: বিদআত প্রচারে লিপ্ত। নিজে বিদআত করার চেয়ে বিদআত প্রচারের ভয়াবহতা বেশি। কারণ এর দ্বারা যত মানুষ বিদআতি কাজ করবে তাদের প্রত্যেকের সমপরিমাণ গুনাহ প্রচারকারীর আমলনামায় লিপিবদ্ধ করা হবে।

১১. কুরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা:
তাবলিগ জামাত জি/হাদের আয়াতগুলোকে তাদের কথিত চিল্লা ও গাশতের পক্ষে ব্যবহার করে, ‘চিল্লা’র জন্য নির্ধারিত ৩ দিন, ৪০ দিন (এক চিল্লা), ১২০ দিন (তিন চিল্লা) বা ১ সাল ইত্যাদির পক্ষে কুরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা করে এগুলোকে বৈধ প্রমাণের চেষ্টা, টঙ্গীর মাঠে এক ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত ৪৯ কোটি গুণ সওয়াবের বর্ণনা, তিন বার টঙ্গীর ইজতিমায় শরিক হলে এক হজের সমপরিমাণ সওয়াব বা এটিকে ‘গরিবের হজ’ বলা। (সাধারণ কিছু মূর্খ এমন কথা বললেও তাবলিগ জামাতের কেন্দ্র থেকে এর প্রতিবাদ বা সংশোধনী মূলক বক্তব্য করা হয়েছে বলে জানা যায় না)।

টঙ্গী ইজতেমার বিশেষ আকর্ষণ হল, আখেরি মুনাজাত। মানুষ এখন ফরজ সালাত আদায়ের চাইতে আখেরি মুনাজাতে যোগদান করাকেই অধিক গুরুত্ব দেয়। আখেরি মুনাজাতে শরিক হওয়ার জন্য নামাজি, বেনামাজি, ঘুষখোর, সন্ত্রাসী, বিদআতি, দুষ্কৃতিকারী ইত্যাদি মানুষ দলে দলে টঙ্গীর ময়দানের দিকে ছুটতে থাকে। কেউ ট্রেনের ছাদে, কেউ বাসের হ্যান্ডেল ধরে, নৌকায় বসে, পিকআপ প্রভৃতির মাধ্যমে ইজতিমায় যোগদান করে। স্বয়ং রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে, প্রধানমন্ত্রী গণভবনে, বিরোধীদলীয় নেত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীগণও সেখানে গিয়ে আঁচল পেতে প্রার্থনা করেন। টিভিতে সরাসরি এই মুনাজাত সম্প্রচারিত হয়। রেডিও শুনে রাস্তার ট্রাফিকগণও হাত তুলে আমিন আমিন বলতে থাকে। সে দিন ঢাকা শহরে অফিস-আদালতে অঘোষিত ছুটি পালিত হয়। কারণ তাদের বিশ্বাস, এই আখেরি মুনাজাতে অংশ গ্রহণ করতে পারলে জীবনের সব গুনাহ মোচন হয়ে যায়। অথচ এভাবে নিয়ম করে সম্মিলিত মুনাজাত করাই বিদআত (দীনের মধ্যে নব আবিষ্কৃত কাজ)। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমিন।

১২. উম্মতের শ্রেষ্ঠ মুহাক্কিক সালাফি আলেমগণ (যেমন: শাইখ বিন বায, শাইখ উমাইমিন, শাইখ আলবানি, শাইখ সালেহ আল ফাওযান প্রমুখ) তাবলিগ জামাতের সাথে বের হওয়া, তাদের বই পড়া এবং তাদের ইজতিমায় শরিক হওয়াকে হারাম বলেছেন এবং উম্মতকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।

তাবলিগ জামাতের কোথায় কী সমস্যা এবং সেগুলোর খণ্ডন বিষয়ে নিম্নোক্ত বইগুলো পড়া যেতে পারে:

১. শাইখ হামুদ বিন আব্দুল্লাহ আত তুওয়াইজিরি কর্তৃক রচিত এবং শায়খ মুখলেসুর রহমান বিন মনসুর অনুদিত নিম্নোক্ত গ্রন্থটি:
القول البليغ في التحذير عن جماعه التبليغ
“প্রচলিত তাবলীগ জামাত সংশয় সতর্কতা সমাধান”

২. তাবলীগ জামা’ য়াত ও দেওবন্দিগণ
সম্পাদনায়: শাইখ আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম

রজব মাসকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোনও নামাজ, রোজা, উমরা, ইতিকাফ ইত্যাদি ইবাদত সুন্নাহ দ্বারা কি সাব্যস্ত হয়েছে?

