সেসব আত্মা খুবই হতভাগা যেগুলো ইসলাম সম্বন্ধে অজ্ঞ অথবা যেগুলো ইসলাম সম্বন্ধে জানে তবুও ইসলামের পথে পরিচালিত হয়নি। বর্তমানে মুসলমানদের প্রয়োজন বিশ্বব্যাপী প্রচারিত এক জিগির (শ্লোগান) ও বিজ্ঞাপনের। কেননা, ইসলাম এমন এক মহা সংবাদ যা অতি অবশ্যই জনগণের নিকট পৌছাতে হবে। এই শ্লোগানের কথাগুলো স্পষ্ট। সংক্ষিপ্ত এবং আকর্ষণীয় হওয়া দরকার; কেননা, সমগ্র মানবজাতির সুখ এই সত্য ধর্মে নিহিত আছে।
وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ
“আর যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মের তালাশ করে- তার থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না।” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-৮৫)
জার্মানির মিউনিখ শহরে একজন বিখ্যাত ইসলাম প্রচারক কয়েক বছর পূর্বে বসতি স্থাপন করেন। শহরের প্রবেশ পথে পৌছার সময়ে তিনি এক বিশাল বিজ্ঞাপন দেখতে পেলেন। এর উপর লিখা ছিল, “আপনারা চিনেন না।” পরবর্তীতে তিনি এ বিজ্ঞাপনের পাশে এটার মতোই বিশাল এক বিজ্ঞাপন টাঙিয়ে দিলেন। এর উপর তিনি লিখে দিয়েছিলেন, “আপনারা ইসলাম কি তা জানেন না। যদি আপনারা এর সম্বন্ধে জানতে চান তবে এই নাম্বারে আমাদেরকে ফোন করুন।” স্থানীয় জার্মানদের ফোনের বন্যা বয়ে গিয়েছিল। মাত্র একবছরে এই লোকের হাতে হাজার হাজার লোক-ইসলাম গ্রহণ করেছিল। তিনি একটি মসজিদ, একটি ইসলাম প্রচার কেন্দ্র ও একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
অধিকাংশ মানুষই বিভ্রান্ত এবং এই মহান ধর্ম ইসলাম তাদের একান্ত প্রয়োজন। বর্তমানে তারা যে বিশৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন-যাপন করছে তার স্থান যাতে এক শান্তিপূর্ণ ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবন অধিকার করতে পারে এ জন্য তাদের ইসলাম ধর্মের দরকার।
“যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চায় আল্লাহ্ তাদেরকে এ দ্বারা শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং তাদেরকে স্বেচ্ছায় অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে যান এবং তাদেরকে সরল-সহজ সঠিক পথে পরিচালিত করেন।” (৫-সূরা মায়িদা: আয়াত-১৬)
বহুদূরবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী একজন ইবাদত গুজার লোক- যার আগে কখনো অন্য লোকদের সাথে সাক্ষাৎ হয়নি- বলেছিল-
“আমি কখনো ভাবিনি যে পৃথিবীতে কোনো লোক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করেছে।”
وَقَلِيلٌ مِّنْ عِبَادِيَ الشَّكُورُ
“আমার বান্দাদের মধ্য থেকে খুব কম সংখ্যকই কৃতজ্ঞ।” (৩৪-সূরা আস সাবা: আয়াত-১৩)
“আর যদি তুমি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের অনুসরণ কর তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথে পরিচালিত করবে।” (৬-সূরা আল আন’আম: আয়াত-১১৬)
“আঁর তুমি যদিও আকুল আকাঙ্ক্ষা কর তবুও অধিকাংশ মানুষই ঈমান আনবে না।” (১২-সূরা ইউসুফ আয়াত-১০৩)
একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি আমাকে জানিয়েছেন যে, সুদান যখন ব্রিটিশ রাজ্যের কলোনী ছিল তখন এক মরুবাসী বেদুঈন রাজধানী শহর খার্তুমে এসেছিল। সে যখন একজন ব্রিটিশ পুলিশকে শহরের কেন্দ্র দিয়ে হাটতে দেখল তখন সে একজন পথিককে জিজ্ঞাসা করল, “ঐ লোকটি কে? “তাকে বলা হলো যে, লোকটি একজন বিদেশি পুলিশ ও সে একজন কাফের। যাযাবর জিজ্ঞাসা করল কি বিষয়ে সে অবিশ্বাস করে?? আল্লাহতে অবিশ্বাস করে” এ ছিল উত্তর। দীর্ঘদিন মরুভূমিতে বাস করাতে এলোকের জন্মগত স্বভাব মন্দ ধারণা মুক্ত ছিল ও অক্ষত ছিল এবং একারণেই যখন সে অদ্ভুত কিছু শুনল তখন সে এতে বিক্ষিত হয়ে গেল ও অসুস্থ হয়ে পড়ল। সে বলল, “কেউকি আল্লাহকে অবিশ্বাস করে?” এরপর সে যা শুনেছিল তাতে চরম ঘৃণায় তার পেটে খামছি দিয়ে ধরে বমি করে দিল।
“তাহলে তাদের কি হলো যে তারা ঈমান আনে না।” (৮৪-সূরা আল ইনশিকাক: আয়াত-২০)
“আকাশ ও পৃথিবীর প্রভুর শপথ করে বলছি যে, এসব তেমনই সত্য যেমন সত্য একথা যে, ‘তোমরা কথা-বার্তা বল’, [অৰ্থাৎ তোমরা (অধিকাংশ লোক) যেমন বোবা নও বরং কথা-বার্তা বল- একথা যেমন সত্য, আমার একথাও তেমনই সত্য।]” ৫১-সূরা আয় যারিয়াত: আয়াত-২৩)
প্রত্যেকের উচিত তার প্রভুর সম্বন্ধে সুধারণা পোষণ করা ও তার করুণা ও দয়া তালাশ করা। একটি সহীহ হাদীসে আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, আমাদের প্রভু হাসেন। একথা শুনে এক বেদুঈন বলেছিল, “আমরা এমন প্রভুহীন নই যিনি ভালোভাবে হাসেন (অর্থাৎ আমাদের এমন প্ৰভু আছেন যিনি ভালোভাবে হাসেন)”
“আর তারা হতাশ হয়ে যাবার পর তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন।” (৪২-সূরা আশ শুরা: আয়াত-২৮)
“নিশ্চয় আল্লাহর রহমত সৎকর্মপরায়ণদের নিকটবর্তী।” (৭-সুরা আল আরাফ: আয়াত-৫৬)
“যেনে রাখ; নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী।” (২-সূরা বাকারা: আয়াত-২১৪)
সফল লোকদের জীবনী পড়ে জানা যায় যে তাদের কতিপয় সাধারণ জিনিস ছিল হয়তো তা তাদের পরিবেশে, গুণে বা ঐ পরিস্থিতিতে যা তাদের সফলতাকে ঘিরে ছিল। সফল লোকদের জীবনী পাঠ করে আমি কতিপয় সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি- তা আমি নিম্নে পেশ করছি-
১. লোকের মূল্য তার সৎকর্মের উপর নির্ভর করে। একথা আলী (রাঃ) বলেছেন। এর অর্থ হলো যে, কারো জ্ঞান, চরিত্র, ইবাদত ও উদারতা মাহাত্ম্য হলো এমন গজকাঠি যা দ্বারা তার মূল্যায়ন করা হয়।
“মুশরিক (স্বাধীন) পুরুষ তোমাদের বিক্ষিত করলেও তার চেয়ে মু’মিন কৃতদাস ভালো।” (২-সূরা বাকারাঃ আয়াত-২২১)
২. ইহকাল ও পরকালের জন্য কারো জীবন যাত্রার মান তার প্রত্যয়, প্রচেষ্টা ও উৎসর্গের উপর নির্ভর করে।
আর যদি তারা বের হওয়ার ইচ্ছা করত তবে অবশ্যই তারা এর জন্য কিছু প্রস্তুতি গ্রহণ করত।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-৪৬)
“এবং আল্লাহর পথে প্রকৃত জিহাদ কর।” (২২-সূৱা আল-হাজ্জ: আয়াত-৭৮)
৩. আল্লাহর ইচ্ছায় প্রতিটি লোকই তার নিজের ইতিহাস রচয়িতা। সে তার ভালো-মন্দ কর্মের মাধ্যমে তার জীবনেতিহাস লিখে।
“তাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল কীর্তিই আমি লিখে রাখি।” (৩৬-সূরা ইয়াসিন: আয়াত-১২)
৪. জীবন সংক্ষিপ্ত এবং দ্রুত চলে যায়। পাপ করে, দুশ্চিন্তা করে বা ঝগড়া করে একে আরো সংক্ষিপ্ত করবেন না।
“সে দিন তারা মনে করবে যেন তারা পৃথিবীতে এক সন্ধ্যা বা এক সকালের চেয়ে বেশি কাল ছিল না।” (৭৯-সূরা আন নাযিআত: আয়াত-৪৬)