রজব মাসে বিশেষভাবে নফল রোজা রাখা, নফল নামাজ পড়া, উমরা আদায় করা অথবা ইতিকাফ করা সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। বরং এ উপলক্ষে বিশেষ কিছু ইবাদত করা দ্বীনের মধ্যে সৃষ্ট বিদআতের অন্তর্ভূক্ত। যারা এ সব করে তারা এমন কিছু হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করে যেগুলো দুর্বল অথবা বানোয়াট।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, রজব ও শাবানকে মিলিয়ে একসাথে পুরো দু মাস বিশেষভাবে রোজা রাখা অথবা ইতিকাফ করার সমর্থনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবিগণ, কিংবা মুসলিমদের ইমামগণের পক্ষ থেকে কোন প্রমাণ নেই। তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসে রোজা রাখতেন। তিনি রমজান মাসের আগমনের প্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসে যে পরিমাণ রোজা রাখতেন রমজান ছাড়া বছরের অন্য কোন মাসে এত রোজা রাখতেন না। [বুখারী, কিতাবুস সাওম, মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম]
রজব মাসকে কেন্দ্র করে বিশেষভাবে রোজা রাখার ব্যাপারে কিছু হাদিস দুর্বল আর অধিকাংশই বানোয়াট। আহলে ইলমগণ এগুলোর প্রতি নির্ভর করেন না। এগুলো সে সকল দুর্বল হাদিসের অন্তর্ভুক্ত নয় যেগুলো ফজিলতের ক্ষেত্রে বর্ণনা করা হয়। বরং অধিকাংশই মিথ্যা ও বানোয়াট। রজব মাসের ফজিলতে সব চেয়ে বেশি যে হাদিসটি বর্ণনা করা হয় সেটা হল এই দু্আটি:


اللهم بارك لنا في رجب وشعبان وبلغنا رمضان

“হে আল্লাহ, তুমি আমাদেরকে রজব ও শাবানে বরকত দাও এবং রমজান পর্যন্ত পৌঁছাও।” [মুসনাদ আহমদ, ১/২৫৯], এ হাদিসটি দুর্বল।

এ হাদিসের সনদে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে যার  নাম যায়েদাহ বিন আবুর রিকাদ। তার ব্যাপারে ইমাম বুখারী রহ. বলেন মুনকারুল হাদিস। ইমাম নাসাঈ তার সুনান গ্রন্থে তার নিকট থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করার পর বলেন, “চিনি না এই ব্যক্তি কে?” আর তিনি তার যুয়াফা কিতাবে তার সম্পর্কে বলেন, মুনকারুল হাদিস। কুনা গ্রন্থে বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নন। ইবনে হিব্বান বলেন, তার বর্ণিত কোন হাদিসকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। [দ্রষ্টব্য: তাবয়ীনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফী ফযলি রাজাব, ১২ পৃষ্ঠা।  আয যুয়াফাউল কাবীর (২/৮১) তাহযীবুত তাহযীব ৩/৩০]

ইবনে তাইমিয়া রহ. আরও বলেন, “রজব মাসকে বিশেষ সম্মান দেখানো বিদআতের অন্তর্ভুক্ত যা বর্জন করা উচিৎ। রজব মাসকে বিশেষভাবে রোজার মওসুম হিসেবে গ্রহণ করাকে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল সহ অন্যান্য ইমামদের নিকটে অপছন্দনীয়।” [ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকীম, ২য় খণ্ড, ৬২৪ ও ৬২৫ পৃষ্ঠা]

- ইবনে রজব বলেন, রজব মাসকে কেন্দ্র করে বিশেষভাবে রোজা রাখার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কিংবা সাহাবিদের থেকে কোন কিছুই সহীহ ভাবে প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু আবু কিলাবা থেকে একটি বর্ণনা পাওয়া যায় যে, “যারা রজবে বেশি বেশি রোজা রাখবে তাদের জন্য জান্নাতে প্রাসাদ রয়েছে।” এই কথাটির ব্যাপারে ইমাম বায়হাকী বলেন, আবু কিলাবা একজন বড় মাপের তাবেঈ। তার মত ব্যক্তি হাদিসের তথ্য না পেলে এমন কথা বলতে পারেন না।
কিন্তু এ কথার প্রতি উত্তরে বলা যায় যে, ইসমাইল আল হারাবী, শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, ইবনে হাজার আসকালানী প্রমুখ আলেমগণ এ মর্মে একমত যে, রজব মাসকে কেন্দ্র করে রোজা রাখার ব্যাপারে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কোন সহীহ হাদিস প্রমাণিত হয়নি। এ মর্মে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে কিছু হল যঈফ আর অধিকাংশই বানোয়াট।

- আবু শামা রহ. বলেন, কোন ইবাদতকে এমন কোন সময়ের সাথে নির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিৎ নয় শরিয়ত যেটা নির্দিষ্ট করে নি। বরং ইসলামি শরিয়ত যে সময় যে ইবাদত নির্ধারণ করেছে সেটা ছাড়া যে কোন ইবাদত যে কোন সময় করা যাবে। এক সময়কে অন্য সময়ের উপর প্রাধান্য দেওয়া যাবে না। ইসলামি শরিয়তে বিশেষ কিছু সময়কে নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বিশেষ কিছু’ ইবাদতের জন্য। ঐ সময়গুলোতে ঐ ইবাদতগুলোই ফজিলত পূর্ণ; অন্য কোন ইবাদত নয়। যেমন: আরাফাহর দিনে রোজা রাখা, আশুরার দিনে রোজা রাখা, গভীর রাতে নফল নামাজ পড়া, রমজান মাসে উমরা আদায় করা।

অনুরূপভাবে এমন বিশেষ কিছু সময়কে নির্ধারণ করা হয়েছে যেগুলোতে ‘যে কোন ধরণের’ নেকির কাজ করার ফজিলত রয়েছে। যেমন: জিলহজমাসের প্রথম দশ দিন, লাইলাতুল কদর যার মর্যাদা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এই রাতে যে কোন ইবাদতই করা হোক তা অন্য হাজার মাসের চেয়েও মর্যাদাপূর্ণ। মোটকথা, বিশেষ কোন সময়কে বিশেষ কোন ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করার অধিকার কেবল ইসলামি শরিয়তই সংরক্ষণ করে; অন্য কোন ব্যক্তি নয়। আল্লাহ সব চেয়ে ভাল জানেন। [আল বায়িস, পৃষ্ঠা নং ৪৮] [আল বিদা আল হাউলিয়া গ্রন্থ থেকে অনুদিত]

সুতরাং রজব মাসে বিশেষ ইবাদত করা বা রজব মাসকে আলাদাভাবে সম্মান দেখানো বিদআতের অন্তর্ভূক্ত। তবে কেউ যদি সব অন্যান্য মাসে নফল নামাজ, নফল রোজা, দান সদকা ইত্যাদি ইবাদত করে থাকে তাহলে এ মাসেও তা অব্যহত রাখতে পারে। মোটকথা, এ মাসকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ মনে করে  আলাদা কোন ধরণের ইবাদত করা ঠিক হবে না। কেননা তা সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। আল্লাহু আলাম।

সমকামিতা: ভয়াবহতা, শাস্তি ও পরিত্রাণের উপায়

বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে সমকামিতা নামক প্রকৃতিবিরুদ্ধ ও নিকৃষ্ট কাজটির প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। এর প্রচার-প্রসারে পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে হাবুডুবু খাওয়া কিছু পথভ্রষ্ট মানুষ বিভিন্ন ভাবে কাজ করছে। এরা বিভিন্ন এনজিও এর ছাত্র ছায়ায় যুবকদেরকে এই অন্যায় কর্মে লিপ্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ইতোমধ্যে বহু যুবক-যুবতী তাদের খপ্পরে পড়ে শুধু তাদের দ্বীনদারী ও‌ চরিত্রকে ভূলুণ্ঠিত করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং পুরো জীবনটাকেই এক গন্তব্যহীন অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। সে কারণে আমাদের যুব সমাজকে রক্ষা করতে এ বিষয়ে সচেতনতা খুবই জরুরি।

যাহোক, নিম্নে সমকামিতার ভয়াবহতা, ইসলামি ও প্রচলিত আইনে এর শাস্তি এবং এ থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ আলোচনা করা হল:
ইসলামে সমকামিতা (homosexuality) তথা পুরুষের সাথে পুরুষ অথবা নারীর সাথে নারীর যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, কবিরা গুনাহ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এটি জিনার থেকেও নিকৃষ্ট। কেননা তা প্রকৃতি বিরুদ্ধ যৌনাচার এবং মানবতা বিধ্বংসী আচরণ।

মানবজাতির পরিবার গঠনের স্বাভাবিক নিয়ম হল, একজন পুরুষ একজন নারীকে বৈধভাবে বিয়ে করার পর তারা দাম্পত্য জীবন গঠন করবে। অত:পর স্বামী-স্ত্রী মধুর মিলনে স্ত্রী গর্ভধারণ করবে ও সন্তান জন্ম দিবে। অতঃপর বাবা-মা সন্তানের পরিপালনের দায়িত্বভার কাঁধে তুলে নিবেন। এই তো একটি সুন্দর মানবজীবন। এভাবে মানব সন্তানের বংশ বিস্তার ঘটবে এবং ফুলে-ফলে সুশোভিত হবে এই সুন্দর বসুন্ধরা। কিন্তু সমকামিতা হল, প্রকৃতি বিরুদ্ধ ও ধ্বংসাত্মক কাজ এবং মানবজাতির বংশ বিস্তারের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক।

কেন মানুষ সমকামী হয়? বিজ্ঞানীরা সমকামিতার প্রকৃত কারণ জানেন না কিন্তু তারা তাত্ত্বিকভাবে ধারণা করেন যে, জিনগত, হরমোন গত এবং পরিবেশগত কারণসমূহের এক জটিল আন্তক্রিয়ার ফলে এটি ঘটে থাকে। (উইকিপিডিয়া) তবে কিছু মানুষ স্বাভাবিক যৌন চাহিদা তথা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি স্বাভাবিক যৌন আকর্ষণ থাকার পরও বিকৃত মানসিকতার কারণে ইচ্ছাকৃত ভাবে সমকামিতায় লিপ্ত হয়।

ইসলাম সমকামিতার পথ বন্ধ করেছে যেভাবে:
ইসলাম সমকামিতার পথ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে যে নির্দেশনা প্রদান করেছে তা হল,


عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لاَ يَنْظُرُ الرَّجُلُ إِلَى عَوْرَةِ الرَّجُلِ وَلاَ الْمَرْأَةُ إِلَى عَوْرَةِ الْمَرْأَةِ وَلاَ يُفْضِي الرَّجُلُ إِلَى الرَّجُلِ فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ وَلاَ تُفْضِي الْمَرْأَةُ إِلَى الْمَرْأَةِ فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ.

আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "এক পুরুষ অপর পুরুষের লজ্জাস্থানের প্রতি তাকাবে না। তেমনি এক নারী অপর নারীর লজ্জাস্থানের প্রতি তাকাবে না। দু জন পুরুষ একটি কাপড়ের নীচে শয্যা গ্রহণ করবে না। তেমনি দুজন নারী একটি কাপড়ের নীচে শয্যা গ্রহণ করবে না।" (মুসলিম, মিশকাত হা/৩১০০; বাংলা ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা/২৯৬৬ ‘বিবাহ’ অধ্যায়)।

অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,


عَنْ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ تُبَاشِرُ الْمَرْأَةُ الْمَرْأَةَ فَتَنْعَتْهَا لِزَوْجِهَا كَأَنَّهُ يَنْظُرُ إِلَيْهاَ.

ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "এক নারী অপর নারীর চামড়ার সাথে চামড়ার লাগাবে না। কারণ সে তার স্বামীকে ঐ নারীর অঙ্গের বিবরণ দিতে পারে তখন তার স্বামী ঐ নারীকে যেন অন্তরের চোখে দেখবে।" (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪০৯৯; বাংলা ৮ম খন্ড, হা/৩৯২১ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়)।
এ দুটি হাদিসে ইসলাম সমকামিতার মত ভয়াবহ ও ঘৃণিত অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছে।

ইসলামের দৃষ্টিতে সমকামিতার ভয়াবহতা:
নি:সন্দেহে সমকাম ধ্বংসাত্মক ও অভিশপ্ত পাপকর্ম, আল্লাহর শাস্তির কারণ ও মানবতা বিধ্বংসী অপরাধ।
নিম্নে কুরআন-সুন্নাহ ও প্রচলিত আইনের আলোকে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হল:

১. সমকাম আল্লাহর আজাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ:
লুত সম্প্রদায়ের লোকজন সমকামিতায় লিপ্ত হলে মহাশক্তিধর আল্লাহ তাদেকে কিভাবে ধ্বংস করেছেন তা ফুটে উঠেছে এই আয়াতে:


فَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا جَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً مِّن سِجِّيلٍ مَّنضُودٍ

“অতঃপর যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছল, এরপর যখন আমার সিদ্ধান্ত কার্যকর হল, তখন আমি জনপদের উপরিভাগ নিচে এবং নিম্নভাগ উপরে উঠালাম এবং তার উপর স্তরে স্তরে কাঁকর-পাথর বর্ষণ করলাম।" (সুরা হুদ: ৮২)
ইতিহাসে এই ভয়াবহ ঘটনার নীরব সাক্ষী হয়ে আজও বিদ্যমান রয়েছে জর্ডানে অবস্থিত ‘ডেড সি’ (The Dead Sea) বা মৃত সাগর।

২. সমকামিতা একটি অভিশপ্ত কর্ম:
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন,


لَعَنَ اللَّهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ ، لَعَنَ اللَّهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ ، ثَلاثًا -(حسنه شعيب الأرنؤوط في تحقيق المسند)

"যে ব্যক্তি লুতের সম্প্রদায়ের কাজে (সমকামে) লিপ্ত হবে তার প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত।যে ব্যক্তি লুতের সম্প্রদায়ের কাজে (সমকামে) লিপ্ত হবে তার প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত।" এ কথা তিনি তিনবার বলেছেন। (মুসনাদ আহমদ ২৯১৫/শাইখ শুআইব আরনাবুত হাদিসটিকে হাসান বলেছেন)

৩. তাছাড়া সমকামিতাকে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীগণ প্রাণঘাতী এইডস সহ নানা জটিল ও কঠিন রোগের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

❑ ইসলামি আইনে সমকামিতার শাস্তি:

ইসলামের ফৌজদারি দণ্ডবিধি অনুযায়ী সমকামিতার শাস্তি হল, মৃত্যুদণ্ড:
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,


عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنهما قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( مَنْ وَجَدْتُمُوهُ يَعْمَلُ عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ فَاقْتُلُوا الْفَاعِلَ وَالْمَفْعُولَ بِهِ ) وصححه الألباني في صحيح الترمذي .

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যাদেরকে তোমরা লুতের সম্প্রদায়ের কাজে (সমকামে) লিপ্ত দেখবে তাদের উভয়কেই হত্যা করো। (তিরমিজি: ৪/৫৭; আবু দাউদ: ৪/২৬৯; ইবনে মাজা: ২/৮৫৬-’শাইখ আলবানি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন)
আল্লামা বিন বায রহঃ বলেন,


أن حكمه القتل الذي عليه أصحاب الرسول ﷺ وقد أجمعوا جميعًا  على قتل اللوطي مطلقًا سواء كان بكرًا أو ثيبًا، بعض الفقهاء قالوا: إنه كالزاني يرجم المحصن ويجلد البكر مائة جلدة ويغرب عامًا، ولكنه قول ضعيف

"সমকামিতার শাস্তি হল, হত্যা। এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবিদের সম্মিলিত অভিমত রয়েছে। তারা সকলেই একমত যে, সমকামীকে হত্যা করা হবে চাই যে বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত হোক।
কতিপয় ফকিহ বলেন যে, সমকামিতার ক্ষেত্রে জিনার মতই বিবাহিত হলে, তার শাস্তি পাথর মেরে হত্যা আর অবিবাহিত হলে এক একশ চাবুক ও একবছর দেশান্তর (জেল বা নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেয়া)। কিন্তু এটি দুর্বল কথা।" [শাইখের অফিসিয়াল ওয়েব সাইট]
অবশ্য যদি কারও সাথে জোরপূর্বক সমকামিতা করা হয় বা যার সাথে এই অন্যায় করা হয়েছে সে যদি অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু বা পাগল হয় তাহলে তার উপর শাস্তি প্রয়োগ করা হবে না।

❑ প্রচলিত আইনে সমকামিতার শাস্তি:

অধিকাংশ সমাজে এবং সরকার ব্যবস্থায় সমকামী আচরণকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। উদাহরণ স্বরূপ: বাংলাদেশ (দশ বছরের থেকে শুরু করে আমরণ সশ্রম কারাদণ্ড) সহ দক্ষিণ এশিয়ার ৬ টি দেশের সংবিধানে ৩৭৭ ধারা এবং ১৯টি দেশে সমপর্যায়ের ধারা এবং সম্পূরক ধারা মোতাবেক সমকামিতা ও পশুকামিতা প্রকৃতি বিরোধী যৌনাচার হিসেবে শাস্তিযোগ্য ও দণ্ডনীয় ফৌজদারি অপরাধ।
বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা মোতাবেক পায়ু মৈথুন শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ, যার শাস্তি দশ বছর থেকে শুরু করে আজীবন কারাদণ্ড এবং সাথে জরিমানাও হতে পারে। এ আইনে বলা হয়েছে:
৩৭৭. প্রকৃতিবিরুদ্ধ অপরাধ: কোন ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায় কোন পুরুষ, নারী বা পশু প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সঙ্গম করে, তবে তাকে আজীবন কারাদণ্ড দেয়া হবে, অথবা বর্ণনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কালের কারাদণ্ড প্রদান করা হবে যা দশ বছর পর্যন্ত বর্ধিত হতে পারে, এবং এর সাথে নির্দিষ্ট অঙ্কের আর্থিক জরিমানাও দিতে হবে।
ব্যাখ্যা: ধারা অনুযায়ী অপরাধ প্রমাণে যৌনসংগমের প্রয়োজনীয় প্রমাণ হিসেবে লিঙ্গ প্রবেশের প্রমাণ যথেষ্ট হবে।
৩৭৭ ধারার ব্যাখ্যায় পায়ু সঙ্গম জনিত যে কোন যৌথ যৌন কার্যকলাপকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একারণে, পরস্পর সম্মতিক্রমে বিপরীতকামী মুখকাম ও পায়ু মৈথুনও উক্ত আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে। [মুক্ত বিশ্বকোষ, বাংলাদেশে সমকামীদের অধিকার]

❑ কেউ যদি জন্মগত ভাবে সম লিঙ্গের দিকে আকর্ষণ অনুভব করে তাহলে তার কী করণীয়?

সৃষ্টিগত ভাবে কারো মধ্যে সমলিঙ্গের দিকে আকর্ষণ থাকলে তাকে বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহ তাকে এমনটি করেছেন তার প্রতি পরীক্ষা হিসেবে। যেমন অনেক প্রতিবন্ধী মানবিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। কারও চোখ নাই, কারও কথা বলার ক্ষমতা নাই, কেউ বা কানে শুনে না ইত্যাদি। ঠিক তেমনি সেও নারীর প্রতি স্বাভাবিক যৌন আকর্ষণ বোধ থেকে বঞ্চিত।
যাহোক, কোন ব্যক্তি যদি ব্যক্তি সমলিঙ্গের প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করে তাহলে এ থেকে বাঁচার জন্য তার জন্য নিম্নে ৮টি করণীয় তুলে ধরা হল:
১) সে আল্লাহর ভয় ও জাহান্নামের শাস্তির কথা চিন্তা করে ধৈর্য ধারণ করবে এবং এ জঘন্য গুনাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করবে। কোনভাবেই সম লিঙ্গের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করবে না। যদি সে ধৈর্য ধারণ করতে পারে তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে আখিরাতে মহা পুরস্কারে ভূষিত করবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,


أُولَـٰئِكَ يُجْزَوْنَ الْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُوا وَيُلَقَّوْنَ فِيهَا تَحِيَّةً وَسَلَامًا خَالِدِينَ فِيهَا ۚ حَسُنَتْ مُسْتَقَرًّا وَمُقَامًا

"তাদেরকে তাদের ধৈর্যের প্রতিদানে জান্নাতে কক্ষ দেয়া হবে এবং তাদেরকে তথায় দেয়া হবে সম্ভাষণ ও সালাম। তথায় তারা চিরকাল বসবাস করবে। অবস্থানস্থল ও বাসস্থান হিসেবে তা কত উত্তম!" (আল ফুরকান: ৭৫ ও ৭৬)

২) সর্বদা আল্লাহর ভয় অন্তরে জাগ্রত রাখবে। মনে রাখা দরকার যে, আমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কিয়ামতের মাঠে আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হয়ে দাঁড়াবে। তখন আমরা যত অন্যায় ও পাপকর্ম করেছি সব কিছুই প্রকাশিত হয়ে যাবে।
আল্লাহ বলেন,


يَوْمَ تَشْهَدُ عَلَيْهِمْ أَلْسِنَتُهُمْ وَأَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُم بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

"যেদিন প্রকাশ করে দেবে তাদের জিহবা, তাদের হাত ও তাদের পা, যা কিছু তারা করত।" (সূরা নূর: ২৪)

৩) যদি বিপরীত লিঙ্গের প্রতি মোটেই আকর্ষণবোধ না থাকার কারণে বিয়ে করা সম্ভব না হয় অথচ প্রচণ্ড যৌন বাসনা অনুভব করে তাহলে করণীয় হল, রোজা রাখা। কেননা রোজার মাধ্যমে যৌন বাসনা নিয়ন্ত্রিত থাকে।

৪) কখনো একাকী নিভৃতে না থাকা। কেননা একাকীত্ব যৌন চিন্তা জাগ্রত করে। বরং যে কোন দীন বা দুনিয়ার উপকারী কাজে সময়কে কাজে লাগাতে চেষ্টা করতে হবে। যেমন: নেক আমল করা, কুরআন তিলাওয়াত করা, কুরআনে তাফসির পড়া, কুরআন মুখস্থ করা, জিকির করা, নামায পড়া, ইসলামি বই পড়া, ভালো আলেমদের লেকচার শোনা, শিক্ষণীয় ও উপকারী কোন কোর্স করা, জনকল্যাণ মূলক কাজ আঞ্জাম দেয়া, শখের কাজ করা (যদি তা হারাম না হয়) ইত্যাদি।

৫) পাপিষ্ঠ ও খারাপ লোকদের সংশ্রব থেকে দূরে থাকা। কারণ মানুষ সঙ্গ দোষে অন্যায় ও অশ্লীল পথে পা বাড়ায়।

৬) যৌন উদ্দীপক মুভি, মিউজিক ভিডিও, গান, টিভি শো ইত্যাদি না দেখা এবং অশ্লীল গল্প-উপন্যাস না পড়া।

৭) যৌন বাসনাকে উদ্দীপ্ত করে এমন খাওয়া-দাওয়াও সীমিত করা দরকার। কেননা এসব খাদ্যের প্রভাবে শরীরে যৌন চাহিদা বৃদ্ধি পায়।

৮) তারপরও মনে খারাপ চিন্তা জাগ্রত হলে তৎক্ষণাৎ শয়তানের প্ররোচনা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা তথা আউযুবিল্লাহি মিনাশ শয়তানির রাজীম পাঠ করা কর্তব্য।

৯) সর্বোপরি মহান আল্লাহর নিকট নিজের সমস্যা থেকে মুক্তি চেয়ে দুআ ও আরাধনা করা।

আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে সকল প্রকার পাপাচার ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

ইসলামের দৃষ্টিতে হিজড়াদের সাথে মেলামেশা, লেনদেন, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির বিধান এবং হিজড়াদের সাথে আচরণের পদ্ধতি ও মূলনীতি

❑ এক. ইসলামের দৃষ্টিতে হিজড়াদের সাথে মেলামেশা, লেনদেন, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির বিধান:

আমাদের জানা আবশ্যক যে, একজন হিজড়া এবং সাধারণ মানুষের মাঝে মৌলিক কোন পার্থক্য নাই বিয়ে-যৌনতা ইত্যাদি কিছু বিধি-বিধান ছাড়া। তারাও আল্লাহর প্রতি ঈমান-কুফরি, আল্লাহর আনুগত্য-নাফরমানি, ইবাদত-বন্দেগি, ইসলামের বিধিবিধান পালন এবং সামাজিক সম্মান-মর্যাদার ক্ষেত্রে অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতই। তারাও ইসলাম, ঈমান, তাকওয়া-পরহেজগারিতা, হালাল-হারাম ইত্যাদি বিষয়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশিত।
তারা যদি নেকির কাজ করে তাহলে আখিরাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরষ্কার প্রাপ্ত হবে এবং যদি কোন অন্যায় করে আখিরাতে শাস্তির সম্মুখীন হবে। কারণ তারাও মানুষ। আর প্রতিটি সুস্থ জ্ঞান সম্পন্ন ও প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের উপর আল্লাহর আদেশ-নিষেধ প্রযোজ্য।


আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর সকল মানুষের উদ্দেশ্য বলেন,


يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ‎

“হে মানব জাতি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ইবাদত কর, যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তাতে আশা করা যায়, তোমরা আল্লাহ ভীতি অর্জন করতে পারবে।” [সূরা বাকারা: ২১]

তিনি‌ আরও বলেন,


يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً

“হে মানব জাতি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী।” [সূরা নিসা: ১]

আল্লাহ তাআলা মানবজাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন,


وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ

“আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।” [সূরা যারিয়াত: ৫৬]
এভাবে কুরআনে আল্লাহ মানব জাতিকে উদ্দেশ্য করে আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্বের অন্যান্য সুস্থ মস্তিষ্ক ও প্রাপ্ত বয়স্ক প্রতিটি মানুষই এর অন্তর্ভুক্ত। চাই সে সুস্থ হোক, অসুস্থ হোক, স্বাভাবিক হোক বা প্রতিবন্ধী হোক, সাধারণ নারী-পুরুষ হোক বা হিজড়া হোক। কেউই এ নির্দেশনার বাইরে নয়। তবে তারা লিঙ্গ প্রতিবন্ধী। এটি আল্লাহ তাআলার কর্ম কুশলতা এবং সৃষ্টি বৈচিত্রের নিদর্শন।
কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজে অনেক ক্ষেত্রে  হিজড়াদেরকে ভিন্ন চোখে দেখা হয় এবং সামাজিকভাবে তাদেরকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। যার কারণে তারাও জীবন-জীবিকার তাগিদে এমন কিছু কাজ করে যা অনেক ক্ষেত্রে অন্যায়-জুলুমের পর্যায়ে পড়ে এবং অনেক ক্ষেত্রে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। সুতরাং তাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে, তাদেরকে সামাজিক মর্যাদা দিতে হবে এবং তাদের প্রতি সব ধরণের বৈষম্য এবং বর্ণবাদী মনোভাব দূর করতে হবে।

অন্যান্য স্বাস্থ্য প্রতিবন্ধীদের মত লিঙ্গ প্রতিবন্ধী হিজড়ারা আমাদের সভ্য সমাজেরই অংশ। তারা আমাদেরই কারও সন্তান। অতএব তাদেরকে নপুংসক বলে তিরস্কার করা যাবে না, তাদেরকে হেয়, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা অবহেলা করা যাবে না, অন্যায়ভাবে তাদের উপর জুলুম-নির্যাতন করা যাবে না, তাদেরকে অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা, চিকিৎসা, হালাল পন্থায় চিত্তবিনোদন, সামাজিক নিরাপত্তা, বিচার পাওয়া ইত্যাদি কোনও অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

মোটকথা, যারা সৃষ্টিগতভাবে প্রকৃতই হিজড়া ইসলামের দৃষ্টিতে তাদের সাথে সাধারণভাবে মেলামেশা, উঠবস, লেনদেন, খাওয়া-দাওয়া, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে কোন আপত্তি নেই। তবে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকাও জরুরি যে, বর্তমানে হিজড়া হিসেবে পরিচিত কিছু মানুষ প্রকৃত হিজড়া নয় বরং তারা কেউ কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে হিজড়া বেশ ধারণ করে মানুষের সাথে প্রতারণা করছে আবার কিছু মানুষকে দুষ্কৃতিকারীরা বাধ্য করে হিজড়া বানিয়ে রেখেছে বিশেষ স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমিন।

❑ দুই. হিজড়াদের সাথে আচরণের পদ্ধতি ও মূলনীতি:

বর্তমান শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফিকাহবিদ এবং সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ. বলেন,


الخنثى فيه تفصيل؛ فالخنثى قبل البلوغ يشتبه هل هو ذكر أو أنثى؛ لأن له آلتين آلة امرأة وآلة رجل، لكن بعد البلوغ يتبين في الغالب ذكورته أو أنوثته. فإذا ظهر منه ما يدل على أنه امرأة مثل أن يتفلك ثدياه، أو ظهر عليه ما يميزه عن الرجال بحيض أو بول من آلة الأنثى، فهذا يحكم بأنه أنثى وتزال منه آلة الذكورة بالعلاج الطبي المأمون. وإذا ظهر منه ما يدل على أنه ذكر كنبات اللحية والبول من آلة الذكر وغيرها مما يعرفه الأطباء فإنه يحكم بأنه ذكر ويعامل معاملة الرجال، وقبل ذلك يكون موقوفًا حتى يتبين الأمر، فلا يزوج حتى يتبين الأمر هل هو ذكر أو أنثى، وهو بعد البلوغ كما قال العلماء بتبين أمره

“হিজড়ার ব্যাপারে ব্যাখ্যা রয়েছে। বয়ঃসন্ধির আগে একজন হিজড়া সে পুরুষ না মহিলা তা অনিশ্চিত। কারণ তার দুটি অঙ্গ রয়েছে-একটি নারীর, অপরটি পুরুষের। কিন্তু বয়ঃসন্ধির পর তার পুরুষত্ব বা নারীত্ব প্রায়শই স্পষ্ট হয়ে যায়। যদি লক্ষণ দেখা যায় যে, সে একজন নারী, যেমন: তার স্তন শিথিল হয়ে যাওয়া, অথবা এমন কিছু যা তাকে পুরুষদের থেকে আলাদা করে। যেমন: ঋতুস্রাব বা স্ত্রীলিঙ্গ থেকে প্রস্রাব নির্গত হওয়া ইত্যাদি তাহলে তাকে নারী বলে গণ্য করা হবে এবং নিরাপদ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার পুরুষাঙ্গটি রিমুভ করে ফেলতে হবে।
আর যদি তার মধ্যে এমন কিছু পাওয়া যায় যা ইঙ্গিত করে যে, সে একজন পুরুষ, যেমন: দাড়ি বৃদ্ধি, পুরুষ লিঙ্গ থেকে প্রস্রাব নির্গত হওয়া ইত্যাদি যে সব বিষয় ডাক্তারগণ জানেন, তাহলে তাকে পুরুষ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং তার সাথে পুরুষের মতই আচরণ করা হবে।

তবে যদি কোনো একটি দিক পরিষ্কার না হয় তাহলে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত স্থগিত থাকবে। তাই যতদিন না বিষয়টি পরিষ্কার হবে যে তিনি একজন পুরুষ অথবা নারী (যা বিশেষজ্ঞদের মতে বয়ঃসন্ধির মাধ্যম প্রকাশিত হয়) তার বিয়ে দেওয়া যাবে না।” [binbaz org]

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 পরের পাতা »